সাফ শেষ বাংলাদেশের, তীরে এসে তরি ডুবালো

১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে উঠে দারুণ উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে শক্তিশালী কুয়েতের বিপক্ষে তাই প্রথম কয়েক মিনিটে দারুণ আক্রমণও করেছিল হাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা। তেমন একটি আক্রমণ থেকে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে কুয়েতের গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন মুরসালিন। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে সুযোগ মিস করেন তিনি। সেই মিসের আক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। অতিরিক্ত সময়ে গোল খেয়ে সুবর্ণ সুযোগ হারাল রাকিব-মুরসালিনরা।

শনিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু সাফের সেমিফাইনালে কুয়েতের কাছে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের ১০৬ মিনিটে কুয়েতের পক্ষে জয়সূচক গোল করেন আব্দুল্লাহ আম্মার বলৌসি।

বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে এদিন ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোলের সহজ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত থেকে দারুণ ক্রস দিয়েছিলেন রাকিব হোসেন। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা আগের দুই ম্যাচের নায়ক মুরসালিন যথেষ্ট সময় পেলেও শট নেন গোলরক্ষকের গা বরাবর। ফলে সহজেই তাকে ঠেকিয়ে দেন কুয়েতের গোলরক্ষক।

প্রথম দফায় মোরসালিনের শট প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের হাতে লাগে। ফিরতি বলও পেয়ে যান এই স্ট্রাইকার। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের বাধা পেরিয়ে দ্রুত শট নিতে হতো তাকে। সেটা ঠিকমতো নিতে না পারা তার শটটি গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।

প্রথমার্ধের বাকি সময়ে অবশ্য খেলা নিয়ন্ত্রন করে কুয়েত। গোলের সুযোগও পেয়েছিল তারা। কিন্তু গোললাইন থেকে দারুণ সেভ করেন ইসা ফয়সাল। কুয়েতের আল রশিদির শট বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান দারুণভাবে আটকেছেন। ফিরতি বল ক্লিয়ার করেন ইসা ফয়সাল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আরেকবার বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন আনিসুর।। প্রথমার্ধে দুবার কুয়েতের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান বাংলাদেশের গোলকিপার।

প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও বাংলাদেশের ত্রাতার ভূমিকায় বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন গোলরক্ষক জিকো। কুয়েতের একের পর এক আক্রমণ দারুণভাবে ফিরিয়েছেন তিনি। এই অর্ধেও রক্ষণভাগ সামলে থেকে থেকে আক্রমণে উঠেছে বাংলাদেশ। তেমনই একটি আক্রমণে অল্পের জন্য গোল পাওয়া হয়নি লাল জার্সিধারিদের।

৬০ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠার পর ক্রস বাড়িয়েছিলেন রাকিব। কিন্তু সেই ক্রস বাক খেয়ে গোলে প্রায় ঢুকেই গিয়েছিল। অল্পের জন্য ওপরের বারে বাধা পেয়ে বল বাইরে চলে যায়। ফলে হতাশায় ডুবতে হয় ক্যাবরেরার শিষ্যদের।

৯৮ মিনিটে আরও একবার বাংলাদেশের ত্রাতা জিকো। বাংলাদেশের রক্ষণভাগের ক্লান্তির সুযোগে ফাঁকা বল নিয়ে উঠে এসেছিলেন কুয়েতের এক খেলোয়াড়। তার মাইনাস থেকে জোরাল শট নিয়েছিল সতীর্থ খেলোয়াড়। কিন্তু দারুণ রিফ্লেক্সে তাকে গোলবঞ্চিত করেন জিকো।

অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ক্লান্তি স্পষ্টই চোখে পড়ছিল। কুয়েতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে শারীরিকভাবে কিছুতেই আর পেরে উঠছিল না। তাই দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষেই খেলা শুরু করে তারা। আর ভুলটাও সেখানেই করে। তখন যেন কুয়েত ও বাংলাদেশের গোলরক্ষক জিকোই প্রতিপক্ষ। দারুণ বিশ্বস্ত হাতে একের পর এক শট ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন জিকো। প্রমাণ দিচ্ছিলেন কেন তাকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক মানা হয়।

তবে যোগ করা সময়ে আর পেয়ে ওঠেননি জিকো। ১০৬ মিনিটে কুয়েতের একটি আক্রমণ থেকে কোনাকুনি প্লেসিং শটে গোল করেন আব্দুল্লাহ আম্মার বলৌসি। ম্যাচ এখানেই শেষ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেই বোঝা যাচ্ছিল হার মেনে নেওয়ার।

তবে একদম শেষে যেন একটু গা ঝারা দিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ১১৭ মিনিটে বিশ্বনাথের বাড়ানো লং বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শট নিয়েছিলেন রাকিব। কিন্তু বিধি বাম! পা বাড়িয়ে সে শট ঠেকিয়ে দেন কুয়েতের গোলরক্ষক। কর্নার পায় বাংলাদেশ। কিন্তু গোল পাওয়া হয়নি আর।

ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই মেজাজ হারায় দুদল। শুরুটা বাংলাদেশই করে। কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত ধাক্কাধাক্কি অবধি গড়ায়। রেফারি ও অফিসিয়ালদের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আসে বচসা।

এনএইচ-১৭/০১/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)