ফেসবুকে গুজব ছড়ালেই শাস্তি

হানিফ সংকেত আর বেঁচে নেই! চলে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা নায়ক ফারুক! কিংবা আগামী ১০-১৫ দিন কেউ বৃষ্টিতে ভিজবেন না। কারণ, দেশে অ্যাসিড বৃষ্টি হবে! এমন অসংখ্য গুজবের কারখানায় পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। খ্যাতিমান তারকা থেকে পাবলিক ফিগার–কেউ-ই রেহাই পাচ্ছেন না এমন বিভ্রান্তি থেকে। ফলে ব্যক্তি, পরিবার কিংবা প্রতিষ্ঠান সবাইকেই হতে হচ্ছে বিব্রত। অনেকেই হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

মূলত ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্যান্য মাধ্যমের পোস্টে ভিউ বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয় এসব গুজব। সেসব পোস্ট অনেকেই জেনে বা না-জেনে শেয়ার করছেন, যা একসময় ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব কারণে একদিকে যেমন অনিরাপদ হয়ে উঠছে এ মাধ্যমটি, ঠিক তেমনি জ্ঞাত বা অজ্ঞাতে অনেকেই করছেন আইনের লঙ্ঘন। জড়িয়ে পড়ছেন সাইবার অপরাধে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। একটু ভুলের কারণে আপনি আসামি হতে পারেন সাইবার অপরাধের। সাইবার অপরাধীর বিচারে দেশে কঠিন আইন রয়েছে। জেনে বা না-জেনে যদি কেউ ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো অপরাধ করেন, তাহলে এর জন্য ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি এবং রয়েছে মামলার বিধানও। মূলত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন অনুসরণ করা হয় সাইবার ক্রাইমের সম্পর্কিত অপরাধের জন্য।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য বা গুজবের বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। অনলাইনে গুজব এখন একটা প্রতিদিনকার বিষয় হয়ে উঠেছে। মিথ্যা তথ্য ছড়ালে প্রথমে তিন বছরের জেলের বিধান রয়েছে। এরপর আবারও আইন ভঙ্গ করলে পর্যায়ক্রমে শাস্তির বিধানও বাড়বে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এ আইন প্রয়োগের পক্ষে নই।’

ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক, জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা বা যৌনতা নিয়ে করা যেকোনো অমূলক পোস্টই সাইবার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই কেউ গুজব বা এ ধরনের পোস্ট ছড়ালে যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অপরাধীকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। আর আদালতের রায়ে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো অপরাধীদের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এখন অনেকটাই শক্তিশালী গণমাধ্যম। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি অনেকেই করছেন এর অপব্যবহার। তাই ভুয়া তথ্য গুজব প্রতিরোধে আইন ও প্রযুক্তির প্রয়োগের চেয়েও বিশ্লেষকরা বেশি জোর দিতে বলছেন সামাজিক সচেতনতার দিকে।

এ প্রসঙ্গে প্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, তিনটি প্রক্রিয়ায় চাইলে গুজব প্রতিরোধ করা যায়। একটি হলো, ফ্যাক্ট চেকার টিম। যাদের কাজই হলো গুজব প্রতিরোধ করা। গুজব শনাক্ত করা। তাদের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এরপর রয়েছে দেশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তাদের আরও বেশি তৎপর হতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা আনতে হবে। আর শেষটি হলো, চাইলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই রিপোর্ট করে গুজব প্রতিহত করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা আছে। কিছু পেলাম আর পোস্ট করে ছড়িয়ে দিলাম–এই মনোভাব পরিহার করতে হবে। সত্য বা মিথ্যা যাচাই করতে হবে। আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

দিন দিন বেড়েই চলছে ফেসবুক বা অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা। সে সুযোগের অসৎ ব্যবহারেও মনোযোগী হচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু মানুষ। সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচতে হলে তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

এসএইচ-১৬/১১/২২ (প্রযুক্তি ডেস্ক)