আলাপ হয়েছিলো এক বন্ধুর মাধ্যমে। সেখান থেকেই প্রেম। সব বাধা পেরিয়েই প্রেমিকা অন্য ধর্মাবলম্বী তরুণী ফাতিমা ঘড়িয়ালিকে বিয়ে করেছিলেন অজিত আগারকার। জীবনের মসৃণ এবং বন্ধুর দুই সময়েই তার পাশে ছিলেন তার অর্ধাঙ্গিনী।
ফাতিমার ভাই মাজহারও ছিলেন ক্রিকেটার। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে মুম্বাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ক্রিকেটের সূত্রে আগারকার এবং মাজহার বন্ধু ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগারকারের খেলা দেখতে আসতেন মাজহার। মাঝে মাঝে ভাইয়ের সঙ্গী হতেন ফাতিমাও।
মাজহার ও আর এক ক্রিকেটার রোহন গাভাস্কারের সূত্রে আলাপ হয়েছিলো আগারকর এবং ফাতিমার। সেটা নয়ের দশকের শেষের দিকে। তখনো আগারকার সুযোগ পাননি জাতীয় দলে। প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার আগারকারের প্রেমে পড়লেন ফাতিমা। অন্যদিকে ফাতিমায় মুগ্ধ আগারকারও।
আগারকারের স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেটার হওয়ার। তবে ছোট থেকে তিনি মন দিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে। খেলার গতি বদলে যায় কৈশোরে, রমাকান্ত আচরেকরের প্রশিক্ষণে। দ্রোণাচার্যের চোখ বুঝেছিলো শিষ্যের বিশেষত্ব লুকিয়ে আছে বোলিংয়ে। তার কথাতেই ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি আগারকার মন দেন পেস বোলিংয়ে।
আচরেকরের আর এক বিশ্বসেরা শিষ্য টেন্ডুলকারের মতো আগারকারও স্কুল পরিবর্তন করে ভর্তি হয়েছিলেন সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরে। তবে স্কুল স্তরেও ঝড়ো ব্যাটিং বজায় রেখেছিলেন আগারকার। অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে লাগাতার বড় রান আসতে থাকে তার ব্যাট থেকে। সে সময় কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে শুধু বোলার বা শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে বম্বে (এখন মুম্বাই) দলে সুযোগ পাওয়া ছিলো শক্ত। তাই আগারকারকে অলরাউন্ডার হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন আচরেকর।
কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যালান ডোনাল্ডের মতো ক্রিকেটারকে আদর্শ করে নিজেকে তৈরি করেন আগারকার। জাতীয় দলের দরজা আগারকারের সামনে খুলে যায় ১৯৯৮ সালে। সে বছর এপ্রিল মাসে তিনি প্রথম ওয়ানডে-তে সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। টেস্টে অভিষেক সে বছরই অক্টোবরে, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে।
অন্যান্য পেসারদের মতো শারীরিক উচ্চতা না থাকলেও ফাস্ট বোলিংয়ে সমস্যা হয়নি আগারকারের। ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগেও বোলিং করেছেন তিনি। ওয়ানডে-তে তিনি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
১৯১ ওয়ানডে-তে আগারকারের মোট উইকেট ২৮৮। সেরা গড় ৪২ রানে ৬ উইকেট। মোট রান করেছেন ১২৬৯। সর্বোচ্চ ৯৫। ২৬ টেস্টে উইকেট পেয়েছেন ৫৮টি। সেরা গড় ৪১ রানে ৬ উইকেট। মোট রান ৫৭১। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০৯।
জন রাইটের আমলে আগারকারের উত্থান পিঞ্চ হিটার হিসেবে। এই সময়ে তার কিছু ঝড়ো ইনিংসের মধ্যে অন্যতম ছিলো ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। ২১ বলে ওয়ানডে-তে বিশ্বে দ্রুততম ৫০ রানের পাশাপাশি তিনি সেই ম্যাচে ৩ উইকেটও পান।
আগারকার সেই মুষ্টিমেয় ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম, যাদের লর্ডসের মাটিতে শতরানের রেকর্ড আছে। ২০০২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১০৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
ডেনিস লিলির রেকর্ড ভেঙে আগারকার টেস্টে দ্রুততম ৫০ উইকেট নেন। মাত্র ২৩টি টেস্টে তিনি ৫০ উইকেট পান। টেস্টে দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ উইকেট এবং ১০০০ রান যোগ হয় তার নামের পাশে।
আগারকারের নামে রয়েছে একটি লজ্জার রেকর্ডও। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে পর পর ৭ ম্যাচে তিনি শূন্য রানে আউট হন। এরপর তার ক্রিকেটীয় মহলে তার পরিচয় হয়ে গিয়েছিলো ‘বম্বে ডাক’।
আইপিএলে তিনি খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে হয়ে। ২০১৩ সালে তার অধিনায়কত্বে ৪০তম বার রঞ্জি ট্রফি জয়ী হয় মুম্বাই। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঝলসে উঠলেও ফর্মের ধারাবাহিকতার অভাবে ব্যাহত হয়েছে তার কেরিয়ার। ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। এখন তাকে দেখা যায় ক্রিকেট অ্যানালিস্টের ভূমিকাতেও।
জীবনের সব ওঠাপড়ায় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী ফাতিমা। ৩ বছরের প্রেমপর্বের পরে ২০০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ে করেছিলেন আগরকর। তাদের ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো শুধুমাত্র পরিজন এবং কাছের বন্ধুদের জন্য। পরে রাজকীয় পার্টির আয়োজন করেছিলেন আগারকার। পার্টিতে হাজির ছিলেন সস্ত্রীক শচিন টেন্ডুলকারসহ টিম ইন্ডিয়ার তৎকালীণ সদস্যরা।
একমাত্র সন্তান রাজকে নিয়ে আগারকার এবং ফাতিমার সংসার এখন ভরপুর। কাজ এবং পরিবারের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে ভালোবাসেন অতীতের এই অলরাউন্ডার।
এসএইচ-১১/০১/২০ (স্পোর্টস ডেস্ক)