সৌদি তরুণকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ থেকে বাঁচাতে মেসির কাছে পরিবারের চিঠি

সেলিব্রেটিরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিশেষ করে স্পোর্টসম্যানদের অনেকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। তারা যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন, তেমনি মানবতার পক্ষেও লড়াইয়ের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। যেমন, লিওনেল মেসির কথাই ধরা যাক, সারাবিশ্বে তার রয়েছে অসংখ্য অনুসারী। যারা বিশ্বাস করে, মেসি পারেন বিশ্বের জন্য ইতিবাচক কিছু করতে। এমন বিশ্বাস থেকেই এবার ২০ বছর বয়সী এক তরুণের জীবন বাঁচাতে লিওনেল মেসিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে এক সৌদি পরিবার।

সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন এমন এক ২০ বছর বয়সী তরুণের জীবন বাঁচাতে তার পরিবার চিঠি লিখেছেন আর্জেন্টিনা ও পিএসজির মহাতারকা লিওনেল মেসিকে। তাদের বিশ্বাস, বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন মেসি, তার প্রভাব খাটিয়ে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে সেই যুবকের প্রাণ রক্ষা করবেন।

অবশ্য মেসির কাছে এমন অনুরোধের পেছনে শুধু তার ফুটবলার পরিচয়টাই কারণ নয়, বরং সৌদি আরবের সঙ্গে মেসির যোগসূত্রও একটা কারণ। মাস কয়েক আগে এই আর্জেন্টাইনকে দেশটির পর্যটনের শুভেচ্ছাদূত বানানো হয়েছে। তাই পরিবারটির আশা, মেসি সৌদি আরবের ওপর প্রভাব বিস্তার করে প্রাণে বাঁচাতে পারবে ওই তরুণের।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে মোহাম্মদ আল ফারাজ নামে ওই যুবককে সৌদি সরকারের বিপক্ষে ‘অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তার পরিবারের দাবি, এ সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তারপরও এই অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর বয়সীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হয়। তার পরিবার আরও দাবি করেছে যে, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে জোর করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

মেসিকে লেখা সেই চিঠিতে ফারাজ নামে সেই তরুণের পরিবার লিখেছে, ‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে আপনার মনযোগ আকর্ষণ করছি। আমাদের প্রিয় মোহাম্মদের দুর্দশা তাদের সামনে তুলে ধরতে আহ্বান করছি। তাকে শিশু অবস্থায় আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের পর্যটনদূত হিসেবে আপনার অনেক প্রভাব আছে। আপনি কি সেটা এক হতভাগা তরুণের জীবন রক্ষা করতে কাজে লাগাতে পারবেন?’

গ্রেফতারের দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফারাজের পরিবার সে চিঠিতে আরও জনায়, সে সময় সে তার বন্ধুদের সঙ্গে বোলিং খেলছিলেন। তাকে এ অবস্থা থেকেই তুলে নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের কারাগারে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয়। তার বিরুদ্ধ্বে অভিযোগে বলা হয় যে, সে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আদালত এখনও এই মামলার রায় না দিলেও, বাদীপক্ষ তার ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ দাবি করেছে।

চিঠির ভাষায়, ‘কারাগারের রক্ষীরা তাকে পিটিয়েছে, লাথি মেরেছে। মাঝে হাতের ওপর শিকল বেঁধে কয়েক ঘণ্টা রাখা হয়েছে। একজন শিশুর সঙ্গে কেউ এমন নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ কীভাবে করতে পারে?’ -এভাবেই প্রশ্ন তুলেছে ফারাজের পরিবার।

এদিকে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া ‘রিপ্রিভ’ নামের একটা মানবাধিকার সংস্থার দাবি, সৌদি সরকার খেলাধুলাকে কাজে লাগিয়ে অন্যায় ঢেকে তাদের সুনাম কামাতে চাচ্ছে। একদিকে যেমন এক পঞ্জিকাবর্ষেই রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে দেশটি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, তেমনি খেলাধুলাতেও বিপুল বিনিয়োগ করে পৃথিবিবাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে তারা।

এর আগে সৌদি সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন সাতবারের ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন লুইস হ্যামিল্টন। সৌদি গ্যাঁ প্রি খেলতে দেশটিতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এর কিছুদিন আগেই মিসাইলের আঘাতে মারা গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মানুষ। যার প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন ড্রাইভারের সঙ্গে সরব হয়েছিলেন এই কিংবদন্তি রেসার। শুধু তাই নয়, এর আগে আরেক তরুণের কাছ থেকে জীবন বাঁচানোর অনুরোধপত্র পেয়েছিলেন হ্যামিল্টনও।

আব্দুল্লাহ আল-হোয়াইতি নামের সেই কিশোরের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে মুখ খুলেছিলেন হ্যামিল্টন। তবে তাতে কাজ হয়নি কিছুই। ১৪ বছর বয়সে গ্রেফতার হওয়া আব্দুল্লাহকে ১৭ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ ফারাজের ভাগ্যে কী আছে তা সময়ই বলবে।

এসএইচ-২৪/১৪/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)