জয় দিয়ে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ মিশন শুরু

ব্রাজিল মাঠে নামবে। আর সেখানে জোগো বনিতার চাপ থাকবে না, সেটা কী করে হয়! প্রথমার্ধে তিতের শিষ্যরা নিজেদের জাত চেনাতে না পারলেও, দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে সার্বিয়ান দুর্গ লন্ডভন্ড করে দেন রিচার্লিসন।

‘জি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বৃহস্পতিবার সার্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে হেক্সা মিশন শুরু করেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। দুবারই সার্বিয়ার জাল কাপিয়েছেন রিচার্লিসন।

৬২ মিনিটে ব্রাজিলের সামনে আসে প্রথম মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঁ প্রান্তে ভিনিসিয়ুসের শট সার্বিয়ান গোলরক্ষক গ্লাভসবন্দি করতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান রিচার্লিসন। ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে সেলেসাওদের গোল উৎসবে মাতান তিনি। এরপর সার্বিয়া আর ম্যাচে ফিরবে কী ৭৩ মিনিটে ডি-বক্সে দুর্দান্ত এক বাই-সাইকেল কিকে দ্বিতীয়বার সার্বিয়ার জাল কাঁপান রিচার্লিসন। নিজের বিশ্বকাপ অভিষেকে এ স্ট্রাইকার দেখা পান জোড়া গোলের।

এর আগে লুইসাইল স্টেডিয়ামে এদিন শুরু থেকেই আক্রমণে আধিপত্য দেখায় ব্রাজিল। পাল্টা আক্রমণে সার্বিয়াও সুযোগ বুঝে ভীতি ছড়িয়েছে ব্রাজিলের রক্ষণে। ১৩তম মিনিটে ডি বক্সে ঢুকে গোলের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তবে সার্বিয়ার ডিফেন্ডারদের বাধায় তিনি বল সতীর্থদের পাস দিতে পারেননি। পরের মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক শট নেন নেইমার। আবারও কর্নারের বিনিময়ে সেটি ঠেকিয়ে দেন প্রতিপক্ষের মিলিনকোভিচ।

ম্যাচের ২১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন ক্যাসেমিরো। তবে বল সরাসরি চলে যায় মিলিনকোভিচের গ্লাভসে। ২৫তম মিনিটে অ্যালিসন নৈপুণ্যে বিপদ থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচে ব্রাজিল। সতীর্থের বাড়ানো বলে লাফিয়ে উঠেও হেড দিতে ব্যর্থ হন সার্বিয়ান স্ট্রাইকার মিত্রোভিচ। সেই বল গ্লাভসবন্দী করে নেন অ্যালিসন। এরপর সার্বিয়ান রক্ষণদুর্গে টানা আক্রমণ চালিয়ে যায় তিতের শিষ্যরা।

২৭তম মিনিটে সিলভার পাস ডি-বক্সে ভিনিসিয়ুস দখলে নেওয়ার আগেই ঝাপিয়ে পড়ে ক্লিয়ার করেন মিলিনকোভিচ। ৩১ মিনিটে ডি-বক্সের বাম প্রান্ত থেকে রাফিনিয়ার বাড়ানো পাস পা বাড়িয়ে সিলভা স্পর্শ করার আগে গ্লাভসবন্দী করে নেন সার্বিয়ান বাজপাখি। আগের মিনিটে ক্যাসেমিরোর হেড গোলবারের সামনে থেকে ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন ভেলজকোভিচ। ৩৫ মিনিটে রাফিনিয়ার দুর্বল শর্ট পরাস্ত করতে পারেনি সার্বিয়ান গোলরক্ষককে।

একের পর এক চাপ সামলে ৩৭ মিনিটে আক্রমণে ওঠে সার্বিয়া। ব্রাজিলের রক্ষণদুর্গে প্রবেশ করলেও তারা শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। ৪১ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন ভিনিসিয়ুস। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য স্কোরলাইন নিয়ে বিরতিতে যেতে হয় দুই দলকে।

বিরতির পর ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে সেলেসাওদের হতাশ করেন রাফিনিয়া। পেনাল্টি এরিয়ার সামনে তার নেয়া শট এগিয়ে এসে ঠেকিয়ে দেন মিলিনকোভিচ। ৪৮ মিনিটে ডি বক্সের ঠিক বাইরে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে পেছন থেকে নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন নিমানজা গুদেলজ।

৬০ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে অ্যালেক্স সান্দ্রোর নেয়া শট বারে লেগে ফিরে আসে। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ৬২ মিনিটে ডেডলক ভাঙেন রিচার্লিসন। বাম প্রান্ত থেকে ভিনিসিউসের শট মিলিরকোভিচের হাতে লেগে চলে যায় রিচার্লিসনের কাছে। বাকি কাজটা তিনি সেরে নেন মুহূর্তেই। ৬৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল তিতের শিষ্যরা। তবে শেষ পর্যন্ত তারা লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারেননি।

৭৩ মিনিটে বক্সে বাই-সাইকেল কিকে জালভেদ করে সার্বিয়ার দুঃখ দ্বিগুণ করেন রিচার্লিসন। এরপর তিতে একে একে বদলে ফেলেন তার শুরুর একাদশ। ৭৫ মিনিটে পাকেতাকে তুলে ফ্রেদকে ‍তুলে এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে তুলে রদ্রিগোকে নামান সেলেসাও কোচ তিতে। ৭৯ মিনিটে জোড়া গোল করা রিচার্লিসনকে তুলে তিনি নামান গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। পরের মিনিটে নেইমারকে তুলে নামানো হয় অ্যান্তোনিকে।

৮১ মিনিটে ক্যাসেমিরো শট বারে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটে রদ্রিগোর শট ফিরিয়ে দেন মিলিনকোভিচ। ৮৬ মিনিটে এ রিয়াল মাদ্রিদ তারকার আরেকটি শট যায় বারের ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে রাফিনিয়াকে তুলে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লিকে। তবে বদলি নামা ফুটবলাররা এদিন আর কোনো চমক দেখাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।

দুই দলের এখন পর্যন্ত তিন বারের দেখায় শতভাগ জয় ব্রাজিলের পক্ষে। এর আগে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে সেলেসাওরা ২-০ গোলে হারিয়েছে সার্বিয়াকে। তার আগে ২০১৪ সালে প্রীতি ম্যাচের দেখায় ১-০ গোলে জয় তুলে নেয় ব্রাজিল।

এসএইচ-০২/২৫/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)