মেসির লাল কার্ড না পাওয়াকে সার্কাস বললেন অরল্যান্ডো সিটির কোচ

লিওনেল মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন লেগেই আছে! ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে গত ১৬ জুন মেসিবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল দুই ঘন্টা দেরিতে। আজ একই কারণে খেলা শুরু হতে দেরি হয়েছে দেড় ঘণ্টা। তাতে অবশ্য ম্যাচের ফলে প্রভাব পড়েনি। মেসি প্রতিপক্ষের ওপর দিয়ে যে বইয়ে দিয়েছেন আরেক দুর্যোগ; যেটাকে মায়ামির সবুজ গালিচায় বিদ্যুচ্চমক বলা যেতে পারে।

ঘরের মাঠ ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়ামে আজ মেসির জোড়া গোলে অরল্যান্ডো সিটিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে ইন্টার মায়ামি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটির হয়ে তিন ম্যাচেই ৫ গোল করে ফেলেছেন মেসি। গত ২৬ জুলাই ক্লাবটির হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও করেছিলেন জোড়া গোল। আর অভিষেক ম্যাচের যোগ করা সময়ে ফ্রি কিক থেকে গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন। মেসির ভেলায় চড়ে লিগস কাপের শেষ ষোলোতেও উঠে গেছে মায়ামি।

মায়ামির জার্সিতে মেসির আগের দুই ম্যাচে অবশ্য সেভাবে উত্তাপ ছড়ায়নি। প্রতিপক্ষ ক্রুজ আজুল ও আটলান্টা ইউনাইটেডের খেলোয়াড়রা মেসির মতো কিংবদন্তির সঙ্গে খেলতে পেরেই হয়তো নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। ম্যাচ শেষে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা দেখে সেরকমই মনে হয়েছে।

কিন্তু আজ দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ‘ডার্বি ম্যাচ’ বলেই হয়তো কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায়নি। মায়ামি–অরল্যান্ডো দুই দলই যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের। এই লড়াইটা ‘ফ্লোরিডা ডার্বি’ নামে পরিচিত।

এমন ম্যাচে দলকে জোতানোর পথে তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে মেসির। মায়ামির জার্সিতে প্রথমবার দেখেছেন হলুদ কার্ড। ম্যাচের ২০ মিনিটে অরল্যান্ডোর ওয়াইলদের কার্তাহেনাকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন তারকা। ৭ কার্ডের ম্যাচে সেটা ছিল প্রথম।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মেসিকে লাল কার্ড দেখে মাঠও ছাড়তে হতে পারত। এ দফায় অরল্যান্ডোর সেজার আরাউহোকে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেন। কিন্তু রেফারি ইভান বার্তন এবার কোনো কার্ড না দেখানোয় পার পেয়ে যান। এরপর ১–১ সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুই গোল করে ম্যাচ জেতে মায়ামি; যার একটি করেন মেসি।

মেসি লাল কার্ড দেখলে দ্বিতীয়ার্ধে এক খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলতে হতো মায়ামিকে। সে ক্ষেত্রে ম্যাচের ফলও ভিন্ন হতে পারত বলে মনে করেন অরল্যান্ডো কোচ অস্কার পারেহা। কলম্বিয়ান এই কোচের দাবি, মেসি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার বলেই তাঁর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন রেফারি বার্তন ও ম্যাচ অফিসিয়ালরা।

ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের পারেহা বলেছেন, ‘আজ রাতে (স্থানীয় সময়) যা হয়েছে, সেটা স্রেফ সার্কাস। মেসির দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখার কথা ছিল। কিন্তু দেখানো হয়নি। (সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে) মেসি হলেও আমি তাকে পরোয়া করি না।’

মায়ামির তিন গোলের একটি এসেছে পেনাল্টি থেকে। ৫১ মিনিটে সফল স্পট কিকে দলকে এগিয়ে দেন হোসেফ মার্তিনেজ। অরল্যান্ডো কোচ পারেহার দাবি, তাঁর দলও বেশ কয়েকটি পেনাল্টি পেয়েছিল। কিন্তু রেফারি সাড়া দেননি, ‘আমরা পেনাল্টির আবেদন জানিয়েছিলাম, দেওয়া হয়নি। তাদের (রেফারি–লাইন্সম্যানদের) ম্যাচ পরিচালনা ছিল হাস্যকর। ম্যাচে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, যা হওয়া উচিত হয়নি। আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবু শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’

ইন্টার মায়ামির হয়ে মেসি প্রথম তিন ম্যাচই খেলেছেন ক্লাবের নিজেদের মাঠ ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়ামে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের সমর্থকদের তাই মেসির খেলা দেখার সুযোগ এখনো আসেনি। তাদের সেই অপেক্ষা রোববার শেষ হতে চলেছে। ওই দিন লিগস কাপের শেষ ষোলোতে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ক্লাব এফসি ডালাসের মুখোমুখি হবে মেসির মায়ামি। ম্যাচটি হবে ডালাসের মাঠ টয়োটা স্টেডিয়ামে।

এসএইচ-০২/০৩/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)