বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫ মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোন নামের জাদুর বাক্সটি ছাড়া জীবন এখন প্রায় অচল। যোগাযোগ রক্ষার্থে কিংবা বিনোদনের মধ্যেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ নেই। মোবাইল এখন আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অ্যাপলের মতো ব্যয়বহুল একটি ব্র্যান্ড প্রায় প্রতি বছরই অতি উচ্চমূল্যের এক বা একাধিক মোবাইল ফোন বাজারে আনছে। মোবাইল কোনো মৌলিক পণ্য নয়, এটা একটা বিলাসী পণ্য। যার পেছনে লাখ টাকা খরচের সুযোগ সব মানুষের থাকে না। অ্যাপলের সবশেষ ফোনটির বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি। অধিকাংশ মানুষেরই অ্যাপল নির্মিত আইফোন কেনার সামর্থ্য নেই।

তবুও, বিশ্বব্যাপী ধনিক শ্রেণির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ার কল্যাণে এই মোবাইল ব্র্যান্ডটি পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠানে। এই দেড় লাখ টাকার মোবাইল কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোবাইল না। কিংবা আজকের তালিকার ধারেকাছেও নেই এই মোবাইল। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মোবাইলটির দাম একটা দেশের ২০২০ সালের জিডিপির সমান! আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫টি মোবাইল নিয়ে আলোচনা করা হবে।

তালিকার ৫ নাম্বারে থাকা অ্যাপল ব্রান্ডের এই ফোনটি একটি কাস্টমাইজড মোবাইল। বিশ্বব্যাপী সেলেব্রিটি থেকে শুরু করে ধনিক শ্রেণির জন্যে বিভিন্ন পণ্য নকশা করা ব্রিটিশ ডিজাইনার স্টুয়ার্ট হিউজেস এই মোবাইলটির নকশা করেন। প্লাটিনামের হাতে তৈরি ফ্রেমে রয়েছে মোট ৯৭ দশমিক ৫ ক্যারেটের নিখুঁত ৭৫টি ডায়মন্ড।

এ ছাড়া এই মোবাইলে রয়েছে ৪টি গোলাপি আয়তাকার বিগেত্তে বা বিশেষ ডায়মন্ড। যেগুলোর প্রতিটির ওজন ২ দশমিক ৫ ক্যারেট। গোলাপি গোল্ডেন অ্যাপল লোগোসহ পেছনের অংশটিতে আছে ১৮ ক্যারেটের ১১২ গ্রাম গোলাপি গোল্ড ও ৫৩টি ডায়মন্ড।

এই মোবাইলটিতে আছে হাতে তৈরি একটি ওয়ালেট, যা আসল উটপাখির পা দিয়ে তৈরি। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া ৩২ জিবির এই মোবাইলটির তৎকালীন দাম ছিল ২৫ হাজার টাকা কম। কিন্তু, কাস্টমাইজড এই মোবাইলটি কিনতে খরচ করতে হবে ১৯ লাখ ৩০ হাজার পাউন্ড বা সাড়ে ২১ কোটি টাকার বেশি।

২০১০ সালে অ্যাপলের জনপ্রিয় সিরিজ ফোর এর নকশা করা এই মোবাইলটি বাজারে আসে। স্টুয়ার্ট এই ফোনটির ফ্রেম হাতে তৈরি করেন এবং এতে তিনি ব্যবহার করেন মোট ১০০ ক্যারেটের প্রায় ৫০০টি নিখুঁত রোজ ডায়মন্ড। আগের মোবাইলটির মতো এটার পেছনের অংশেও রোজ গোল্ডের অ্যাপল লোগো ও ৫৩টি ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রধান ন্যাভিগেশন অংশে ৭ দশমিক ৪ ক্যারেটের সিঙ্গেল কাট পিংক ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়েছে যাতে অন্তর্ভুক্ত আছে ৮ ক্যারেটের একটি বিরল সিঙ্গেল কাট নিখুঁত ডায়মন্ড। যা পিংক ডায়মন্ডকে প্রতিস্থাপন করতে পারে। ৩২ জিবির এই লিমিটেড এডিশনের হ্যান্ডসেটটি এখন পর্যন্ত ২টা বানানো হয়েছে। যার একেকটির দাম রাখা হয়েছে ৫০ লাখ পাউন্ড বা প্রায় ৫৬ কোটি টাকা।

