সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক

৯০১ সালে সুইডেন সিদ্ধান্ত নেয় সামরিক সেবা বা প্রশিক্ষণ যা সুইডিশ ভাষায় ভ্যানপ্লিক্ট (Värnplikt) তা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়।

সুইডিশ নাগরিকদের বয়স যখন ১৮ বছর তখন তারা সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দিয়ে থাকে। ব্যতিক্রম রয়েছে যেমন প্রতিবন্ধী, মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার কারণ থাকলে।

প্রথম তিন মাস বেসিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে এক থেকে আট মাসের মধ্যে পোস্ট প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে যার সময় নির্ভর করে কে কোন বিষয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে তার ওপর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোর্সের সর্বোপরি মেয়াদ ৬১৫ দিন এবং তাও নির্ভর করছে প্রশিক্ষণের ধরণের ওপর।

যদি কেও স্থায়ীভাবে সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করতে চায় সে ব্যবস্থাও রয়েছে। সুইডেনে যখন কোনো কিছু আইনের মধ্যে পড়ে তখন তা অমান্য করা আইনত দন্ডনীয় এবং সেক্ষেত্রে জেলহাজত অথবা জরিমানা হতে পারে।

বেসিক প্রশিক্ষণের সময় থাকা, খাওয়া,ভরণপোষণ এবং চিকিৎসা ফ্রি। মাসিক ভাতারও ব্যবস্থা রয়েছে। ১৬ জুন ২০০৯ সুইডিশ সংসদে একটি নতুন আইন পাশ হয়। সে অনুযায়ী ১ জুলাই ২০১০ থেকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ তুলে দেয়া হয়।

একই সঙ্গে বলা হয় প্রয়োজনে সুইডিশ সরকার এ আইন পরিবর্তন করতে পারবে। আরো বলা হয় নারীরাও বাধ্য থাকবে সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দিতে এখন থেকে।

২০১৪ সালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা এবং রিফ্রেশ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়, যারা অতীতে বেসিক প্রশিক্ষণ পেয়েছে তাদের জন্য। ২০১৬ সালে নতুন আইন পাশ করে বেসিক কোর্সের মেয়াদ ৯ থেকে ১১ মাস করা হয়। ২ মার্চ ২০১৭ নতুন আইন পাশ হয় যাদের জন্ম ১৯৯৯ সালে, তাদের মধ্যে ১৩০০০ জনকে নেয়া হয় সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য।

এবারের নতুন আইনে বলা হয় যাদের জন্ম ২০০১ সালে, তাদের বয়স ২০১৯ সালে ১৮ বছর হবে। বিধায় ছেলে-মেয়ে সবাই বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দেবে।

আজ বাড়িতে সামরিক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ থেকে চিঠি এসেছে আমার মেয়ে জেসিকার কাছে। তাকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দিতে হবে। মজার ব্যপার ২০১০-২০১৭ সালে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ তুলে নেয়ার কারণে আমাদের ছেলে জনাথান এতে যোগদান করেনি।

এখন মেয়েকে এ প্রশিক্ষণে যোগ দিতে হবে। জেসিকার কাছে সামরিক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ একটি কোড নং পাঠিয়েছে। কর্তৃপক্ষের হোমপেজে গিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে ২ সপ্তাহের সময় দিয়েছে।

এ পর্ব শেষ হলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে জেসিকার প্রশিক্ষণের মেয়াদ এবং কিসের ওপর ট্রেনিং হবে। ২২ নভেম্বর ১৯৯৩ সালে আমি সুইডিশ নাগরিকত্ব পাই এবং পরে আমাকে সামরিক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়। যদিও আমার বয়স ১৮ বছরের অনেক বেশি তখন। সুইডিস নাগরিক হলেই এ প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাই তলব পড়ে আমারও। তখন জেনে ছিলাম প্রশিক্ষণের পরে মাঝে মধ্যে রিফ্রেশ প্রশিক্ষণও হয়।

সুইডেন শান্তির দেশ, কোনো ঝামেলার সঙ্গে জড়িত না তার পরও সবাই কেন সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়? এবং বেশির ভাগ সুইডিশ এটা পছন্দ করে। কী কারণ বা রহস্য থাকতে পারে এর পেছনে? বহি:শত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করতে বা দেশের সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি সময়ে যদি সমস্যার সম্মুখীন হয় তার জন্য তো রয়েছে তাদের দেশে সশস্ত্র বাহিনী এবং উন্নতমানের যুদ্ধের সামগ্রী।

এতে মনে হচ্ছে দেশের যে কোনো বিপদে মাতৃভূমি রক্ষার স্বার্থে ঝাপিয়ে পড়ার অঙ্গিকার।

এটা যেমন একটা কারণ। জীবনে ডিসিপ্লিন এবং সম্মিলিতভাবে কিছু করতে শেখা এবং করা মাতৃভূমির জন্য আরেকটি কারণ। শুধু জাতীয় সঙ্গীত গাইলেই তো আর দেশপ্রেমিক হওয়া যায় না! দেশের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য এবং সচেতনতা বাড়াতে হলে এদের কাছে আর কোনো বিকল্প নাই।

এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। মানসিক ভাবে স্বস্থি অনুভব করে এবং অন্যকে নিয়ে ভাবতে শেখে। কৈশোর অধ্যায় শেষ হতেই দেশের দায়িত্ব নেয়া প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিশ্চয়ই গর্বের ব্যপার। তারপর আস্তে আস্তে নিজেকে গড়ে তোলা, সংসার করা, নিজের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া, কর (টাক্স) দেয়া।

সমাজের এবং দেশের সর্বাঙ্গীন কাজে নিজেকে নিযুক্ত করা। সব মিলে কথার সঙ্গে কাজের মিল খুজে পাওয়া বা জীবন খুজে পাওয়ার মত এক অঙ্গিকার। যার মধ্যে রয়েছে মাতৃভূমিকে ভালোবাসার এক দারুণ অনুভুতি। সব কিছু যখন মনের মাঝে এমন করে এলো তখন বড় সাধ হলো বিষয়টি তুলে ধরার এবং শেয়ার করার। একই সঙ্গে ভাবনাতে ঢুকেছে বাংলাদেশেও তো আমরা বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ চালু করতে পারি সবার জন্য।

আমরাও কর্মক্ষেত্রে বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রতিদিন গাই ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। এখন যদি সেই ভালোবাসার দেশ হঠাৎ বিপদে পড়ে তখন তাকে রক্ষা করতে হলে বা সেই মুখের কথাকে (আমি তোমায় ভালোবাসি) কিভাবে কাজে প্রমান করব? যদিও আমরা ১৯৭১ সালে বিনা প্রস্তুতিতে শত্রুর মোকাবেলা করেছি কিন্তু একই সঙ্গে অনেকে ভয়ে এবং নিজের স্বার্থে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল এবং অনেকে রাজাকারের খাতায় নাম দিয়ে দেশের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল।

সেটা নিশ্চয় হবে না যদি সবার বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ থাকে তার মাতৃভূমির জন্য।

আমার বিশ্বাস দূর্নীতিও দূর হতে পারে এর জন্য কারণ জীবনের শুরুতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া দেশের জন্য সে এক ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি, তার সঙ্গে কেউ বেইমানী করবে না।

তাই ভাবছি জীবনের শুরুতে এমন একটি সুযোগ যদি সমস্ত বাংলাদেশি নাগরিক পেত বলুন তাহলে কেমন হতো?

এসএইচ-১০/০৫/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)