ফুটবলার হিসেবে তিনি অতুলনীয়। আর্জেন্টাইন এই মহাতারকাকে বলা হয় ফুটবল ঈশ্বর। অনেকে ডাকেন গোল্ডেন বয়ও। তবে বুটজোড়া তুলে রাখার পরও নিয়মিতই হয়েছেন খবরের শিরোনাম। ভালো-মন্দের মিশেল তো তাতে ছিলই। নিজের অন্ধকার জীবন নিয়ে কথা বলতে কখনোই লজ্জা পেতেন না ম্যারাডোনা। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে ফিফা সভাপতি, কাউকে নিয়ে কটুক্তি করতেও দু’বার ভাবতেন না দিয়েগো। মাঠ আর মাঠের বাইরের নির্ভীক ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠ কিছু উক্তি এবং স্বীকারোক্তি দেখা যাক।
মাদকাসক্তি:
মাদকাসক্তির জন্য বেশ ভুগতে হয়েছে তাকে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে তো বাদই পড়েছিলেন দল থেকে। অন্যরা এসব বিষয় এড়িয়ে যেতে চাইলেও, নিজের অন্ধকার জগত নিয়ে বেশ কয়েকবারই মুখ খুলেছেন ম্যারাডোনা।
সম্প্রতি টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমার কিছুই ছিল না, আমি ছিলাম জোম্বি।
১৯৯৬ সালে একটি ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি ক্যারিয়ারের কিছু সময়ে ড্রাগ নিয়েছিলাম। তবে এসব আমার ক্যারিয়ারে উদ্দীপনা বাড়াতে পারেনি। যারা মনে করে, কোকেইন শক্তিবর্ধক তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। তুমি কোকেন নিয়ে ফুটবল খেলতে গেলে খেলতেই পারবে না। এটা মোটেও ভালো কিছু নয়। জীবনের জন্য একেবারেই ইউজলেস।
২০০৬ সালেও এ বিষয়ে মুখ খোলেন ম্যারাডোনা। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে আমি প্রথম কোকেন নিই। তখন আমার বয়স মাত্র ২২। তখন মনে হয়েছিল আমি বেশ বেঁচে আছি। এরপর আমি নিয়মিত নেয়া শুরু করি। বাথরুমে লাইট অফ করে আমি কোকেন নেয়া শুরু করি। আমি ছিলাম মাদকাসক্ত এবং আমি ভয় পেতাম। কারণ মাদকাসক্তদেরকে কেউ ক্ষমা করে না।
সাংবাদিককে অস্ত্র নিয়ে হুমকি:
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবারই সংঘর্ষ বাঁধে ম্যারাডোনার। ১৯৯৪ সালে যেমন, বিশ্বকাপের ঠিক আগে যখন তার শরীরে ড্রাগ শনাক্ত করে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। সেসময় তার বাড়ির সামনে এক সাংবাদিকের দিকে রাইফেল হাতে তেড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
২০১৩ সালেও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান তিনি। এক ফটোগ্রাফারের দিকে তিনি পাথর ছুঁড়ে মারেন। ওই ফটোগ্রাফার জানান, আমরা যখন তার ছবি তুলছিলাম তখন তিনি আমাদেরকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে আমরা ছবি তোলা অব্যাহত রাখলে তিনি এদিক সেদিক খুঁজে পাথর হাতে নেন। তারপর আমাদের দিকে ছুঁড়ে মারতে থাকেন। এরপর তিনি একজনকে এসে লাথিও মারেন।
মাঠে মারামারি:
মাঠে ফুটবল ক্যারিশমায় তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। তবে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলায় জড়াতেন তিনি। ১৯৮৪ সালে বার্সেলোনার হয়ে কোপা দেল রে’র ফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচে মিগুয়েল সোলার সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে তাকে ৩ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও বার্সায় না থেকে, ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন দিয়েগো।
সতীর্থদের সঙ্গেও প্রায়ই ঝামেলা বাঁধতো তার।
সমালোচক ম্যারাডোনা:
সমালোচনা করার ক্ষেত্রে ম্যারাডোনার জুড়ি মেলা ভার। কখনোই কাউকে ছেড়ে কথা বলেন নি।
তার দেশেরই আরেক কিংবদন্তি লিওনেল মেসির প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন, যে ম্যাচের আগে ২০ বার বাথরুমে যায় তাকে ক্যাপ্টেন বানানোর কোন মানেই হয় না।
আরেকবার বলেন, মেসির গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করে না, তবে সেই সর্বকালের সেরা নয়।
সময়ের আরেক সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে করা তার মন্তব্যটাও বেশ বিতর্কিত। তিনি বলেন, ক্রিস্টিয়ানো গোল করে এবং তোমার কাছে শ্যাম্পু বিক্রি করে।
মেসি-রোনালদো ইস্যুতেও মুখ খুলেন তিনি। বলেন, ক্রিস্টিয়ানো আর্জেন্টাইন হলে আমি খুশি হতাশ। কিন্তু তার মতোই একজন আমাদের দলে আছে, সে হলো গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। আমি মেসিকে রোনালদোর চেয়ে অনেক বেশি পছন্দ করি।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরকেও ছেড়ে কথা বলেন নি ম্যারাডোনা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।
একবার তিনি বলেন, জর্জ বুশ একজন খুনি। তার চেয়ে আমি বরং ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বন্ধু হতে রাজি।
আরেকবার বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছে একটা পুতুল।
পেলে-ম্যারাডোনা বিতর্ক চলছে যুগ যুগ ধরে। সেই বিতর্কের পালে হাওয়া দিতেন এই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। পেলেকে নিয়ে একবার তিনি বলেন, পেলেকে বলো যেন জাদুঘরে ফিরে যায়।
আরেকবার মন্তব্য করেন, নেইমার মেসির চেয়ে ভালো? পেলে ভুল পিল খেয়েছে।
আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ) নিয়েও বিভিন্ন সময়ে তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়েছেন ম্যারাডোনা। একবার বলেন, তোমার উচিত এএফএ’র ভেতরে একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারা এবং সবকিছু নতুন করে শুরু করা।
ফেডারশন সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, হেভেলেঞ্জ ওয়াটার পোলো খেলেছে। ফুটবলের বিষয়ে সে কি বলবে?
আর্জেন্টিনার কোচ হোর্হে সাম্পাওলিকে নিয়ে তার মন্তব্য, সাম্পাওলির দিকে তুমি একটা বল ছুঁড়ে মারলে সে হাত দিয়ে ওটা বাড়িয়ে দেয়।
ডেভিড বেকহ্যাম, সার্জিও র্যামোস, দানি আলভেজ কিংবা লোপেতেগুই, সিমিওনের মতো কোচ, ম্যারাডোনার ছোঁড়া কথার তীর থেকে বাঁচতে পারেনি নি কেউই।
এসএইচ-০৮/২৬/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)