চলমান আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে বিদায় নিলো বাংলাদেশ। চলতি আসরের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। আগে ব্যাট করতে নেমে শাহীন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র ও হারিস রউফের বোলিং তোপে ২৯ বল বাকি থাকতে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামানের জোড়া ফিফটিতে ১০৫ বল হাতে রেখেই সহজ জয় পায় পাকিস্তান। এর ফলে সেমিফাইনালের আশা টিকে রইলো বাবর আজমের দলের।
মঙ্গলবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের দেয়া ২০৫ রানের মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ ও ফখর। তবে সময় যত গড়িয়েছে তাদের দু’জনের রান তোলার গতি ততই বেড়েছে। তাতে করে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫২ রান তোলে পাকিস্তান। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পরও থামানো যায়নি তাদের দু’জনকে। তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যর্থতায় সাকিব বোলিংয়েও আসলেও দেখা মেলেনি উইকেটের।
উইকেটের আশায় শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্তর হাতেও বল তুলে দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। যদিও সাফল্য পাওয়া যায়নি। অসুস্থতা ও অফ ফর্মের কারণে মাঝে কয়েক ম্যাচ একাদশের বাইরে ছিলেন ফখর। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইমাম উল হকের জায়গায় খেলতে নেমে পেয়েছেন দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি। তাসকিনের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মেরে ৫১ বলে হাফ পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ফখর।
একই ওভারে ফখরের আগে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। হাফ সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেট দেন ডানহাতি এই ওপেনার। মিরাজের বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন শফিক। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি ৬৮ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটারের। তিনে নামা বাবর আজমকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন ৯ রান করা বাবর।
দ্রুত রান তুলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ফখরও। মিরাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাতে করে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে ৮১ রানের ইনিংস খেলা ফখরকে। শেষ দিকে পাকিস্তানকে আর কোনো উইকেট হারাতে দেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে, টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই বিদায় নেন তানজিদ হাসান তামিম। শাহীনের করা ইনিংসের শুরুর ওভারের প্রথম চারটা ডেলিভারিতে অফ স্টাম্প ও এর বাইরে রেখেছিলেন শাহীন। কিন্তু পঞ্চম ডেলিভারিতে বল ভেতরে ঢোকালেন তিনি। তাতেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন জুনিয়র তামিম। এলবিডব্লিউর হাত থেকে বাঁচতে রিভিউ নিয়েছিলেন কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় এই বাঁহাতি ব্যাটারকে।
তানজিদকে ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে শততম উইকেটের মাইলফলক পূরণ করেন শাহীন। দলের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে ৪ রান করা নাজমুল হোসেন শান্তকে সাজঘরে ফেরান তিনি। ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে থাকা উসামা মীরের হাতে ক্যাচ দেন শান্ত।
৪ নম্বরে ব্যাট করতে আসা মুশফিকুর রহিমও দলের হয়ে হাল ধরতে পারেননি। এই অভিজ্ঞ ডানহাতি ব্যাটারকে ফেরান হারিস রউফ। হারিসের গুড লেন্থের ডেলিভারিটি ব্লক করতে গিয়েও ঠিকমতো করতে পারেননি মুশফিক। বলটি তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে চলে যায়। ৯ বলে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক।
এরপর ৪র্থ উইকেটে ওপেনিং ব্যাটার লিটনকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের দিকে নজর দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দু’জনে মিলে গড়েন ৭৯ রানের জুটি। লিটন ৪৫ রান করে ইফতিখারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। টাইগার ওপেনার ফিফটি মিসের হতাশা নিয়ে ফিরলেও ক্যারিয়ারের ২৮তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন রিয়াদ।
ফিফটি পাওয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রিয়াদ। শাহীন শাহ আফ্রিদির লেন্থ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মিডল স্টাম্পে পড়া বল বেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইন মিস করে বোল্ড হন ৫৬ রানের ইনিংস খেলা এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ক্রিজে আসেন ২ ম্যাচ পর একাদশে সুযোগ পাওয়া তাওহিদ হৃদয়। তবে আবারও টাইগার সমর্থকদের হতাশ করেছেন এই তরুণ ব্যাটার। উসামা মীরের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ রান করা এই ব্যাটার।
ক্রিজে নামার পর থেকেই রয়েসয়ে খেলে রান তুলছিলেন সাকিব আল হাসান। যদিও ৪০তম ওভারে ফিফটির আগেই ফেরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৬৪ বলে চারটি চারে ৪৩ রান করে হারিসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সালমানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকা মেহেদী মিরাজও খেই হারিয়ে ফেলেন। ওয়াসিমের করা গুড লেন্থের বলে ক্রস ব্যাটে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ২৫ রান করা এই অলরাউন্ডার। মিরাজ ফেরার পর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশের ইনিংস।
পাকিস্তানের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। দু’টি উইকেট নেন হারিস রউফ। একটি করে উইকেট শিকার করেন উসামা মীর ও ইফতিখার আহমেদ।
এসএইচ-২০/৩১/২৩ (স্পোর্টস ডেস্ক)