মাশরাফির কাছে হার সাকিবের

শীর্ষ দুই দলের লড়াই যেমন হওয়ার কথা, সিলেট স্ট্রাইকার্স ও ফরচুন বরিশালের ম্যাচটি হলো তেমন রোমাঞ্চকরই। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই, এরপর জয়ের হাসি মাশরাফি বিন মুর্তজার সিলেটের। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে হারল সাকিব আল হাসানের বরিশাল। এ ম্যাচের পর সিলেট ধরে রেখেছে তাদের শীর্ষ স্থান। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বরিশালের সঙ্গে আগে তাদের পার্থক্য ছিল শুধু নেট রানরেটে, এখন সেটি ২ পয়েন্টের।

নাজমুল হোসেনের ৬৬ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসে সিলেট ২০ ওভারে ৫ উইকেটে তুলেছিল ১৭৩ রান। জবাবে সাইফ হাসান, ইব্রাহিম জাদরান, সাকিব আল হাসান, করিম জানাত, মোহাম্মদ ওয়াসিমরা মিলে বরিশালকে ম্যাচে রেখেছিলেন শেষ বল পর্যন্ত।

সিলেটের শেষ ওভার করা পেসার রেজাউর রহমানের শেষ বলে ৬ হলে টাই হতো ম্যাচটা, খেলা যেত সুপার ওভারে। তবে সেটির আর দরকার পড়েনি। শেষ বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমের মারা চারের দিকে ফিরেও তাকানোর দরকার মনে করেননি সিলেটের খেলোয়াড়েরা। বল ফাইন লেগ সীমানা অতিক্রম করার আগেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জয়োল্লাসে মেতে ওঠেন মাশরাফি–মুশফিকরা।

অবশ্য বরিশাল যে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত নিয়ে গেছে, সেটাও অনেক। রান তাড়া করতে নেমে সাকিবের দল চাপে পড়তে পারত শুরুতেই। সিলেট সুযোগ হাতছাড়া করায় সেটা হয়নি। দ্বিতীয় ওভারে মাশরাফির বলে পয়েন্টে ইব্রাহিম জাদরানের সহজ ক্যাচ ফেলেন জাকির হাসান। উল্টো আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। পঞ্চম ওভারে ডিপ থার্ডম্যানে তানজিম হাসানের বলে সাইফ হাসানের ক্যাচ ফেলেন হৃদয়।

তার আগেই চার ছক্কা মারা সাইফ অবশ্য ফিরে যান ওই ওভারেই। শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ বলে ৩১ রান করে। নিজের পরের ওভারে ধুঁকতে থাকা এনামুলকেও ফেরান তানজিম। তবে ইব্রাহিমের সঙ্গে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিবের জুটিতে বরিশালও ছেড়ে কথা বলেনি। ৩৯ বলে দুজন মিলে যোগ করেন ৬১ রান।

রেজাউর রহমানের করা ১৪তম ওভারটি ছিল ঘটনাবহুল। ২৯ রানে দাঁড়িয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান সাকিব। তবে রেজাউরের দারুণ এক স্লোয়ারে ৩৭ বলে ৪২ রান করা ইব্রাহিম হয়ে যান বোল্ড। শেষ বলে বোল্ড সাকিবও, ফুল লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে অতি আত্মবিশ্বাসী শট খেলাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জন্য।

শেষ ৩০ বলে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান। মাশরাফির এক ওভারে করিমের টানা তিন ছক্কায় মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা বুঝি ঘুরেই যাচ্ছে। তিন ছক্কার প্রথমটি মেরেছেন লেংথ থেকে মিড উইকেটে ঘুরিয়ে, পরের দুটি পেয়েছিলেন স্লটেই। ওই ওভারেই আসে ২১ রান। তবে মোহাম্মদ আমিরের করা ১৭তম ওভারে আসে মাত্র ১ রান। ওই ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২ বলে ২১ রান করা করিম।

শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান, ওয়াইড দিয়ে শুরু করলেও রেজাউরের প্রথম বৈধ বলে লং অফে ক্যাচ দেন ইফতিখার। পরের বলে উইকেটকিপার মুশফিকের সরাসরি থ্রোয়ে মিরাজ রানআউট হলে কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে বরিশালের জন্য। পঞ্চম বলে ওয়াসিমের ছক্কা, এরপরই শেষ বলে ছয় হলে টাইয়ের সমীকরণ। বরিশালের জন্য কাঙ্ক্ষিত সেই ছক্কা আর আসেনি ওয়াসিমের ব্যাট থেকে। কিন্তু ছুটির দিন ছাড়াও প্রায় ভরে ওঠা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকেরা ঠিকই দেখলেন একটা রোমাঞ্চকর ম্যাচ।

এর আগে সিলেটের ব্যাটিংয়ের প্রায় পুরোটাই ছিল নাজমুলময়। প্রথম ওভারে খালেদ আহমেদকে ছক্কার পর মারেন চার। তবে মোহাম্মদ ওয়াসিমের প্রথম ও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ৩ উইকেটে হারিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়ে সিলেট। জাকির হাসান বোল্ড, চোট কাটিয়ে ফেরা তৌহিদ হৃদয় দেন ক্যাচ, মুশফিকুর রহিম এলবিডব্লু। ১৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় সিলেট।

ইনিংস পুনর্গঠনের চেষ্টাটা করেছেন বিপিএলে আজই প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা টম মুরস, সঙ্গে নাজমুল তো ছিলেনই। দুজনের জুটিতে ৮১ রান ওঠে ৭১ বলে। বরিশালকে ব্রেকথ্রু দেন সাকিব, দ্বিতীয় স্পেলে ফেরান ৩০ বলে ৪০ রান করা মুরসকে। মোটামুটি শর্ট পিচে পড়া ডেলিভারিতে সামনে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন মুরস। চারটি চারের সঙ্গে মুরসের ইনিংসে ছিল করিম জানাতকে স্কুপ শটে মারা একটি ছক্কাও।

মুরসের সঙ্গে জুটিতে নাজমুল খেলেছেন একটু ধীরলয়ে। তাঁর ব্যাটে গতি বাড়ে থিসারা পেরেরার সঙ্গে ৩৪ বলে ৬৮ রানের জুটিতে। এই জুটিতে পেরেরার (১৩১.২৫) চেয়ে নাজমুলের (২০৫.৫৫) স্ট্রাইক রেটই ছিল বেশি। ওয়াসিমকে পুল করে চার মেরে ফিফটিতে পৌঁছান ৪৮ বলে, পরের ১৮ বলে তোলেন ৩৭ রান। সিলেট ইনিংসে সব মিলিয়ে ছিল মাত্র দুটি ছক্কা। নাজমুলের ইনিংসের ১১টি চারই বলে দেয়, সে অর্থে ঝুঁকি নেননি তিনি। সিলেট তবু শেষ ৮ ওভারে ১১.৬৩ গড়ে তুলেছে ৯৫ রান।

এসএ-২৪/০১/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)