ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় ৩ জনের দায় স্বীকার

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় তিনজন দায় স্বীকার করেছেন।

শুক্রবার র‍্যাব-১৩ এর অপারেশন অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিক বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ ঘটনায় জড়িত বলে দায় স্বীকার করেন।

আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে দিনাজপুর থেকে র‍্যাব-১৩ এ সদর দপ্তরে নিয়ে এসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

তবে তাদের পরিচয়, হামলার কারণসহ বিস্তারিত সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হবে বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

এর আগে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় তার ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় যুবলীগ নেতা আসাদুল হক ও ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও আরো চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

আটকরা হলেন- সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে মাসুদ রানা (৪০), নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৮), চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর এলাকার মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে নবীরুল ইসলাম (৩৫) ও একই এলাকার খোকার পুত্র সান্টু চন্দ্র দাস (২৮)।

এরমধ্যে পলাশ ওই বাড়ির নৈশপ্রহরী এবং মাসুদ রানা ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বলে জানা যায়।

এদিকে শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। রাতেই তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

বলেন, এখনই তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। শনিবার এ বিষয়ে আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসবেন, এরপর এ বিষয়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আপনাদের জানানো হবে। তবে বর্তমানে ইউএনও ওয়াহিদার শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান তিনি।

নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরোসার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন জানান, আমরা আশা করছি শনিবার ইউএনও ওয়াহিদাকে আইসিইউ থেকে বের করতে পারব। তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এখনই কিছু জানাব না। শনিবার এ বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাব।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ৬ সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে। অস্ত্রোপচার শেষেই তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। তাৎক্ষণিকভাবে তার সেরে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানানো হয়।

অস্ত্রোপচার শেষে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটা টুকরা ছিল, সেগুলো আমরা জোড়া দিয়েছি। জোড়া দিয়ে হাড়গুলোকে জায়গামতো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে আরো ছোট ছোট কাটা ছিল, সেগুলোর সবগুলোকেও রিপেয়ার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী কিন্তু এটা হেড ইঞ্জুরির ব্যাপার, তার মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। মস্তিষ্কের ওপর একটা চাপ ছিল, সেটা আমরা রিলিফ করেছি। তবে এখনই ক্লিয়ারলি আমরা বলতে পারব না যে রোগী ভালো হয়ে যাবেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।

পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়।

এসএইচ-৩০/০৪/২০ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)