এক দশকে স্যামসাংয়ের ১০ উদ্ভাবন

গত দশ বছর স্যামসাং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগীদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে নিজেদের স্মার্ট-ডিভাইস। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এক দশকে স্যামসাংয়ের দশ উদ্ভাবন-

১. অ্যামোলেড ডিসপ্লে-

২০১০ সালে গ্যালাক্সি এস সিরিজের স্মার্টফোনগুলোতে প্রথম অ্যামোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। অ্যামোলেড ডিসপ্লের বিশেষত্ব হল এতে স্ক্রিনের প্রত্যেকটি পিক্সেল আলাদা ভাবে আলোকিত হয়। এই ধরনের ডিসপ্লেতে একটি পাতলা ফিল্ম ট্রানজিস্টর বা টিএফটি থাকে যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে পিক্সেলগুলোকে আলোকিত করে।
২. দ্য এস পেন-

২০১১ সালে স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি নোট সিরিজের ডিভাইসে ব্যবহারকারীদের এস পেন ফিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পর্যাক্রমে এই ফিচারটি বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। নোট নেওয়া থেকে শুরু করে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের স্লাইড পরিবর্তন করা, ছবি তোলা, ইউটিউবে ভিডিও প্লেব্যাক নিয়ন্ত্রণ করা যায় এতে। ব্লুটুথের মাধ্যমে যুক্ত করে এস পেনটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ব্যবহার করা যায় এবং কম চার্জে এস পেনটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

৩. স্যামসাং নক্স-

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি গ্যালাক্সি নোট৩ ডিভাইসের মাধ্যমে প্রযুক্তিপ্রেমীদের সামনে স্মার্টফোনের শীর্ষস্থানীয় সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্ম স্যামসাং নক্স নিয়ে হাজির হয়। এই নক্স ব্যবহারকারীর সুরক্ষা, গোপনীয়তা নিশ্চিত করে। তাছাড়া ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়ার থেকেও ডিভাইসটিকে রক্ষা করে স্যামসাং নক্স।

৪. বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন-

নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে ২০১৪ সালে স্যামসাং বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে। সর্বপ্রথম গ্যালাক্সি এস৫ স্মার্ট ডিভাইসে এই ফিচারটি ব্যবহার করা হয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন স্মার্টডিভাইসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে করেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত।

৫. আইপি ৬৮ ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স-

আইপি মানে ইনগ্রেস প্রটেকশন। ফোনের মধ্যে যেকোনো প্রটেকশন বা সুরক্ষার মাত্রা বোঝাতে এটি ব্যবহার করা হয়। স্যামসাং ২০১৪ সালে গ্যালাক্সি এস৫ স্মার্টডিভাইসে এই ফিচারটি নিয়ে আসে। কোনো আইপি৬ দেখালে তা ‘ডাস্ট টাইট’ বা ধুলোবালু সুরক্ষিত। পরের ডিজিট পানি বা অ্যাসিড বাদে অন্য লিকুইড বা তরলের বিপরীতে প্রটেকশন বা সুরক্ষার মাত্রা কতটা শক্তিশালী তা বোঝায়। আইপি৬৮ মানে হচ্ছে দেড় মিটার পানির নিচে এ ফোন আধা ঘণ্টা টিকতে পারবে।

৬. ওয়্যারলেস চার্জিং-

২০১৫ সালে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৬ ডিভাইসের মাধ্যমে প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে ওয়্যারলেস চার্জিং টেকনোলজি-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারবিহীণ স্বল্প সময়ের চার্জে ফোনটি লম্বা সময় ধরে ব্যাটারির স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করে।

৭. স্যামসাং পে-

২০১৫ সালে স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি এস৬ ডিভাইসের মাধ্যমে নিজস্ব মোবাইল ওয়ালেট সার্ভিস ‘স্যামসাং পে’ চালু করে। এ ডিজিটাল ওয়ালেট সেবাটি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দোকান, শপিং মল বা প্রতিষ্ঠানে স্মার্টফোন থেকে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা যায়। অতি শিগগিরই বাংলাদেশে আসছে ‘স্যামসাং পে’।

৮. ইনফিনিটি ডিসপ্লে-

২০১৭ সালে স্যামসাং বাজারে নিয়ে আসে গ্যালাক্সি এস৮। এতে রয়েছে ইনফিনিটি ডিসপ্লে। এটাই ছিল এই ডিভাইসটির বড় আকর্ষণ। বড় আকারের এই ডিসপ্লের মাধ্যমে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে নিয়ে যায় নতুন এক উচ্চতায়। এছাড়াও, ডিভাইসটির ১৮:৫:৯ অ্যাসপেক্ট রেশিও তালিকা তৈরি, আর্টিকেল পড়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। ল্যান্ডস্কেপ মোডে ডিভাইসটি দেখার পরিধি বৃদ্ধি করে যা চলচ্চিত্র, টিভি শো এবং গেমগুলি আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। স্যামসাং-এর ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর সিগনেচার ফিচার হচ্ছে এই ইনফিনিটি ডিসপ্লে।

৯. বিক্সবি-

২০১৭ সালে গ্যালাক্সি এস৮ ডিভাইসের মাধ্যমে স্যামসাং বাজারে নিয়ে আসে বিক্সবি। ফিচারটি ভয়েস কমান্ডে কাজ করে। এই ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্টটি দিয়ে আবহাওয়ার খবর, বার্তা পাঠানোসহ বেশ কিছু কাজ করা যায়।

১০. প্রো-গ্রেড ক্যামেরা (ডুয়াল অ্যাপারচার)-

গ্যালাক্সি এস৯ স্মার্টফোনে প্রো-গ্রেড ক্যামেরায় প্রথমবারের মতো ডুয়াল অ্যাপারচার যুক্ত করা হয়েছে। সামনে ৮ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস ক্যামেরা, অ্যাপারচার এফ/১.৭, পেছনে ডুয়াল পিক্সেল ১২ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস ক্যামেরা। যা স্থির চিত্র ধারণ এবং ভিডিও-এর ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

সবশেষে বলা যায়, গত এক দশক ধরে প্রযুক্তিপ্রেমীদের সামনে প্রতিনিয়তই উদ্ভাবনী ফিচার নিয়ে এসেছে স্যামসাং। সামনের দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে স্যামসাংয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দূরদর্শীতা ও একাগ্রচিত্ততা দক্ষিণ কোরিয়ার এই টেক জায়ান্টকে নিয়ে গিয়েছে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে, যা তাদের প্রতিটি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেই প্রমাণ মেলে।

এসএইচ-২৭/১৬/১৯ (প্রযুক্তি ডেস্ক)