বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া প্রথম দল হচ্ছে!

বাংলাদেশের একেকটা ম্যাচ যাচ্ছে আর সমর্থকরা আশা করছিলেন, ‘আচ্ছা! পরের ম্যাচে হবে’। সেই পরের ম্যাচটা বাংলাদেশের আর এলো না।

দেখতে দেখতে পাঁচ ম্যাচ শেষ হয়ে গেল, অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বকাপ অর্ধেক শেষ।

এমন একটা অবস্থায় বাংলাদেশের খাতায় ১টি জয় ও চারটি পরাজয়।

আফগানিস্তানের সাথে জয় দিয়ে শুরু, কিন্তু এরপরের চার ম্যাচে হারের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এর চেয়ে বাজে খেলা মনে হয় সম্ভব নয়।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া এমনটাই বলছেন, “বাংলাদেশই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে পারফর্ম করা দলগুলোর একটি”।

বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্সকে ‘বিরক্তিকর’ বলছেন আকাশ চোপড়া।

দিন বিশেক আগে এমন বক্তব্য এলে বাংলাদেশের সমর্থকরা তুমুল প্রতিবাদে ফেটে পড়তেন। যেমনটা পড়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের বিপক্ষে, যখন তিনি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডসের কাতারে বলেছিলেন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে।

কিন্তু এখন বাংলাদেশ আফগানিস্তান বা নেদারল্যান্ডসের চেয়েও নিচে অবস্থান করছে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে।

বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘এখনই হতাশ না হতে, বিশ্বকাপের পর ইচ্ছামতো হতাশ হবে’।

কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশ যদি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও হেরে যায় তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

কারণ নেদারল্যান্ডস এখন প্রতিটা দলের সাথেই টক্কর দিচ্ছে আর বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারছে।

রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের হার দুটি- ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৭ রানে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৯ রানে।

উইকেটের ব্যবধানে বাংলাদেশের হার দুটি- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে, ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে।

আগে ব্যাটিং হোক কিংবা পরে, বাংলাদেশ কোনও ভাবেই সুবিধা করতে পারছে না, এমনকি প্রতিপক্ষের জন্য কোনও ধরনের প্রশ্নই ছুড়ে দিতে পারছে না।

সাকিব আল হাসান থেকেই শুরু করা যাক। গতকাল তিনি বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজের সবচেয়ে খরুচে ওভারটা করেছেন, দিয়েছেন এক ওভারে ২২ রান।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাহাতি স্পিনার হয়েও কেন তিনি ৪৪তম ওভারে একজন ইনফর্ম ও সেট বাহাতি ব্যাটারের সামনে বল করতে আসবেন?

বোলার হিসেবে ব্যর্থতা একই সাথে অধিনায়ক হিসেবেও।

সাকিব লিজাড উইলিয়ামসের যে বলে আউট হয়েছেন, ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন বলটায় বাউন্স ছিল কিন্তু উইকেট নেয়ার মতো বল ছিল না।

সাকিব না কভার ড্রাইভ খেলেছেন, না স্কয়ার কাট মনে হচ্ছিল ব্যাট চালানোর দরকার ব্যাট চালিয়ে দিলাম, এভাবেই নিজেদের বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি ধারাভাষ্যকাররা।

নাজমুল হোসেন শান্তও একই উপায়ে আউট হয়েছেন, তবে তিনি ব্যাট চালিয়েছেন লেগ সাইডে, পায়ের বলে তিনি ছোঁয়া লাগিয়ে কিপারের হাতে পাঠিয়েছেন।

তিনি একই উপায়ে আউট হচ্ছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও।

দৃশ্যত নিরীহ একেকটা ডেলিভারিতে বাংলাদেশের কথিত নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটারের উইকেট বিলিয়ে দেয়ার ক্ষমতা দেখে গ্যালারিতে কেউ কেউ মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন।

বাংলাদেশের যখন হার নিশ্চিত, তখন মুম্বাইয়ের গ্যালারিতে এক সমর্থকের প্ল্যাকার্ডে বাংলা টাইগার্স লেখাটি থেকে ‘টাইগার্স’ কেটে ‘কিটেনস’ লেখা দেখা গেছে।

‘বাংলার বাঘ’ থেকে ‘বাংলার বিড়ালছানা’তে এই রূপান্তরের পেছনে ছিল মিডল অর্ডারের হতচ্ছাড়া ব্যাটিং প্রদর্শনী।

যেমন তানজিদ তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান আউট হয়েছেন মাত্র ১৩ বলের মধ্যে।

শান্ত করেছেন এক বলে করেছেন শূন্য, অর্থাৎ গোল্ডেন ডাক, সাকিব করেছেন ১ রান এরপর মুশফিকুর রহিম করেছেন ৮ রান।

অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮২ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ টপ মিডল অর্ডার থেকে রান এসেছে মাত্র ৯, তারা বল খেলেছেন ২২টি।

এর আগে পুনেতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ব্যাটার রান তুলেছেন যথাক্রমে ৮, ৩ ও ১৬।

এই ২৭ রান তুলতে শান্ত, মিরাজ ও হৃদয় বল খেলেছেন ৫৫টি।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবস্থা এতো খারাপ হয়নি তবে খুব ভালোও না। মিরাজ, শান্ত ও সাকিব মিলে ৭০ রান তুলেছেন ১০৫ বল খেলে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল এই ব্যর্থ যাত্রার শুরু, শান্তর গোল্ডেন ডাক, সাকিবের ৯ বলে ১ রান এবং মেহেদী হাসান মিরাজের সাত বলে ৮ রান।

অর্থাৎ বাংলাদেশের তিনজন ব্যাটার যারা টপ অর্ডারে খেলছেন তারা ১৮ বল খেলে ৯ রান তুলে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন যখন দলের লক্ষ্য ৩৬৫ রান।

এই পারফরম্যান্সকে আকাশ চোপড়া ‘বিরক্তিকর’ বলেছেন।

ক্রিকেট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত স্ট্যাটাস দেন বাংলাদেশি ক্রিকেটের সমর্থক নারগিস।

তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “প্রতিবার এই দলটা একদম আমাকে ধ্বংস করে দেয়। আমি কদিন টুইটার থেকে দূরে থাকবো”।

এমনই হতাশাজনক পারফরম্যান্স বাংলাদেশের।

ক্রিকেটের জনপ্রিয় পোর্টাল ইএসপিএন ক্রিকইনফোর আলোচনায় ভারতের ক্রিকেটার চেতেশ্বর পুজারা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করছেন স্থিতিশীলতা না থাকা।

তিনি বলছেন, “বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে যে ক্রিকেটটা খেলছে তাতে হয়তো ঘরের মাটিতে ভালো করতে পারতো। তবে দেশের বাইরে একটা স্থিতিশীল ব্যাটিং লাইন আপ প্রয়োজন”।

পুজারা বলছেন প্রথম ২০ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশ ৩-৪ উইকেট হারিয়ে ফেলছে, নতুন বলে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ভঙ্গুর, যা শেষ চার ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাচ্ছে।

আলোচনায় অনেকটা মজা করেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যে ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, মনে হতে পারে পরের ম্যাচে মাহমুদুল্লাহকে ওপেনিংয়ে দিয়ে দেবে।

নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার শেন বন্ড মনে করছেন বাংলাদেশ হয়তো প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের লড়াই থেকে ছিটকে যাবে।

এসএইচ-০৮/২৫/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)