জুলাই গড়িয়ে আগস্ট চলে এসেছে, ইউরোপের ফুটবলে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময় একেকটি দিন করে কমছে। আর পিএসজির ঘুম হারাম হচ্ছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে যে পিএসজির জন্য বড় এক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন করতে চান না, আবার এমবাপ্পে এই মৌসুমে ক্লাব না ছেড়ে আগামী মৌসুমে ছাড়তে চান – যখন তাকে বিক্রি করে কোনো অর্থ পাওয়ার সুযোগ পিএসজির থাকবে না। দুই দিক থেকেই পিএসজিকে বেকায়দায় ফেলেছেন ২৪ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড।
সব দেখে পিএসজির বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে, এমবাপ্পে আসলে তার প্রিয় ক্লাব রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে আগাম চুক্তি করে ফেলেছেন, সে কারণেই এভাবে পিএসজিকে বেকায়দায় ফেলছেন। আর এমন পরিস্থিতিতে এখন পিএসজি পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর। ইংলিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, ফিফার নিয়মের বাইরে গিয়ে এমবাপ্পের সঙ্গে আগাম ‘গোপন চুক্তি’ করার দায়ে মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ফিফায় নালিশ জানাবে পিএসজি।
পিএসজি মূলত চায় এমবাপ্পে চুক্তি নবায়ন করে লম্বা সময়ের জন্য ক্লাবে থেকে যান। কিন্তু এমবাপ্পে আগামী মৌসুম শেষে বর্তমান চুক্তি শেষ হলেই ২০২৪ সালের জুনে চলে যাওয়ার পণ করেছেন। অর্থাৎ তাকে তো ধরে রাখা যাবেই না, তাকে বিক্রি করে অর্থ পাওয়ার সুযোগও থাকবে না পিএসজির। এমবাপ্পে কোথায় যাবেন, তা নিয়ে সংশয় সম্ভবত কারওই নেই – রেয়াল মাদ্রিদ!
কিন্তু এ নিয়ে চুক্তি তো আর হয়নি। পিএসজির সঙ্গে আরও এক মৌসুম চুক্তিবদ্ধ এমবাপ্পে, এ অবস্থায় অন্য কোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করা অপরাধের পর্যায়ে পড়বে। কিন্তু এমবাপ্পে আর মাদ্রিদ তা-ই করেছে বলে বদ্ধমূল ধারণা পিএসজির। কাতারি মালিকানাধীন ফরাসি ক্লাবটির ক্রোধোন্মত্ত কর্তাব্যক্তিদের ধারণা, আগামী মৌসুমে ‘ফ্রি ট্রান্সফারে’ মাদ্রিদে যাওয়ার চুক্তি করে রেখেছেন এমবাপ্পে। চুক্তি অনুযায়ী নাকি মাদ্রিদে যোগ দিলেই ‘সাইনিং অন ফি’ ১৬ কোটি ইউরো পাবেন এমবাপ্পে – এমনটাই ধারণা পিএসজির।
পিএসজির ধারণা আরও পোক্ত হওয়ার কারণটা অবশ্য হাস্যকর শোনাতে পারে। কদিন আগে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল এমবাপ্পের জন্য ৩০ কোটি ইউরো দলবদল ফি দিতে চেয়েছে পিএসজিকে। পাশাপাশি এমবাপ্পেকে বছরে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে ৭০ কোটি ইউরো দেওয়ার প্রস্তাব ছিল তাদের। খুশিতে বাকবাকুম পিএসজি যদিও আল হিলালের সে প্রস্তাব লুফে নিতে চেয়েছে, কিন্তু এমবাপ্পেরও তো রাজি হতে হবে! এমবাপ্পে তখন আল হিলালের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে দেখাই করেননি। এ থেকে পিএসজির ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে যে, এমবাপ্পে নিশ্চয়ই মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছেন!
যদিও মাদ্রিদকে ফিফার দরবারে নেয়ার এই হুমকিও দলবদলের বাজারের আরেক কৌশল বলে মনে হতে পারে। মাদ্রিদ আগামী মৌসুমে এমবাপ্পেকে ‘ফ্রি’তে পাবে জেনে এই মৌসুমে তার জন্য বিশাল অঙ্ক খরচ করতে রাজি না-ও হতে পারে, রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে অল্প অঙ্কের প্রস্তাব দিতে পারে – এমন শঙ্কা পিএসজির। সে ক্ষেত্রে এভাবে মাদ্রিদকে ফিফার দরবারে নেয়ার হাঁকডাক দিয়ে যদি মাদ্রিদের কর্তাব্যক্তিদের মনে ভয় ঢোকানো যায়, তাতে যদি মাদ্রিদ বড় অঙ্কের প্রস্তাব নিয়ে এই মৌসুমেই এমবাপ্পেকে কিনতে প্যারিসে যায়…এটাই পিএসজির পরিকল্পনা বলে মনে করছেন অনেকে।
এই বিশাল ‘পরিকল্পনা’র ঝামেলা হলো, এমবাপ্পের সঙ্গে যে মাদ্রিদের চুক্তি-টুক্তি হয়েছে বলে অভিযোগ করছে পিএসজি, সেটার আনুষ্ঠানিক প্রমাণাদি তো দিতে হবে তাদের। সেটা পিএসজি পাবে কোথায়, তা-ই এখন দেখার। যদিও স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা লিখেছে, পিএসজির দাবি, তাদের কাছে কিছু প্রমাণ আছে।
যদিও দ্য টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এই মৌসুমেই মাদ্রিদ মোটামুটি সম্নানজনক একটা ফি দিয়ে এমবাপ্পেকে কেনার প্রস্তাব করতে পারে। বেনজেমা চলে যাওয়ার পর মাদ্রিদেরও একজন স্ট্রাইকার – তার চেয়েও বড় কথা একজন তারকা – লাগবে, আর পিএসজির চাই এমবাপ্পেকে বিক্রি করে অর্থ আদায়। দুদিক মিলিয়ে তাই এমবাপ্পের জন্য মাদ্রিদের দিক থেকে কিছু অঙ্কের (সেটা ১৫ কোটি কিংবা ২০ কোটি ইউরোও হতে পারে) প্রস্তাবই হতে পারে ‘মুশকিলে আসান!’
এসএইচ-১১/০১/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)