১০ ম্যাচ–৯৫০ মিনিটে মাত্র ১ গোল হজম

গোলের খেলা ফুটবল। এই খেলায় অবশ্য গোল ঠেকিয়েও সেরা হওয়া যায়। আবাহনীর গোলরক্ষক মিতুল মারমা সেটাই করেছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে আবাহনীর ১২ ম্যাচের ১০টিতেই খেলেছেন মিতুল। সময়ের হিসেবে প্রায় এক হাজার মিনিট এবং ভিন্ন ১০টি প্রতিপক্ষ এলেও মিতুলের গোলপোস্টে বল জড়িয়েছে মাত্র একবার।

গত দুই-তিন বছর ধরেই মিতুল মারমা দেশের শীর্ষ গোলরক্ষকদের একজন। চলতি মৌসুমে তিনি অসাধারণ খেলছেন। এই মুহূর্তে ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন বলে মনে করছেন এই গোলরক্ষক, ‘বর্তমান সময়কে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলব। লিগ ও ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে ১০ ম্যাচ খেলে মাত্র এক গোল হজম করেছি। গোলরক্ষক হিসেবে অবশ্যই এটা আমার দারুণ সময়।’

বেশ কঠিন এক সময়ে আবাহনীতে এসেছেন মিতুল। বিদেশি কোনো ফুটবলার নেই, সম্মানীর অঙ্কটাও তুলনামূলক কম। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে রেখেছেন শিরোপার লড়াইয়ে, ‘আমি গোল হজম করিনি, সাধারণ দৃষ্টিতে আমার কৃতিত্ব হলেও এটা আসলে টিম এফোর্ট। এতে আমার রক্ষণ, মধ্য ও আক্রমণভাগ সকল সতীর্থেরও সমান ধন্যবাদ ও কৃতিত্বের দাবিদার। তারা কখনও আমার ওপর চাপ হ্রাস করে, আবার কখনও তাদের পারফরম্যান্স আমাকে আরও উজাড় করে খেলতে উদ্বুদ্ধ করে।’

মিতুল মারমা লিগের তিন ম্যাচে সেরা হয়েছেন। আবাহনী এবারই প্রথম হারিয়েছে বসুন্ধরা কিংসকে। সেই ম্যাচে আবাহনী ১-০ গোলে জিতলেও গোলদাতার পরিবর্তে গোলরক্ষক মিতুল সেরা হয়েছেন। ফর্টিজ ও ব্রাদার্সের বিপক্ষে ড্র করা দুই ম্যাচেও তিনিই ম্যাচসেরা। এই তিন ম্যাচে আবাহনীর পয়েন্ট পাওয়ার পেছনে তার প্রত্যক্ষ অবদান অনেক বেশি। যদিও আত্মতৃপ্তির চেয়ে তার খানিকটা আক্ষেপ সেই মোহামেডান ম্যাচ নিয়েই, ‘এবার অনেক ম্যাচেই ভালো কিছু সেভ করেছি। মোহামেডানের বিপক্ষে আমরা মাত্র এক গোল হজম করেছি। সেটা আসলে খুব বেশি ভালো গোল বলা যাবে না। সেটা ঠেকাতে পারলে আমাদের দলের জন্য দারুণ হতো।’

আবাহনীতে অনেকদিন থেকেই গোলরক্ষক কোচ হিসেবে কাজ করছেন আতিকুর রহমান। বিগত দিনগুলোতে আবাহনীর গোলরক্ষক (মূলত সোহেল) শিশুসুলভ গোলও হজম করেছেন। আবার মিতুল বিগত দিনে অন্য ক্লাবে খেললেও এরকম অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখা যায়নি। আবাহনীতে অন্যরকম এক মিতুল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল আবাহনীতে খেলা। আবাহনী সব সময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলে। সকল খেলোয়াড়রা শুরুতেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম আমরাই (বিদেশি ছাড়াই) শিরোপার জন্য লড়ব। আমরা সম্পূর্ণ একটি টিমওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছি। যারা মাঠে নামছে না, তারাও আমাদের পারফরম্যান্সের প্রভাবক। আমাদের অনুশীলন অত্যন্ত ভালো হচ্ছে। ফলে সেভাবে ইন্ডিভিজুয়াল অনুশীলন না করলেও চলে।’

জাতীয় ফুটবল দলের এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবে আনিসুর রহমান জিকোই ছিলেন সমাদৃত। তিনি এখন বসুন্ধরা কিংসে নিয়মিত খেলতে পারেন না। পারফরম্যান্স বিবেচনায় এখন মিতুলই সেরা এবং সামনে জাতীয় দলে তিনিই এক নম্বর পছন্দের হওয়া সময়ের অপেক্ষা। এ নিয়ে অবশ্য মিতুলের তেমন ভাবনা নেই, ‘এক/দুই নম্বর নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। ক্লাব/জাতীয় দল দুই জায়গাতেই আমি অনুশীলনে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। কোচ দলের প্রয়োজনে মাঠে নামালে সেখানেও সর্বোচ্চটা দিয়ে থাকি। দেশের হয়ে খেলার বিষয়টি অবশ্যই আলাদা অনুভূতির।’

মিতুল মারমার বেড়ে ওঠা রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসে এখন দেশের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত। তার পথচলাটা অবশ্য অনেক সংগ্রামের, ‘অন্য সবার চেয়ে আমাদের কষ্ট অবশ্যই একটু বেশি ও ভিন্ন রকমের। রাঙামাটিতে শুরুরদিকে অরুণ দা (জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত বরুন বিকাশের ভাই) আমার গোলরক্ষকের হাতেখড়ি দিয়েছেন। এরপর ধাপে ধাপে নিজের উন্নতি করেছি। সমস্যা আসলেও ভেঙে পড়িনি। সব সময় নিজেকে মেনটেইন করার চেষ্টা করেছি।’

এসএ-০৯/০১/২৫(স্পোর্টস ডেস্ক)