জয়ের ধারায় ফিরতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশ

আকাশ কুসুম কল্পনা নয়, নিজেদের শক্তিসামর্থ্য আর গত কয়েক বছরের পারফরমেন্স এবং প্রাপ্তি-অর্জনের আলোকেই এবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যাশায় যুক্তরাজ্য এসেছে মাশরাফির দল।

সে প্রত্যাশা পূরণের পথে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল দারুণ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির সংযোগ ঘটানোর পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছিল মাশরাফির দল।

মনে হচ্ছিল এবার বুঝি সেমিফাইনালের স্বপ্নালোকে পৌঁছে যাবে টাইগাররা। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে বিশেষ করে নিউজল্যান্ডের সাথে লড়াই করে হার এবং ইংল্যান্ডের কাছে একতরফাভাবে হারে পথচলা দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে না গেলেও বদলেছে খানিকটা।

টাইগারদের চলার পথ এখন আর ঠিক তত মসৃণ নেই। একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এখন আর হিসেব তত জটিল নেই। ঘোর প্যাচও নেই তেমন। এখন কথা একটাই- শেষ চারে থাকতে চাইলে হলে যত বেশি সম্ভব, তত বেশি ম্যাচ জিততে হবে।

এখন খেলা আছে ছয়টি, তার অন্তত চারটিতে চাই জয়। সেই ছয় ম্যাচের যে চারটিতে জয়ের টার্গেট করার কথা টাইগারদের, তার মধ্যে শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তান আছে অবশ্যই। তারপর পাকিস্তান, ওয়েষ্ট ইন্ডিজও নিশ্চয়ই থাকবে হিসেবে।

কাজেই সেই অনেক আশা-প্রত্যাশার আর চাওয়ার চার জয়ের প্রথম জয়টি চাই মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ভক্ত, সমর্থকরাও সেভাবে চিন্তা করছেন। হিসেবটাও তেমনি। আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার সাথে জয় ধরেই আগাতে হবে। এই দুই ম্যাচের একটি হেরে গেলে বা এই দুই ম্যাচের কোনটা বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেলে সর্বনাশ। তখন সেমিতে খেলার সম্ভাবনা যাবে কমে।

ভক্ত ও সমর্থক এবং সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগিদের এই অনুভব-উপলব্ধিটা আছে টাইগারদেরও। তারা জানেন, বোঝেন পরিস্থিতি কি? কি করলে, কি ঘটলে, কী হবে? সব তারাও জানেন শ্রীলঙ্কাকে হারানোটা কত জরুরী।

কোন কারণে মানে বৃষ্টিতে এ ম্যাচ পন্ড হয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি হলেও যে ক্ষতি হবে সেটাও খুব ভালই জানেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাই প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশ অধিনায়কের প্রথম কথা, ‘আবহাওয়ার পূর্ভাবাস শুনেছি। তবে আশা করছি যাতে পুরো ম্যচ হয়। বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে না গেলেই ভাল। আর বৃষ্টি বিঘ্নিত কর্তিত ওভারের ম্যাচও চাই না। পুরো ৫০ ওভারের খেলা হোক সেটাই চাই।’

দেশে কোটি বাংলাদেশ ভক্ত এখন উন্মুখ হয়ে আছেন, মঙ্গলবার ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার সাথে খেলতে নামার আগে আসলে কি ভাবছে বাংলাদেশ? টাইগারদের অনুভব-উপলব্ধি কি? ২৪ ঘন্টা আগে আজ দুপুরে প্রেস কনফারেন্সে এসে অধিনায়ক মাশরাফি অনেক কথার ভিড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলে তিনি এবং তার দল কি ভাবছে?

পরপর দুই ম্যাচে হেরেছে দল। কিছু ছোটখাটো ইনজুরি আছে। শারীরিকভাবে প্র্যাকটিসে উপস্থিত থাকলেও আজ সাকিব ব্যাটিং ও বোলিং করেননি। সব মিলে দলের সর্বশেষ অবস্থা কি? ক্রিকেটাররা মানসিক, শারীরিকভাবে কতটা সুস্থ্য ও চাঙা আছেন? তাও জানতে চাওয়া হলো?

মাশরাফির আত্মবিশ্বাসী জবাব, ‘দল ভালই আছে। সবাই সুস্থ্য আছে। কিছু ছোটখাটো ইনজুরি তো থাকেই। আার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা এমনই। এখানে ছোটখাটো ইনজুরি থাকেই। তা নিয়ে খেলতেও হয়। আমাদেরও আছে। তা নিয়েই খেলতে হচ্ছে। আশা করি আগামীকালকের ম্যাচের আগে সবাই সুস্থ্য হয়ে মাঠে নামবে।’

আর মনের দিক থেকে কেমন আছে টিম বাংলাদেশ? শ্রীলঙ্কার সাথে জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? টাইগার অধিনায়কের জবাব, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দূর্দান্ত সূচনার পর নিউজিল্যান্ডের সাথে প্রায় সমানতালে লড়ে হেরে গেছি। আর ইংল্যান্ডের সাথে আসলে ভাল খেলিনি। তাই ছেলেরা আবার ভাল খেলে জয়ের ধারায় ফিরতে মুখিয়ে আছে।’

এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় খুব জরুরী। হারলে বা বৃষ্টিতে খেলা পন্ড হয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি হলে হিসেব আরও কঠিন হয়ে যাবে। এটা কি কোন বাড়তি চাপ? মাশরাফির জবাব, ‘বিশ্বকাপে প্রেশার থাকবেই। সব ম্যাচেই চাপ আছে। প্রেশার নেই, তা বলবো না। তবে এই চাপ নিয়েই ভাল খেলতে হবে। প্রথম বল থেকেই জয়ের জন্য খেলতে হবে। আমরা জিতবোই এমন নিশ্চয়তা দেয়া ঠিক না। আমরা জিতবোই- এমন কথা নিশ্চিত করে বলতেও পারবো না। তবে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো- এমনটা বলতে পারি।’

ব্রিস্টলের এই মাঠে পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বৃষ্টির কারণে হয়নি। কাল বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচও যদি বৃষ্টির বৈরী আচরণে না হয়, তাহলে কেমন হবে? কেমন লাগবে?

মাশরাফি বোঝানোর চেষ্টা করলেন, নিউজিল্যান্ডের সাথে জিতে থাকলে হয়ত পয়েন্ট ভাগাভাগিতেও সমস্যা হতো না। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আসলে আগের দুই ম্যাচের অন্তত একটি জিতে থাকলে উত্তরের ভাষা হতো ভিন্ন। কিন্তু তা তো পারিনি। এখন খেলা না হলে একটু সমস্যাই। আমাদের জয় খুব জরুরী। ক্রিকেটারদের ভাল খেলে জয়ের পথে ফেরার ক্ষুধা আছে।’

এসএইচ-১২/১০/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)