রাজশাহীতে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন

বিক্রির জন্য অনুমোদনহীন ও আইন বহির্ভুত বিদেশি তামাকপণ্যে (ই-সিগারেট, বিদেশি সিগারেট, চুরুট, হুকা, শিশা, পাইপ) রাজশাহীর বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আর উঠতি বয়সের তরুণ সমাজ, শিক্ষার্থী ও যুবক-যুবতীরা বিদেশি এসব তামাকপণ্যের দিকে ঝুকে পড়ছে। ফলে রাজশাহীর তরুণ প্রজন্ম বিদেশি এসব তামাকপণ্যের ভয়াল ছোবলে আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের স্বর্ণালি জীবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।

তবে বিদেশি এসব তামাকপণ্যের অবৈধ রমরমা বাণিজ্য বন্ধে অতি শিগগিরই পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। রাজশাহীর যেসব তামাকপণ্যের দোকানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে বিদেশি তামাকপণ্য বিক্রি হচ্ছে সেসব দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক।

রাজশাহী মহনগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মহানগরীর বিভিন্ন তামাকপণ্যের দোকানে ইলেক্ট্রনিক সিগারেট (ই-সিগারেট), বিদেশ থেকে আমদানিকৃত হুকা বা শিশা, ভ্যাপ, বিদেশি বিভিন্ন সিগারেট দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ফ্লেবারের ই-সিগারেট, ভ্যাপ, আকর্ষণীয় মোড়কে মোড়ানো বিভিন্ন নামের বিদেশি সিগারেটে রাজশাহী মহানগরীর তামাকের দোকানগুলো সয়লাব হয়ে গেছে। বিশেষ করে মহানগরীর সোনাদিঘী মোড়, জিরোপয়েন্ট, বাটার মোড়, আরডিএ মার্কেট, নিউ মার্কেট ও রাজশাহী বিশ্ববদ্যালয়ের পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন স্থানে এসব বিদেশি তামাকপণ্য বিক্রি হচ্ছে।

অবৈধ বিদেশি সিগারেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেনর গোল্ড, কে-২, সিটি গোল্ড, ডার্কিস, সিটি ব্লাক, জাভা ব্লাক, সেনার গোল্ড, ব্লাক, ইজি, মুড, জিজি টোব্যাকোর গুদাং গারাম, থ্রী-নট থ্রী ইত্যাদি। শুধু রাজশাহী মহানগরী নয়; জেলার পবা, বাগমারা ও বাঘাসহ প্রায় সবগুলো উপজেলার পৌর শহরে এসব অবৈধ বিদেশি সিগারেটের রমরমা বাণিজ্য চলছে।

অথচ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধিত আইন-২০১৩) এর ধারা ১০ এ উপধারা-৩ এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে- “বাংলাদেশে বিক্রিত তামাকজাত দ্রব্যের সকল প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন, ও কৌটায় ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত’ মর্মে একটি বিবৃতি মুদ্রিত না থাকিলে বাংলাদেশে কোন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করা যাইবে না।”

আবার একই ধারার উপধারা-৬ এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে- “কোন ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুন:পুন: একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণহারে দণ্ডনীয় হইবেন।”

এ বিষয়ে উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী- বিদেশি এসব তামাকপণ্য বিক্রি তো নিষিদ্ধ বটেই। তাছাড়া অবৈধ এসব তামাকপণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। ফলে সরকার বছরের পর বছর তামাক খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী মহানগরীর অভিজাত বা সৌখিন বেশি কিছু তামাকের দোকান রয়েছে, যেগুলোতে দীর্ঘ দিন থেকে বিদেশি বিভিন্ন ধরনের তামাকপণ্য অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দিন দিন উঠতি বয়সের যুবসমাজ বিদেশি এসব তামাকপণ্যে আসক্ত হচ্ছে।

কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জেলা প্রশাসন আইন বহির্ভুত বিদেশি এসব তামাকপণ্যের বিক্রি বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তামাকের এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধে জেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত একটি দেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বিদেশি তামাকপণ্যের রমরমা বাণিজ্যে যেভাবে রাজশাহীসহ সারাদেশ সয়লাব হয়ে গেছে তাতে কীভাবে এটি সম্ভব? তাই বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত একটি দেশ গড়তে চাইলে আগে বিদেশি অবৈধ সিগারেটের রমরমা বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যেটুকু আছে তা বাস্তবায়নে ভালোভাবে কাজ করতে হবে।’

তবে অবৈধ বিদেশি এসব তামাকপণ্যের রমরমা বাণিজ্য বন্ধে জেলা প্রশাসন খুব দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে বিদেশি তামাকপণ্য বিক্রির বিষয়টি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজশাহী এটির বিক্রি বন্ধে পদক্ষেপ নেব। কোথায় কোথায় এগুলো বিক্রি হচ্ছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে রাজশাহীতে বিদেশি পণ্য বিক্রি বন্ধ কর হবে।’

বিএ-১১/০৮-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)