রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিপিএলসি) বৃহস্পতিবার রাতে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ প্রায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এতে দেশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি অনেকখানি কমে গেছে।
আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হতবাক হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। এ সেবার মান বজায় রাখতে তারা এ মুহূর্তে এক সংকটের মুখে পড়েছে।
বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরদের কাছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। বকেয়া পরিশোধ না করায় ৫০০ জিবিপিএসের (গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ড) বেশি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশে একটি জটিল নেটওয়ার্কিং পদ্ধতিতে গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছানো হয়। প্রাথমিকভাবে, সাবমেরিন ক্যাবল বা ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে দেশে ব্যান্ডউইথ প্রবেশ করে।
এরপর, এটি দেশব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক অপারেটরদের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটর এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিতরণ করা হয়।
সবশেষে, মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড অপারেটররা গ্রাহকদের কাছে ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
মোবাইল ইন্টারনেট এবং ব্রডব্যান্ড অপারেটররা বলছেন, সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি ব্যান্ডউইথ কমানোর বিষয়টি তাদের আগে জানায়নি। এখন ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নের জন্য গ্রাহকরা তাদের দায়ী করছেন।
যোগাযোগ করা হলে আইআইজি ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ জুনাইদ বলেন, ‘যদি বকেয়া পরিশোধ না করা হয়, তাহলে নির্দিষ্ট আইআইজিকে ব্লক করে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, আগাম নোটিশ না দিয়েই এটা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এবারই প্রথম সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ব্যাপকভাবে আইআইজিগুলোকে ব্লক করে দিয়েছে। আমরা পেমেন্ট না পেলে আমরাও আমাদের গ্রাহকদের ব্লক করি। কিন্তু আমরা তাদের আগেই জানিয়ে দেই যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেমেন্ট না পেলে তাদের ব্লক করা হবে।’
‘গতরাত ১২টায় ব্লক করা হয় এবং শুক্রবার। সুতরাং, ছুটির দিনে কোম্পানিগুলো কীভাবে বকেয়া পরিশোধ করবে,’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সতর্ক করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ইন্টারনেট ব্যবহার হয় সন্ধ্যা ৭টার পর। অর্থাৎ, রাতে গ্রাহকরা ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হবেন।’
সাবমেরিন কেবল কোম্পানির এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, তারা বোর্ডের নির্দেশে আইআইজিগুলোকে ব্লক করেছে।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আইআইজির ইন্টারনেট ব্যবহার অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ সীমিত করা হয়েছে। যাদের বেশি বকেয়া, তাদের বেশি সীমিত করা হয়েছে।
মির্জা কামাল আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা টেকনোলজির ব্যান্ডউইথ বেশি সীমিত করা হয়েছে। কারণ তাদের ১৯ মাসের বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি।’
বিভিন্ন সময়ে বকেয়া পরিশোধের জন্য আইআইজিগুলোকে চিঠি দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কিছু আইআইজি আমাদের জানিয়েছে যে তারা আমাদের চেক দেবে, যা রবিবার ক্যাশ করা যেতে পারে। আমরা সেগুলোকে আনব্লক করতে কাজ করছি। তবে এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রয়োজন।’
যোগাযোগ করা হলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্যান্ডউইথ সীমিত করায় তাদের গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদি বিএসসিপিএলসি আইআইজি ব্লকেজের আগে নোটিশ না দেয়, তাহলে আমরা বলব এটি আচমকা সিদ্ধান্ত এবং এ ধরনের সিদ্ধান্ত নির্বাচনের আগে সরকারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
দেশে মোট ব্যান্ডউইথের ব্যবহারের পরিমাণ এখন প্রায় ৫ হাজার জিবিপিএসে দাঁড়িয়েছে এবং এর অর্ধেকের বেশি আসে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে।
বাকি ব্যান্ডউইথ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিএসসিপিএলসি সরবরাহ করে থাকে।
এসএইচ-০৩/২৪/২৩ (প্রযুক্তি ডেস্ক, সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার)