মহাকাশে গোসল-খাবার এত কঠিন!

পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে মহাকাশে গেলেই আপনি শূন্যে ভাসতে থাকবেন। জিরো গ্র্যাভিটি একেই বলে। সেজন্যই মহাকাশযান কিংবা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারিরা শূন্যে ভাসতে থাকেন। এই জিরো গ্র্যাভিটিতেও তারা কিভাবে নিজেদের দৈনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন? কিভাবে খাবার খান, গোসলই বা করেন কিভাবে? অনেকে আবার ব্যায়ামও করেন, কিন্তু ভাসতে ভাসতে কিভাবে এত কাজ করেন তারা?

পৃথিবীকেই এখনও পুরোপুরি দেখা হয়নি অথচ পৃথিবী ছাপিয়ে এখন পর্যটন সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাকাশে। এতদিন বেসরকারিভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বানানো মহাকাশযানে করে মহাকাশে গেছেন কোটিপতিরা। বুধবার প্রথমবারের মতো সাধারণ বৈমানিক নিয়ে স্পেস ফ্লাইট যাচ্ছে মহাকাশে। মহাকাশের জিরো গ্র্যাভিটিতে কিভাবে কাজ করা সম্ভব, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন নভোচারিরা।

স্পেস এক্সের রকেট ‘ডাবড ইন্সপিরেশন ফোর’ এ করে তিনদিনের জন্য মহাকাশে যাচ্ছেন কোটিপতি জ্যারেড ইসাকম্যান, ডাক্তার হ্যালে আর্কেনাক্স, প্রকৌশলী ক্রিস সেমব্রস্কি আর বিজ্ঞানী সিয়ান প্রোক্টোর।

তাদের সুবিধার্থে একটি ভিডিও তৈরি করেছেন নাসার নভোচারি মেগান ম্যাকার্থার। পর্যটকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পৃথিবীতে সব কাজ যতটা সহজ, মহাকাশে ততটাই চ্যালেঞ্জিং।

তিনি বলেন, স্পেস সিভিলাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ। ভবিষ্যতে বেসরকারি উদ্যোগে বেশি মানুষ মহাকাশে যাবেন। যেটা খুবই চমৎকার অভিজ্ঞতা। কিন্তু পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানোর মতো স্পেস ট্যুরজিম মজার কিছু না, বরং সাধারণ মানুষের জন্য এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। ইন্সপিরেশন ফোর ফ্লাইটের নভোচারিরা একবারও কোনো পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে অংশ নিচ্ছেন না। অথচ স্পেস এক্সের মিশনের আগে নাসার নভোচারিরা পরীক্ষামূলকভাবে রকেটে উঠেছিল।

মেগান ম্যাকার্থার বলেন, পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে না, স্পেস স্টেশনে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তিনি। এরপর ঘষে চিরুনি দিয়ে চুল আচড়িয়ে নেন তিনি। পানি ব্যবহার করলে সেটা স্পেসশিপ ভেসে বেড়াবে।

মেগান বলেন, খাবার খাওয়ার সময় এর মধ্যে যদি তরল জাতীয় কিছু থাকে, তাহলে সব আপনার মুখে যাবে না, কিছু খাবার ভাসতে থাকবে স্টেশনের মধ্যে। অন্য নভোচারিদের কাছে যাবে ভাসতে ভাসতে। কিছুদিন পর আবার সেই খাবার খুঁজেও পেতে পারেন। পৃথিবীর মতো এখানে সহজেই সবকিছু করা যায় না, প্রকৃতি এখানে পুরোই আলাদা, অভ্যস্ত হতে সময় লাগে।

নাসার নভোচারি মার্ক ভান্দে হেই বলেন, হঠাৎই মনে হতে পারে রোলার কোস্টারে বসে আছেন, যেটা শুধু উপরের দিকে উঠবে, উঠে একসময় থেমে যাবে। কিন্তু পরে গিয়ে মনে হবে বিদ্যুৎগতিতে এই উড্ডয়ন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে। ধীরে ধীরে পৃথিবীকে মিস করা শুরু করলেও তার থেকে যেতে হয় এখানেই। মার্ক বলেন, আপনার টাকা থাকলে তবেই আপনি মহাকাশে যেতে পারবেন।

স্পেস ট্যুরিজম নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই, অনেকেই আগেভাগে কাটছেন মহাকাশযানের সিটের টিকিট। ভার্জিন গ্যালাক্টিকের ৬০০ সিট বুকিং দেওয়া শেষ, প্রতি সিট বিক্রি হচ্ছে আড়াই লাখ ডলারে। ভবিষ্যতে যেটার দাম হবে ৪ লাখ ডলার। মহাকাশে যারা ভ্রমণে যাবেন, তাদের সেখানে বেশিদিন থাকার বা গবেষণা করার সুযোগ নেই। কিন্তু মহাকাশের দেখা তারা পাবেন নিশ্চিত।

এর আগে ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড রকেটে করে মহাকাশে গেছেন কোটিপতি জেফ বেজস। উঠেছেন পৃথিবী থেকে ১০৭ কিলোমিটার উপরে। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভার্জিন গ্যালাক্টিকের রকেটে করে মহাকাশে গেছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন।

এসএইচ-১৭/১৫/২১ (প্রযুক্তি ডেস্ক)