বোলার থেকে ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক

শোয়েব মালিক। জাতীয় দলে অভিষেক একজন বোলার হিসেবে। এরপর ধীরে ধীরে পুরো দস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা। শেষ দিকে আবার ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে ক্যারিয়ারের ইতি টানা। সংক্ষেপে শোয়েব মালিকের ক্যারিয়ারের চিত্রটা ছিল এমনই।

শারজায় সাকলায়েন মোশতাকের অনুপস্থিতিতে ১৯৯৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিষেক ১৭ বছর বয়সী শোয়েব মালিকের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো গায়ে চাপিয়েছেন পাকিস্তানের জার্সি। পুরোদস্তুর বোলার হিসেবে ওই টুর্নামেন্টে খেলেছেন। ব্যাট করেছেন ১০ নম্বরে।

প্রথম দুই বছর জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মাঝেই ছিলেন। স্পিনারদের কেউ ইনজুরি বা ছুটিতে থাকলে ডাক পরতো মালিকের। এসময় টুক-টাক ব্যাটিং করতে পারায় ধীর ধীরে উন্নতি হতে থাকে ব্যাটিং অর্ডারে। ২০০২ সালের শুরুতে শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচে তাকে চারে নামানো হয় ব্যাট করতে। নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকান মালিক। অপরাজিত ১১১ রানের ইনিংস খেলে হন ম্যাচ সেরা।

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেতে পেতে কিছুদিন পর হয়ে ওঠেন ওপেনারও। এক মাস পরেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে লাহোরে এক ওয়ানডেতে ব্যাটিং ওপেন করতে নামানো হয় শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে। সেদিনও সেঞ্চুরি পেয়ে যান শোয়েব। এরপর ১৫টি ম্যাচ খেলেছেন ওপেনার হিসেবে।

টেস্টে অভিষেক হয় ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই ছিল তার বেশি দাপট। ক্রমশই পাকিস্তান ব্যাটিং অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন তিনি।

ওপেনিংয়ে কিছুদিন খেলার পর আবার থিতু হয়েছে মিডল অর্ডারে। তিন, চার ও পাঁচ নম্বরে পাকিস্তান ব্যাটিং অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়েছিলেন শোয়েব মালিক। তিন ও চার নম্বরে পেয়েছেন তিনটি করে ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তবে সবচেয়ে বেশি ৭৯ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ৫ নম্বরে নেমে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে শোয়েব মালিকের একটি অনন্য রেকর্ড রয়েছে সেটি হলো এক থেকে ১০ নম্বর পজিশনের সবগুলোতেই ব্যাটিং করেছেন তিনি (শুধু ১১ নম্বরে কখনো নামা হয়নি)। টেস্টে ব্যাটিং করেছেন ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত পজিশনে। টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন ১ থেকে ৮ নম্বর পজিশনে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ওয়ানডেত ১০টি পজিশনে ব্যাটিং করার রেকর্ড রয়েছে আরও কয়েকজনের।
পুরো দস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার কারণে এক সময় বোলিংয়ের ধার কমে যেতে থাকে শোয়েব মালিকের। তবে অলরাউন্ডার তকমা কখনো যায়নি। শেষ দিকে এসে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হয়ে ওঠেন।

ক্যারিয়ারের শেষ দিকে অবশ্য বোলিং খুব কম করতেন। তবে এসময় ব্যাট হাতে বিধ্বংসী হয়ে ওঠার ক্ষমতা বেড়ে যায় তার। যে কোন সময় ব্যাট হাতে ঝড় তোলার ক্ষমতা ছিল শোয়েব মালিকের। যে কারণে বয়স হয়ে গেলেও পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত আছেন।

পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১টি ওয়ানডেতে, ২০ টি-টোয়েন্টি ও ৩ টেস্টে। এর মধ্যে ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান তার নেতৃত্বে। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ফাইনালে উঠেছিল মালিকের নেতৃত্বে।

সব মিলে ২৮৭ ওয়ানডেতে ৯ হাজার ১৯৯ রানের পাশাপাশি ১৫৮ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেও আগামী ২০২০টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত শোয়েব মালিকেকে দেখা যাবে পাকিস্তানের জার্সিতে।

এসএইচ-০৬/০৭/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)