স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের পথে অ্যাপল

বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার এক আধিকারিকের দাবি, এ বিষয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা চালাতে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ মাইকেল ট্রেলা এবং জন ফেনউইকের নেতৃত্বে একাধিক উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়ার ও বাছাই করা কর্মীদের নিয়ে একটি গোপন দলও গঠন করা হয়েছে। যারা পুরো প্রজেক্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে।মোবাইলে বাজারে অ্যাপলের রমরমায় শেষ বছরকয়েক বড়সড় থাবা বসিয়েছে স্যামসাং এবং চীনা সংস্থাগুলি।

এ বার তাই শুধু নতুন মডেলের আইফোন তৈরির থেকে বেরিয়ে নতুন পথে হাঁটার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। প্রথাগত মোবাইল টাওয়ার এবং ফিক্সড লাইন ইন্টারনেটের উপর নির্ভর না করে থেকে, উপগ্রহ থেকে সরাসরি গ্রাহকের মোবাইল হ্যান্ডসেটে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ভবিষ্যতের প্রযুক্তি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে পা বাড়ানোর কথা ভাবছে মার্কিন মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাপল।

সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গ নিউজের দাবি, অ্যাপল বিষয়টি নিয়ে যে গুরুত্ব দিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে, তার প্রমাণ মিলেছে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই খাতে আগের বছরের থেকে বরাদ্দ ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে ১.১৪ লাখ কোটি টাকা করায়। ওই আধিকারিকের অবশ্য দাবি, এখনই হলফ করে বলা যাচ্ছে না, যে আগামী দিনে অ্যাপল সত্যিই এই অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি নিয়ে এগোবে না তা পাইলট স্তরেই বাতিল করে দেওয়া হবে। কিন্তু সংস্থার প্রধান টিম কুক স্বয়ং এই প্রকল্পে উৎসাহ দেখানোয় মনে করা হচ্ছে, বেশ আঁটঘাট বেঁধেই নতুন প্রযুক্তির পরিষেবা গ্রাহককে পৌঁছে দিতে মাঠে নেমেছে গুগল।

যদিও সরাসরি নিজস্ব কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট তৈরি করে তা জিওসিঙ্ক্রোনাস কক্ষপথে স্থাপন করে নিজেদের নতুন পরিষেবা চালু করা হবে নাকি নর্থকর্প গ্রুম্যান কর্পোরেশান বা লকহিড মার্টিন কর্পোরেশানের মতো সংস্থার কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের ট্র্যান্সপন্ডার ভাড়া নিয়েই কাজ চালানো হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন অ্যাপলের মুখপাত্র।

অ্যাপল এখন এই প্রকল্পের সলতে পাকানো শুরু করলেও স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে ইরিডিয়াম স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের উপগ্রহ কক্ষপথে স্থাপনের পরেই। কিন্তু সেই সময় যে গতিতে ইন্টারনেট তারা দিতে পারত, তা প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়নি। এরপরে ২০০৭ সালে অ্যাস্ট্রা নিজেদের উপগ্রহ পাঠিয়ে ২০ মেগাবিটস/সেকেন্ড গতিতে পরিষেবা দেওয়া শুরু করলেও, সেই প্রযুক্তি অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক প্রমাণ হয়নি।

অবশেষে ২০১৮ সালে হিউজেসনেটের পাঠানো স্যাটেলাইট দিয়ে ব্রডব্যান্ড গতিতে এবং চলতি মাসেই ভায়াস্যাটের উপগ্রহ ১ জিবিপিএস গতিতে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া শুরু করে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, অ্যামাজন, ফেসবুক এবং স্পেসএক্সও এই প্রযুক্তি তৈরিতে নেমেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু তা এখনও লাভদায়ক প্রমাণ হয়নি। অতীতে এই উদ্দেশে নিজস্ব কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট পাঠিয়েও দেনায় ডুবে গিয়েছে ইরিডিয়াম, গ্লোবালস্টার এবং টেলেডেসিক। বর্তমানে যেখানে মোবাইল ব্যবসা থেকে বিশাল কিছু লাভ হচ্ছে না, সেখানে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটে এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তি আরও উন্নত করে তা সংস্থার পক্ষে দীর্ঘকালীন মেয়াদে লাভজনক হবে, এমন প্রমাণ না পেলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে নামা শক্ত অ্যাপলের।

এসএইচ-২১/২৮/১৯ (প্রযুক্তি ডেস্ক)