কেন মাতারাজ্জিকে ঢুস মেরেছিল জিদান

জার্মানির বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৯ জুলাই ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি ইউরোপের দুই পাওয়ার হাউস ইতালি ও ফ্রান্স। শুরু থেকেই ম্যাচে ছড়ায় উত্তেজনার রেণু। রোমাঞ্চকর সেই ফাইনালে আজ্জুরিতে ফেভারিট ছিল ফ্রান্সই। কারণ একটাই, লেস ব্লু শিবিরে তখন ছিল জিদান নামের এক জাদুকর। একক নৈপুণ্যে ১৯৯৮ সালে যিনি দলকে এনে দিয়েছিলেন রূপকথার শিরোপা। ঠান্ডা মাথায় যিনি কিনা বদলে দিতে পারেন ম্যাচের চিত্র।

পরে অবসরে গেলেও বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখাতে আবারও ফিরে আসেন দলের প্রয়োজনে। বিশ্বমঞ্চে সাফল্য উপহার দিতে। কিন্তু শেষটা এমন হবে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি জিজু। অথচ বার্লিনে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছিলেন জিদান। ফাইনালে ৭ মিনিটে তার চমৎকার পানেনকা গোলে দলও লিড নিয়েছিল। ১৯ মিনিটে মাতারাজ্জির গোলে পরে সমতায় ফেরে ইতালি।

ম্যাচে সমতা এনেই জিদান হটাও ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার। ঘটনার দীর্ঘ ১০ বছর পর নিজেই স্বীকার করেন গণমাধ্যমে। জিদানকে অশ্লীল কথা বলার ঘটনা খুলে বলেন অকপটেই। ফাইনালের দিন আজ্জুরিদের কোচ মার্সেলো লিপ্পি নজরে রাখতে শুরু থেকেই কানে মন্ত্র জপে দিয়েছিলেন মাতেরাজ্জিকে। বারবারই জিজুর সঙ্গে ঝামেলা লাগাতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু ফরাসি তারকা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কি বিপদ অপেক্ষা করছিল তার জন্য।

বারবার জার্সি টেনে উত্ত্যক্ত করার একপর্যায়ে ফাঁদে পা দেন জিদান। ক্ষুব্ধ হয়ে মাতারাজ্জাকিকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি আমার জার্সিটা খুলে নিতে চাইছো? মাতারাজ্জি তখন মাথা গরম করে বলেন, শার্ট নয়, চাইছি তোমার বোনকে। এতেই খেপে যান জিদান। বরফের মতো ঠান্ডা মাথা মুহূর্তেই হয়ে যায় আগুন। অশ্লীল কথা সহ্য করতে পারলেন না তিনি। ফিরেই ঢুস মেরে বসেন মাতারাজ্জির বুকে। ফুটবল ইতিহাসে যা বিখ্যাত হয়ে আছে হেডবাট নামে।

রেফারির লাল কার্ডে ইতি ঘটে ফ্রান্সের মহাতারকা জিদানের ক্যারিয়ারের। তার এই ঢুসকাণ্ড এবং লাল কার্ড ফাইনাল থেকে ছিটকে দেয় ফ্রান্সকে। জিজুবিহীন ফ্রান্স শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হেরে যায়। চতুর্থবারের মতো সোনালি ট্রফি জিতে নেয় ইতালি। বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের শেষটা কলঙ্কময় হয়ে থাকে জিদানের। যদিও আসরের গোল্ডেন বল পুরস্কারটা ঠিকই জিতে নিয়েছিলেন জিজু।

কাতার বিশ্বকাপে আবারও সে ঢুস ফিরিয়ে আনছেন আয়োজকরা। আলজেরিয়ায় জন্ম নেয়া ফরাসি শিল্পী আদেল আবদেস একটি ভাস্কর্য বানিয়ে ঘটনাটিকে চিরস্থায়ী করে তুলেছিলেন। দোহায় ২০১৩ সালে সমুদ্রের পাশের একটি সড়কে সেটা বসানো হয়েছিল। যদিও পরে জনতার ক্ষোভের মুখে সরিয়ে ফেলা হয়। নয় বছর পর নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলেছে কাতার। বিশ্বকাপ উপলক্ষে দোহার ক্রীড়া জাদুঘরে সেটি রাখা হবে।

এসএইচ-০৩/১৫/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)