টুইটার বন্ধ হলে অনেক কিছু হারাবেন সাংবাদিকরা

জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম টুইটার বন্ধ হলে সাংবাদিকরা অনেক কিছুই হারাবেন। কেননা গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংবাদের উৎস টুইটার। এতে অনেক বিকৃত বা ভুয়া তথ্য থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তির সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায় এতে।  ।

বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক গত মাসে টুইটারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী বরখাস্ত করা শুরু করে। এরপর নানা কারণে আলোচনায় উঠে আসে টুইটার। অনেকে টুইটার বন্ধ হওয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে সাংবাদিকরা যারা কিনা সরাসরি এর ওপর নির্ভরশীল।

এরপরও অনেক সাংবাদিক আশা করছেন টুইটার বন্ধ হবে না। কেননা তারা এটির ওপর নির্ভরশীল। বন্ধ হলে বেকায়দায় পড়বেন বেশিরভাগ সাংবাদিক। মূলত অফুরন্ত উৎস এবং তাৎক্ষণিক আপডেটের জন্য সাংবাদিকরা টুইটার ব্যবহার করে থাকেন। রাজনৈতিক ও বিনোদনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাৎক্ষণিভাবে পাওয়া যায় এতে।

রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের নিক নিউম্যান বলেন, বেশিরভাগ সাংবাদিক টুইটার ছাড়তে পারবে না। এটি আসলে তাদের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

নিউম্যান ২০০৮-২০০৯ সালের দিকে বিবিসিতে কাজ করতেন, যখন টুইটার নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার একটি নতুন উপায় হিসেবে সামনে আসে টুইটার। ফলে অনেকেই এই সামাজিক মাধ্যমকে বেছে নেয় যোগাযোগের জন্য। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সেলিব্রেটি ক্রমেই যুক্ত হয় এই প্লাটফর্মটির সঙ্গে।

ক্রমেই সংবাদমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হয়ে উঠে টুইটার। টুইটার ব্যবহার করে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সেলিব্রেটিরা তাদের অবস্থান ও মতামত দেয়া শুরু করে। অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিতে তারা সন্ত্রাসী হামলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চলমান কোনো ঘটনার তাৎক্ষণিক তথ্য দিতে শুরু করে। ফলে শিগগিরই নিউজরুমের সংবাদের নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠে টুইটার।

তবে সাংবাদিকরা বুঝতে পেরেছিলেন তাদের সর্বদা নিউজ ব্রেক করা উচিত না এবং তাদের ভূমিকা ভিন্ন হতে চলেছে। সংবাদটিকে প্রাসঙ্গিককরণ এবং যাচাই করার বিষয়ে তারা আরও বেশি সচেষ্ট হয়ে ওঠেন, বলেন নিউম্যান।

সংবাদের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়া সত্ত্বেও এর অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অনেক সময় অনেক বিকৃত ও ভুয়া তথ্য এতে ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিকরা অনেক সময় তথ্য যাচাই না করে তা প্রকাশ করে দেন; ফলে অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

কলম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউ-এর ডিজিটাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ ইনগ্রাম বলেন, শুধুমাত্র টুইটারে মনোযোগ দেয়া সাংবাদিকসহ অনেক লোক যেভাবে বিশ্বকে দেখেন তা বিকৃত করার প্রবণতা রাখে। কেননা, দ্রুত সংবাদ প্রকাশের জন্য অনেক সাংবাদিক টুইটার থেকে সরাসরি সংবাদ দিয়ে দেন। এতে অনেক সময় বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সাংবাদিকরা বিকৃতি মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে। এরপরও সাংবাদিকরা ‘বিভ্রান্তি এবং হয়রানির একটি বিশাল জোয়ার’ এর শিকার হয়েছেন।

২০১৯ সালে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের কলামনিস্ট ফরহাদ মানজো এ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, আমেরিকান সাংবাদিকতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ক্ষুদেব্লগ টুইটার। সাংবাদিকতাকে উপজাতীয় গীতিনাটকের আবেগের জোয়ারের জায়গায় টেনে নিয়ে গেছে। যা হাঙ্গামা ও রোবটচালিত চিন্তাভাবনার অনুকূলে চলে গেছে। এমনকি সবচেয়ে সরব কণ্ঠগুলোকে পুরস্কৃত করে উদার ও অ-অভিজাত জনসংখ্যার অধিকাংশের কাছে পৌঁছে গেছে এই প্ল্যাটফর্ম।

ইলন মাস্কের নানামুখী সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই এর টিকে থাকা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। তবে অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন এটি বন্ধ হবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাটলার ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী স্টিফেন বার্নার্ড বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যে টুইটার শিগগিরই যে কোনও সময় বন্ধ হয়ে যাবে।’ তবে সাংবাদিকদের এর নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কার উপযুক্ত কারণ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এসএইচ-২১/২৪/২২ (প্রযুক্তি ডেস্ক)