আইসিসির দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ!

ইংল্যান্ডে চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল অনেক। বিশ্বকাপ শেষে সে প্রত্যাশার সঙ্গে মিলেনি প্রাপ্তির হিসাব। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের অবস্থানটাও অষ্টম; কিন্তু বিশ্বকাপের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত টিকেছিল টাইগারদের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। তাতেই বোঝা যায়, পয়েন্ট টেবিলে অষ্টম স্থানে থাকলেও ততটাও খারাপ খেলেনি বাংলাদেশ।

শ্রীলংকার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচ ও নিউজিল্যান্ডের কাছে অল্পের জন্য হেরে যাওয়া- এসব না হলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপটা অন্য রকম হতেও পারতো। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সফলতা, ব্যর্থতা, তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ও উন্নতির জায়গাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে আইসিসি।

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো দিক নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। গত কয়েক বছর ধরেই দলের অন্যতম সেরা এই পারফর্মার চলতি বিশ্বকাপে নিজেকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন উচ্চতায়। পুরো বিশ্বকাপেই ছিলেন অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক। ৮ ইনিংসের ৭ টিতেই পেয়েছেন ফিফটির দেখা। যে ম্যাচে ফিফটির পাননি সেটিতেও করেছেন ৪১ রান। করেছেন ৬০৬।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও সফল ছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ৮ ম্যাচে পেয়েছেন ১১ উইকেট। দল গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও চলতি বিশ্বকাপে এখনও ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার দৌড়ে টিকে আছেন তিনি।

সাকিবের পাশাপাশি ব্যাট হাতে টাইগারদের হয়ে এই বিশ্বকাপে যিনি ঔজ্জল্যে ছড়িয়েছেন তিনি- মুশফিকুর রহীম। নিজেকে রঙিন পোশাকের ব্যাটসম্যান হিসেবে চলতি বিশ্বকাপে নতুন করে চিনিয়েছেন এই উইকেরক্ষক ব্যাটসম্যান। ৮ ম্যাচে ৫০ এর বেশি গড়ে করেছেন ৩৬৭ রান। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিটন দাসের করা অপরাজিত ৯৪ রানও স্মৃতিতে জ্বলজ্বলে থাকবে অনেকদিন।

বল হাতে এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স কেবল মোস্তাফিজুর রহমানের। সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। তবে তিনি টানা দুই ম্যাচে ৫টি করে উইকেট নিয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

৮ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে আসর শেষ করেছেন উইকেট শিকারীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থেকে। এছাড়া ১৩ উইকেট পেয়েছেন তরুণ সাইফুদ্দিন। পুরো আসরজুড়ে বেশ ইকোনোমিক্যাল ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজও।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শীর্ষ চারজন রান সংগ্রাহক যথাক্রমে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যাদের মধ্যে প্রথম তিনজনের বয়সই ৩২ ছাড়িয়েছে। আগামী বিশ্বকাপে তারা খেলতে পারবেন কি না সন্দেহ। তামিমের বয়সটাও এরই মধ্যে পৌঁছেছে ৩০-এ। ব্যাটিংয়ে নতুনদের দায়িত্ব নিতে না পারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শঙ্কার।

সবসময়ই জাদুকরী ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচিত মাশরাফি বিন মর্তুজাও এবার কাটিয়েছেন বিমর্ষ একটি বিশ্বকাপ। ৮ ম্যাচে ৩৬১ রান দিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। তার অবসরও আসন্ন। যা বাংলাদশের জন্য বেশ উদ্বিগ্নের ব্যাপার। ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি কোচিংয়েও বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে আরো উন্নতি করার।

মুস্তাফিজকে পুরোপুরি নতুন তরুণ তারকা বলা না গেলেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই দেশের পক্ষে এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়ায় তাকেই রাখতে হবে এই তালিকায়। ২০১৫ সালে অভিষেক সিরিজেই ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ জানান দিয়েছিলেন তার আগমনী বার্তা।

তবে ইঞ্জুরির থাবায় ঠিকমতো যেন এগোচ্ছিলো না কাটার মাস্টার খ্যাত এই বোলারের ক্যারিয়ার। যদিও চলতি বিশ্বকাপে তিনি আবারও প্রমাণ দিলেন, তার আগমনটা হারিয়ে যাওয়ার জন্য হয়নি। মোস্তাফিজ যে দায়িত্ব নিতে শিখে গেছেন সেটাও জানান দিয়েছেন এই বিশ্বকাপেই।

এসএইচ-১৭/১০/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)