সততার পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি জহির

মাদকদ্রব্য বহন করার দায়ে কোন রকম দণ্ড না দিয়ে বাহরাইন সরকার উল্টো এ প্রথমবারের মত পুরষ্কৃত করেছেন নেত্রকোনার পূর্বধলার জহির নামে এক বাংলাদেশিকে। বাহরাইনগামী জহির না জেনে নেশা জাতীয় দ্রব্য গাঁজা বহন করে ওই সেবনকারী ও ব্যবসায়ীকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করায় ৩ মাস পর তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্প্রতি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রশিদ বিন আব্দুল্লাহ আল খলিফার পক্ষে দেশটির সিআইডির প্রধান কর্যালয়ে এ সম্মাননা (পুরষ্কার) জহিরের হাতে তুলে দেন সিআইডির প্রধান আব্দুল আজিজ রামিহি। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য ও জনকল্যাণ প্রতিনিধি তাজউদ্দিন সিকান্দার।

জানা যায়, ৩ মাস আগে জহির বাহরাইনে যাওয়ার সময় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার চাচাতো ভাই তাকে অন্যের জন্য রসগোল্লা বলে একটি রসগোল্লার বক্স হাতে তুলে দেন। এবং যাকে দিবে তার মোবাইল নাম্বারটি ও দিয়ে দেন। জহির কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই এটি হাতে করে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে কোন যাচাই বাচাই না করায় তিনি বুঝতে পারেন নি তাতে কি ছিল?

সৌভাগ্যক্রমে সে কোন রকম বিপদ ছাড়া রোমে আসে। বক্সটি নেয়ার জন্য প্রাপকের অতিরিক্ত ফোন কল জহিরকে ভাবিয়ে তোলে এবং তার সন্দেহ হয় যে এক কেজি রসগোল্লার জন্য কেন এতো কল? তাতে মূল্যবান এমন কি আছে? তাই তিনি বক্স খুলে তাতে রসগোল্লা দেখতে পান। বাক্সটির ওজন অতিরিক্ত মনে হওয়ায় সেটি ছিদ্র করে দেখেন প্যাকেটের আদলে এক কেজি ওজনের গাঁজা রয়েছে। জহির তাৎক্ষণিক তা নষ্ট না করে দূতাবাসের তাজ উদ্দিন সিকান্দারকে বিষয়টি জানান।

তাজউদ্দিন বিষয়টি রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) কে এম মমিনুর রহমানকে অবিহিত করেন। এরপর রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে ওইসব নিয়ে দূতাবাসে হাজির হতে বলেন। বিষয়টি বাহরাইন সিআইডিকে জানানোর পর রাষ্ট্রদূত সিআইডি টিমের সয্গে জহিরকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় প্রাপককে রসগোল্লা বা মিষ্টির বক্সটি বুঝিয়ে দেয়া ও তাকে আটকের অভিযানে নামেন।

বক্সটি বুঝে দেয়ার পর এটি নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে জুফেয়ার থেকে চিতরায় যাওয়ার সময় কৌশলে অসংখ্য পুলিশ তাকে ঘেরাও করে। এরপর রাত ১টায় তাকে আটক করে এবং জহিরকে ছেড়ে দেন। যার ফলে জহির বাহরাইনের আইন অনুযায়ী নূন্যতম ১০ বছরের সাজা থেকে বেঁচে যায়।

অনেক যাচাই-বাচাইয়ের পর জহির প্রতারণার স্বীকার প্রমাণ হওয়ায় এবং অপরাধীকে আটকে সহযোগিতা করায় রাষ্ট্রীয় ভাবে তাকে পুরষ্কৃত করার সিদ্ধান্ত হয়। ঘটনার ৩ মাস পর সম্প্রতি সিআইডি প্রধান কার্যালয় থেকে ফোন করে জহিরকে নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য তাজ উদ্দিনকে বললে, তাজউদ্দিন রাষ্ট্রদূতের অনুমতিতে জহিরকে নিয়ে হাজির হন।

এসময় জহিরকে বাঙালি হিরো বলে জহিরের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়ার সময় সি আইডির প্রধান বলেন, এটি সামান্য কিছু উপহার। তোমার সৎ কাজে আমাদের সরকার খুশি হয়ে এ সামান্য সম্মান (বাংলাদেশি ৭০ হাজার টাকা) করেছে। আমি আশা করবো তোমার দেশের শ্রমিকরা যেন তোমার মত ভূমিকা পালন করেন।

সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাহরাইন প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) কে এম মমিনুর রহমান বলেন, দেশের মান ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।

দেশ থেকে আসার সময় ব্যবস্থা পত্রসহ ওষুধ ব্যতীত কোন প্রকার মাল বহন করবেন না। তিনি প্রয়োজনে দূতাবাসের সহযোগিতার আহ্বান জানান।

পুরষ্কার প্রাপ্ত জহির বলেন, অনেক খুশি কিন্তু টাকার জন্য নয়, সম্মানটার জন্য। আমি চাই আমার মত যারা প্রবাসে আছেন তারা অবশ্যই খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

দূতাবাসের তথ্য ও জনকল্যাণ প্রতিনিধি তাজ উদ্দিন সিকান্দার বলেন, এ সম্মান একা জহিরের নয়, এ সম্মান দেশের সকল প্রবাসীদের। বাংলাদেশের প্রশংসা শুনে আমি অনেক খুশি হয়েছি। ধন্যবাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সরকারকে।

উল্লেখ্য, বাহরাইনে আছরি, আলবা ও ঝাড়ু জেল খানায় প্রায় ৭ শত বাঙালি আটক রয়েছে এবং অনেকের সাজা হয়ে গেছে। এদের বেশির ভাগই রয়েছে মাদকের সঙ্গে জড়িত। তাই বাহরাইন সরকার যে কোন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

এসএইচ-০৬/২০/১৯ (প্রবাস ডেস্ক)