রুয়েট ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহীতে ফের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের পর অটো থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই শিক্ষার্থী নিজেই সোমবার বিকেলে তার ফেসবুকে ওই ঘটানটি তুলে ধরে পোস্ট করেন। ভিকটিম ওই ছাত্রীর নাম সানজানা তাহসীন।

তার সেই ফেসবুকের পোস্টটি পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:-

সানজানা তাহসীন তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার বাসা উপরশহর। বাসা দূর বলে আমি সাধারণত রুয়েট থেকে রেইলগেট পর্যন্ত অটোতে করে আসি। আজকেও প্রতিদিনের মতো অটো নিলাম, সাথে ছিল দুইজন অপরিচিত রুয়েটিয়ান ভাইয়া আর একজন ভদ্রলোক। রুয়েটিয়ান ভাই দুইজন চিশতিয়ার সামনে নেমে গেলেন।

ভদ্রা পার হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ অটোওয়ালা অটো থামায় দিলো, সামনে থাকা ভদ্রলোক কে বললো, ” আপনি নেমে যান, আমি নিজস্ব লোক তুলবো”! আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই ভদ্রলোক কে জোরপূর্বক নামিয়ে চারজন গুন্ডা উঠে অটো চালানো শুরু হয়ে গেলো! ভদ্রা থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি নির্জন, ইচ্ছামত সেই চারজন আমাকে স্পর্শ করা শুরু করলো। হাজারবার অটো থামানোর জন্য চিৎকার করার পরও অটোওয়ালা পশুর মত হাসতে থাকলো….

পরে নগরভবনের সামনে পুলিশ দাড়া থাকতে দেখে ভয় পেয়ে তারা অটো থেকে ধাক্কা মেরে আমাকে ফেলে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো!!! যতক্ষণে নিজের পায়ে দাঁড় হতে পেরেছি ততক্ষণে অটো বহুদূর….

কাহিনীটা শুধু শেয়ার করলাম। এইটা বাংলাদেশ, কোনো বিচারের আশা আমি করছিনা।

বি.দ্র. : অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে আমার পোশাক কি ছিলো? সাধারণ বাঙালী নারীর মত সালোয়ার কামিজ।

এদিকে সানজানা তাহসীন নামের ওই শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে ঘটনাটি তুলে ধরার পর ব্যাপক হৈ চৈ পড়ে যায়।

সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার পোস্টটি শেয়ার হয় ৬৩৪টি। আর কমেন্ট পড়ে ১৩৬টি। লাইক দেন দুই হাজার ২০০টি।

কমেন্টগুলোর মধ্যে মীম জান্নাত নামের একজন লিখেন, আপু এইটা কোন কথা না যে আপনি বিচার চাইবেন না। দেশে আর কার কি বিচার হল বা হল না, দেশে কি হচ্ছে না হচ্ছে এইসব আপনার দেখার জিনিশ না। আপনার সাথে যা হইসে আপনি তার জবাব দিবেন। একেক্টা হারামীদের খুঁজে বের করবেন ব্যাস। চুপ করে হজম করে যাবেন নাকি!? বারে! মগেরমুল্লুক এইটা!?? কি ভাবসে?? যা হয় হোক, যত সময় লাগে লাগুক। পানিশ করে ছাড়বেন।

সঞ্চিতা সরকার নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে ও এসব শুরু হয়ে গেসে তাহলে?! তাও অটো তে?! সত্যিই ভীতি ঢুকে গেল মনে। আপনি প্লিজ থানায় কন্টাক্ট করুন। কালপ্রিটরা ধরা পরবে বলে মনে হচ্ছে।’

জাওয়াদ তাহমিদ নামের আরেকজন লিখেন, ‘এটা পড়ার পর ত আমার তোকে নিয়ে টেনশন হচ্ছে। রুয়েট এর টিচার আমার ক্লাসমেট এর ওয়াইফ তারপর ক্যাম্পাসের ছোট বোন, আমি আর ভাবতে পারছি না। শান্ত শহরটা কি হয়ে গেল।’

আরাফাত হোসেন কমল নামের অপর একজন লিখেন, ‘কিছু বলার ভাষা নাই, যত দিন যাচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছে।’

এর আগে গত ১০ আগস্ট রুয়েটের শিক্ষক রাশিদুল ইসলামের স্ত্রীকে নগরীর সোনাদিঘীর মোড় এলাকায় যৌন হয়রানি করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই শিক্ষকের ওপর হামলা করে বখাটেরা। এ নিয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা হলেও পুলিশ সোমবার পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।

পরপর এই ধরনের প্রক্যাশ্য যৌন হয়রানির পরে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে জনমনে।

বিএ-২১/১৯-০৮ (নিজস্ব প্রতিবেদক)