চবি শিক্ষককে ছাত্রলীগ নেতার মারধরের হুমকি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষককে মারধরের হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার (৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের নাম তানভীর হাসান মিথুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রভাষক।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম রাজু মুন্সি। রাজু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের নেতা।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে বাংলা বিভাগে গেস্ট টিচার হিসেবে পরীক্ষার হলে ডিউটি করতে গিয়ে এনজয় বড়ুয়া নামে এক শিক্ষার্থীকে নকল করার কারণে বহিষ্কার করি। ওইসময় তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি জব্দ করে বাংলা বিভাগের পরীক্ষা কমিটির হাতে তুলে দিই। কিন্তু এরপর ওই ছেলে আমাকে ফোন করে তার আর্থিক দুরবস্থার কথা জানালে আমি নিজেই গিয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের কাছে তার অবস্থার কথা তুলে ধরি। কিন্তু সোমবার হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতা রাজু মুন্সি আমাকে কল দিয়ে ওই ছেলের (এনজয় বড়ুয়া) বরাত দিয়ে হুমকি দেয়। সে (রাজু মুন্সি) বলে, সেই নাকি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়েছে। সে আরও বলে, আমি কি তোকে আমাদের ছেলেপেলেদের নকল ধরার জন্য শিক্ষক বানিয়েছি?’

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক আরও বলেন, ফোনকলে সে আমাকে মারার সুপারিশ পেয়েছে বলে হুমকি দিয়ে বলে, আমি ক্যাম্পাসে আসলে নাকি আমাকে মারবে। আমার ডিপার্টমেন্টেও সে ভাঙচুর করার হুমকি দিয়েছে। এ সময় আমি তার সাথে সরাসরি দেখা করতে চাইলে আমাকে সে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসতে বলে। আমি ওখানে গেলে রাজু মুন্সি, এনজয় বড়ুয়াসহ আরও একজন এসে একই রকম হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে আমি দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে চলে আসি এবং প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই।

এদিকে অভিযোগ অকপটে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা রাজু মুন্সি। তিনি বলেন, ‘সে টিচার হওয়ার আগে সারাক্ষণ আমাদের পিছে পিছে ঘুরত। আমরাই তাকে টিচার বানিয়েছি। এখন টিচার হওয়ার পর সে আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধেই কাজ করতেছে। তো ওকে মারব নাতো কী করব?’

তিনি বলেন, ‘সে তো আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ সামনে আসছিল। কই, আমাকে দেখে তো পালিয়ে গেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওকে মারার জন্য আমার ক্যাম্পাসে আসতে হবে না। আমরা যখন ইচ্ছা তখন বাসায় গিয়েই তাকে মারতে পারি।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, আমি বিষয়টি আগে শুনিনি। খোঁজখবর নিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ছাত্রলীগ নেতা রাজু মুন্সির নামে একটি হুমকির অভিযোগ দিয়েছেন। প্রমাণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

হুমকির রেকর্ডে যা শোনা যায়:

শিক্ষক: তুমি সুপারিশ করছ বলতে তোমার কথা বলার অ্যাপ্রোচ এমন কেন?
ছাত্রলীগ নেতা: আমার অ্যাপ্রোচ এর থেকে বাজে। আমি ভিসি ম্যামের রুমে। বিচার দিবেন নাকি ভিসি ম্যামের কাছে? ফোন ধরাই দিব?
শিক্ষক: কী?
ছাত্রলীগ নেতা: আমি ভিসি ম্যামের রুমে। বিচার দিবেন আমার বিরুদ্ধে?
শিক্ষক: না, বুঝি নাই তোমার কথা বলার অ্যাপ্রোচ এমন কেন?
ছাত্রলীগ নেতা: আমার কথা এর থেকে বাজে। অ্যাপ্রোচ! আপনি আমাকে চেনেন না। আমি… কথার চেয়ে হাত বেশি চলে যে। আপনি টিচার হইছেন তো কী হইছে? একটু রেকর্ডিং করে রাখেন না। আপনি টিচার হইছেন তো কী হইছেন? কথা থেকে আমার হাত বেশি চলে তো।
শিক্ষক: তুমি কী বলতে চাইছো কিছুই বুঝি নাই।

ছাত্রলীগ নেতা: আপনি তো কোনো কিছু বুঝবেন না। টিচার হয়ে গেছেন না, এখন কোনো কিছু বুঝবেন না তো! আমি দেখা করতেছি আপনার সঙ্গে। তখন সব বুঝবেন।
শিক্ষক: মানে কী দেখা করবা, কী বলতে চাইছো। কিছুই বুঝি নাই। তুমি একটু স্পেসিফিক বলবা?

ছাত্রলীগ নেতা: আপনাকে টিচার করা হইছে কী জন্য? আমাদের পোলাপানকে রক্ষা করার জন্য না? নাকি এগুলাকে খালি ধরে ধরে উল্টাপাল্টা ইয়া করার জন্য?
শিক্ষক: উল্টাপাল্টা ইয়া করার জন্য মানে কী? আর আমাকে তুমি টিচার বানাইছো? কাকে কী বলো? তোমার মাথামুথা ঠিক আছে?

ছাত্রলীগ নেতা: আরে ফোন রাখেন মিয়া। আমি দেখা করতেছি আপনি কই?
শিক্ষক: আমি কোথায় তোমার জানার দরকার নাই। কারে কী বলতেছো? মাথা তোমার ঠিক আছে?

ছাত্রলীগ নেতা: আরে আমার মাথা ঠিক আছে। আপনার মাথা ঠিক নাই যে। টিচার হওয়ার আগে ঠ্যাং ধরে বসে থাকতেন। আর টিচার হয়ে ভুলে গেছেন।
ছাত্রলীগ নেতা: আপনারে মারার জন্য সুপারিশ পাইছি, বুঝছেন না? ক্যাম্পাসে আসলে পিটাব।
আপনাকে পিটাইলে টাকা দিবে আমাকে। রেকর্ডিং করে এগুলা ভিসি ম্যামরে শুনায়েন। আবোল-তাবোল পোলাপানরে টিচার বানিয়ে রাখছে! আপনার ডিপার্টমেন্টে ভাঙচুর করবো এখন।

শিক্ষক: কী করবা আমার ডিপার্টমেন্টে?
ছাত্রলীগ নেতা: ডিপার্টমেন্টে তালা লাগাব।
শিক্ষক: তুমি আমার ডিপার্টমেন্টে তালা লাগাবা কেন?
ছাত্রলীগ নেতা: আমার ইচ্ছা হইছে তাই। উল্টাপাল্টা কথা বলছেন যে! আপনি কই? ডিপার্টমেন্টে থাকলে..’

এসএইচ-২০/০৪/২২ (শিক্ষা ডেস্ক, সূত্র : সময়)