নরসিংদীতে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের প্রতিবাদে ক্লাসবর্জন করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
রোববার বেলা ১টা থেকে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। মালিকপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা পদত্যাগ করেছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রাকচালকরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন। সড়কে এলোমেলো অবস্থায় ট্রাক রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। সড়ক অবরোধের ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।
জানা যায়, সম্প্রতি নরসিংদীতে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের মালিকপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধার। এরই জেরে রোববার সকালে অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মশিউর রহমান মৃধা।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে অধ্যক্ষের পদত্যাগ প্রত্যাহারের দাবিতে সড়কে নেমে আসেন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু অধ্যক্ষকে পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত অবরোধ তোলা হবে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। গত এক সপ্তাহে রহস্যজনক কারণে কলেজ থেকে বিভাগীয় প্রধানসহ ১৬ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক এসএম মনিরুল ইসলাম বলেন, অধ্যক্ষ মশিউর রহমান মৃধার হাত ধরেই কলেজটি সারাদেশে খ্যাতি অর্জন করে। হঠাৎ স্যার পদত্যাগ করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, অধ্যক্ষ আমাদের অভিভাবকের মতো লেখাপড়া করান। ওনার জন্যই আমাদের কলেজ দেশসেরা হয়েছে। উনি না থকেলে কলেজের ফলাফলে ধস নামবে। তাই আমরা অধ্যক্ষ হিসেবে তাকেই চাই। হয় তাকে ফিরিয়ে দিন, না হয় আমাদের টিসি দিন।
এদিকে কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় উঠেছে। আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নামের ফেসবুক পেজে একজন লিখেছেন, ড. মশিউর রহমান মৃধা একজন ভালোবাসার মানুষের নাম। ওনার সূক্ষ্ম ধ্যান আর অতুলনীয় নেতৃত্ব আব্দুল কাদির মোল্লা কলেজ এগিয়ে যাচ্ছিল। যখনই মোল্লা সাহেব কলেজের হাল ধরলেন তখনই কলেজ তার সম্মান ও ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে। ব্যবসায়ী মাইন্ডের মোল্লা সাহেব সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন বেশি দিতে হয় বলে কলেজ থেকে পদত্যাগের নীলনকশা তৈরি করেছেন। তার এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া থেকে বাদ যাচ্ছেন না গুণী শিক্ষকরা।
তার নীলনকশার প্রথম বলি হন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেনসহ পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সব সিনিয়র শিক্ষক। টিটু স্যার, বাতেন স্যার; যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন কলেজের জন্য তাদেরও ছাড় দেয়া হয়নি। মোল্লার নীলনকশার অপমান থেকে মুক্তি পেতে কলেজ ছেড়েছেন ‘কলেজের বস’ নামে পরিচিত কামরুজ্জামান স্যার, ওয়াহিদ স্যার, জাহাঙ্গীর স্যার, অঞ্জন স্যারসহ অনেক শিক্ষক। অবশেষে সম্মান বাঁচাতে পদত্যাগ করলেন অধ্যক্ষও। আব্দুল কাদির মোল্লাকে কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে, আপনার এই হোলি খেলা বন্ধ করুন। আমাদের শিক্ষকদের সম্মান বাঁচান।
এ ব্যাপারে জানতে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের মালিক পক্ষকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি কেউ।
বিএ-১৩/০৩-০২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)