রাজনীতির কথা ক্রিকেটের ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে বলতে হয় প্রথম বলেই ছক্কা মারলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের মাঠে, ক্রিজে দাঁড়িয়ে এক-দুইটা বল দেখতে হয় ব্যাটারকে। সাকিব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সরাসরি ওভার বাউন্ডারি মারলেন। দেখিয়ে দিলেন ধুন্ধুমার ক্রিকেট যারা পছন্দ করেন তারা ভোটের মাঠেও সাকিবকে ভোট দিয়ে মাথায় তুলে নিতে পারেন। রাজনীতির মাঠে সাকিব কখনো স্লোগান দেননি। কাউন্সিলর হননি। সোজাসাপ্টা কথায় তৃণমূলে রাজনীতি করেননি যিনি, এবার তিনি সরাসরি জাতীয় সংসদের চেয়ারে বসবেন।
দেশের জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন, সাকিব এখন দেশের আইনপ্রণেতা। প্রথম বার রাজনীতির মাঠে এসে প্রথম বারই সংসদ সদস্য হয়ে গেলেন সাকিব। যে সব প্রার্থীর দিকে দেশের মানুষ কৌতূহলী চোখ রেখেছিলেন, সাকিব অন্যতম। দেশের অভিজাত পরিবার থেকে শুরু করে রেললাইনের পাশের বস্তি পর্যন্ত সাকিবের ভক্ত আছে। খেলাধুলা প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাকিবকে খুব পছন্দ করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশ গঠনে তরুণদের উদ্বুব্ধ করছেন। ভবিষ্যতে তরুণরা দেশ পরিচালনা করবেন। সাকিবদের মতো তরুণরা তারই একটা অংশ।
মাগুরা-১ আসনে সাকিব নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন বিপুল ভোটে। একতরফা ভোট পেয়েছেন। তার বিপক্ষে যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তারা ক্রিকেট জনপ্রিয়তার ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেন। সকালে বাব-মাকে নিয়ে ভোট দিতে যান সাকিব। ভোট দিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে বেড়ান। এক মাসের বেশি সময় সাকিব তার এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। ক্রিকেট ভক্তদের সঙ্গে অনেক সময় নানা অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিলেও সাকিব মাঝে মধ্যে ভুলে যান খ্যাতির বিড়ম্বনা থাকবেই। অনেক সময় মেজাজ হারিয়েছেন।
নানা সমালোচনার মুখেও কখনো কোনো কিছুই পাত্তা দিতেন না রাফ অ্যান্ড টাফ সাকিব। সুন্দর চেহারার সঙ্গে মিষ্টি হাসিতে লুকানো থাকে দুষ্টুমি। বিসিবি নাকি সাকিবকে এভাবে দেখে ‘যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়াও ভালো’। সাকিবও যেন সেরকমটাই। অলওয়েজ ড্যামকেয়ার ভাব তার। এই অল্প বয়সে নিজের স্বপ্ন এঁকে নিয়েছেন—সংসদ সদস্য হবেন। কেউ তাকে আটকাতে পারেননি।
গতকাল নির্বাচনের দিন দুপুর বিকাল গড়িয়ে সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে, তখন থেকেই সাকিবের বাসায় শুভেচ্ছা বার্তা আসতে শুরু করে। মাগুরা প্রধান সড়ক থেকে সৈয়দ আতর আলী সড়ক হয়ে সোজা চৌরঙ্গীর মোড়, জজ কোর্ট হয়ে কেশব মোড়। সেখান থেকে সোজা হাঁটলে ৩ মিনিটের পথ, এখানেই সাকিবের বাড়ি। হাতে মিষ্টির প্যাকেট আর ফুলের মালা নিয়ে হাজির হন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই বাড়ির বাইরে আনন্দ মিছিল, নৌকা নৌকা স্লোগানে মুখরিত, সন্ধ্যার পরই সাকিবের বাসার গেট খুলে দেওয়া হলে সবাই উঠান ভরে ফেলেন। সাকিব চেয়ারে বসা। কর্মীরা একে একে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন। হাত মেলাচ্ছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
এসএ-০৫/০৮/২৪(স্পোর্টস ডেস্ক)