বিশেষ এই মোবাইলটিও নকশা করেছে লিভারপুলের স্টুয়ার্ট হিউজেস। মোবাইলটির ফ্রেমে ব্যবহৃত হয়েছে মোট ১০০ ক্যারেটের বেশি ৫০০টি আলাদা নিখুঁত ডায়মন্ড। পেছনের অংশটি পুরোপুরি ২৪ ক্যারেটের গোল্ডে নির্মিত। যেখানে ২৪ ক্যারেটের গোল্ডে অ্যাপল লোগো ও ৫৩টি ডায়মন্ড আছে। প্রধান নেভিগেশন অংশে আছে ৮ দশমিক ৬ ক্যারেটের সিঙ্গেল কাট ডায়মন্ডসহ ২৪ ক্যারেটের নিখুঁত গোল্ড।

চেস্টের অংশটি আসল টি-রেকস ডাইনোসরের হাড়ের পালিশ করা টুকরো এবং বিরল পাথর যেমন ওপাল, পিটারসাইট, শ্যারোইট, রুটাইল কোয়ার্টজ, স্টার সানস্টোনসহ শক্ত প্লাটিনাম থেকে তৈরি। ৬৪ জিবির এই লিমিটেড এডিশনটিও এখন পর্যন্ত ২টা নির্মাণ করা হয়েছে। যার একেকটির বাজার মূল্য ৬০ লাখ পাউন্ড বা প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।

অ্যাপলের জনপ্রিয় এই মডেলটিতে ২৪ ক্যারেটের ১৩৫ গ্রাম সলিড গোল্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৯ সপ্তাহ। সিএনএন-এর তথ্যসূত্রে জানা যায়, হংকং-এর এক ব্যবসায়ী তার পারিবারিক সম্পদ ব্লাক ডায়মন্ডটি দিয়ে নকশা করার জন্য স্টুয়ার্ট হিউজেসকে নিয়োগ দেন।

এই ফোনটিতে ৬০০টি নিখুঁত হোয়াইট ডায়মন্ড ব্যবহার করে ফ্রেমটি হাতে তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পেছনের অংশে সলিড গোল্ড দিয়ে মোড়া হয়েছে এবং এর সঙ্গে ৫৩টি ডায়মন্ড ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে অ্যাপলের আইকনিক লোগো। ২৬ ক্যারেটের বিরল নিখুঁত ব্লাক ডায়মন্ডটি ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইলটির হোম বাটনে।

এ ছাড়া এই ফোনটিতে নীলকান্তমণিসহ বহু মূল্যবান ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে। মোবাইল ফোনটির দাম পড়েছে ১৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বা ১৩৫ কোটি টাকার বেশি।

তালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারী মোবাইলটি নির্মাণ করেছে মার্কিন বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন। বিশেষ এই মোবাইলটি গোল্ড ও প্লাটিনামে মোড়ানো। তবে, এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হচ্ছে এর পেছনে বসানো পিংক ডায়মন্ডটি। ১ জিবি র‍্যাম, ১৬ জিবি মেমরি, ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার একটি ফোনটি স্মার্টফোন জগতে খুবই সাধারণ মানের একটি ফোন।

গোল্ড, প্লাটিনাম ও ডায়মন্ডের মিশেলে বিশেষ নকশায় তৈরি এই ফোনটির আকাশচুম্বী মূল্যের পেছনে এতে ব্যবহৃত মূল্যবান ধাতুগুলোর অবদান রয়েছে। একই মডেলের অরেঞ্জ ডায়মন্ড ভার্সনের দাম ৪২ দশমিক ৫ মিলিয়ন এবং ব্লু ভার্সনটির দাম ৩২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার।

বিশেষ এই পিংক ডায়মন্ড মডেলটি আসলে কে ব্যবহার করেন তার নিশ্চিত কোনো তথ্যসূত্র পাওয়া যায়নি। এই ধরনের তথ্যগুলো খুব কৌশলে লুকিয়ে রাখা হয়। তাই এমন বিলাসবহুল পণ্যের ব্যবহারকারীদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে, ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নিতা আম্বানি এই ফ্যালকন সুপারনোভা আইফোন-৬ পিংক ডায়মন্ড মোবাইলটির মালিক বলে দাবি করে আসছে দ্য ইকোনোমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এবং দ্য স্টেটসম্যানসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম।

এই মোবাইলটি দাম ৪৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা। যা একটি দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র টুভালুর জিডিপির আকার ছিল ৪৮ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার।

এসএইচ-২০/০৩/২২ (প্রযুক্তি ডেস্ক)