পুরো বিশ্বকে কাঁদিয়ে মা-বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ম্যারাডোনা

পুরো বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে বুধবার না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে দেশের সর্বোচ্চ মরণোত্তর সম্মান প্রদর্শনের পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পর সমাহিত করা হয়েছে ম্যারাডোনার মরদেহ।

নিজ জন্মস্থান বুয়েন্স আইরেসের উপকণ্ঠে অবস্থিত বেলা ভিস্তা সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়েছে ম্যারাডোনাকে। যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন ম্যারাডোনার বাবা দিয়েগো ম্যারাডোনা চিতোরো (১৯২৭-২০১৫) এবং মা দালমা সালভাদোরা ফ্রান্সো (১৯৩০-২০১১)। মা-বাবার পাশেই সমাহিত করা হয়েছে ম্যারাডোনার মরদেহ।

বেলা ভিস্তা সমাধিস্থলে প্রায় ২৫-৩০ জন কাছের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে ছোট পরিসরে শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়। তবে ম্যারাডোনার এই শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল বুয়েন্স আইরেসের রাস্তায়। সঙ্গত কারণেই তাদের কাউকে বেলা ভিস্তা সমাধিস্থলের আশপাশে যেতে দেয়া হয়নি।

বুধবার রাতে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আইরেসে নিজ বাসায় হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফুটবল ইতিহাসের এ মহানায়ক। মাত্র কয়েকদিন আগেই রক্তক্ষরণজনিত কারণে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।

কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর ডাক্তাররা তাকে নিজ বাসায়ই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। যেখানে উন্নতির দিকেই যাচ্ছিল ম্যারাডোনার স্বাস্থ্যের অবস্থা। কিন্তু বুধবার হার্ট অ্যাটাক করেন আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি। যেখান থেকে আর ফেরা হয়নি।

ম্যারাডোনার মৃত্যুর শোক ছুঁয়ে গেছে সারাবিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনসহ প্রায় সব মানুষকে। আর্জেন্টিনায় ঘোষণা করা হয়েছে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক। যা চলবে শনিবার পর্যন্ত। ইতালিয়ান ফুটবল ক্লাব নাপোলির নবজাগরণের মহানায়ক ম্যারাডোনার প্রয়াণে পুরো ন্যাপলস শহরে চলছে শোকের মাতম।

বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ কফিনে করে ম্যারাডোনার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে। আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা ও ম্যারাডোনার ট্রেডমার্ক ১০ নম্বর জার্সি দিয়ে মুড়ে দেয়া ছিল ম্যারাডোনার কফিন। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে বুয়েন্স আইরেসের রাস্তায়।

তবে শুধুমাত্র গুটিকতক মানুষই যেতে পেরেছেন প্যালেসের ভেতর রাখা ম্যারাডোনার কফিনের কাছাকাছি। দুপুরের মধ্যে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে যায় মানুষের সারি। যাদের সরিয়ে দিতে একসময় টিয়াস গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। ভক্তদের দাবি, এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে পুলিশ।

দিয়েগো ম্যারাডোনা, তিনি কি শুধু ফুটবলেরই মহানায়ক? তার জনপ্রিয়তাকে কি শুধু একটি খেলার গণ্ডিতেই আটকে রাখা যায়? না, ম্যারাডোনা স্বপ্নের নায়ক ছিলেন বিশ্বের কোটি ক্রীড়াপ্রেমীর, সব পেশার সব জায়গার মানুষের।

এই ম্যারাডোনার হঠাৎ চলে যাওয়ার খবরে শোকস্তব্ধ তার ভক্তকুল। যে ভক্তকুলের মধ্যে রয়েছেন ক্রিকেট তারকারাও। আর্জেন্টাইন খুদেরাজের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তারা।

‘রেকর্ডের বরপুত্র’খ্যাত ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার ফুটবল রাজপুত্রের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছেন, ‘ফুটবল এবং বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন আজ সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজনকে হারাল। ওপারে ভালো থাকবেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। আমরা আপনাকে মিস করব।’

ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক এবং বর্তমান বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি টুইট করে লিখেছেন, ‘আমার নায়ক আর নেই। মাই ম্যাড জিনিয়াস রেস্ট ইন পিস। আমি ফুটবল দেখতাম শুধু তোমার জন্যই।’

শ্রীলঙ্কার সাবেক পেস কিংবদন্তি চামিন্দা ভাস টুইট করেছেন, ‘দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর শুনে খুব খারাপ লাগছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন। ওপারে ভালো থাকবেন।’

পাকিস্তানি গতিতারকা ওয়াহাব রিয়াজের টুইট, ‘হৃদয় ভাঙার মতো খবর। ওপারে ভালো থাকবেন ম্যারাডোনা।’

পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’খ্যাত শোয়েব আখতার টুইটে লিখেছেন, ‘কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে। সব ক্রীড়াবিদের সবসময়ের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার কীর্তি সর্বদা অক্ষুণ্ন থাকবে।’

শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা টুইট করেছেন, ‘আইকন এবং লিজেন্ডের চলে যাওয়ার মতো দুঃখের সংবাদ আর হতে পারে না। যে মানুষটা একটা যুগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা ছিলেন। ওপারে ভালো থাকবেন দিয়েগো ম্যারাডোনা।’

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইটে লিখেছেন, ‘খেলার জগতে খুব বেশি মানুষ বলতে পারবে না, তারা একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন। কিন্তু সর্বকালের সেরারা কয়েকটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। ম্যারাডোনা ঠিক সেটাই করেছেন। দ্য গ্রেটেস্ট। ওপারে ভালো থাকবেন।’

জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার এবং ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া টুইট করেছেন, ‘বেড়ে উঠেছি যখন, ফুটবল বলতেই ছিল ম্যারাডোনা, ম্যারাডোনাই ছিলেন ফুটবল। ২০২০ আরও একটি রত্ন নিয়ে গেল। ওপারে ভালো থাকবেন কিংবদন্তি।

এসএইচ-০১/২৭/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)