মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় রমজান

রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন দরিদ্র ও শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান রমজান আলী। এতে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও তার মুখ এখন মলিন। মেডিকেল কলেজে ভর্তির টাকাসহ পড়ালেখার খরচ আসবে কোথা থেকে, সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

রমজান আলী ২০২১-২২ এর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ১৫১৮তম হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

রমজান দিনাজপুরের সদর উপজেলায় নয়নপুর এলাকার রিয়াজুল ইসলাম ও নুরুফা বেগম দম্পতির সন্তান। রমজানের অর্জনে গর্বিত বাবা-মা। তারা পঞ্চগড় মহাসড়কে রাস্তার ধারে ভাতের হোটেল চালান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিনাজপুর শহরের নয়নপুরে দুই হাজার টাকায় দুটো টিনশেডের ঘর ভাড়া করে থাকেন রমজানের বাবা রিয়াজুল ইসলাম। বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। সবচেয়ে ছোট ছেলে রমজান আলীকে নিয়ে তাদের তিনজনের সংসার। বাবা-মা ভাতের হোটেলে ব্যস্ত। বাসায় রমজান একাই ছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। দারিদ্র্যতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তার যুদ্ধ জয়ের গল্প অন্যদের জন্যেও প্রেরণাদায়ক। বাবা-মার পরিশ্রমের পাশাপাশি তার শ্রম ও মেধা তাকে এত দূর পর্যন্ত এনেছে।

চিকিৎসক হওয়ার কোনো ভাবনা রমজান আলীর মাথায় ছিল না। মায়ের অসুস্থতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও চিকিৎসাখাতে অব্যবস্থাপনা তাকে চিকিৎসক হওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর করেছে বলে জানান রমজান।

মা নুরুফা জানান, মানুষের বাড়িতে, ছাত্রাবাস ও বিভিন্ন মেসে বুয়ার কাজ করেছেন ছেলেকে পড়াশোনা করাতে। বাবাও প্রচণ্ড কষ্ট করেছেন রমজানকে এ পর্যন্ত এগিয়ে নিতে। ছেলের স্বপ্ন পূরণে বাকি পথটুকু পার করতেও তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। তবে এটা অনেক বেশি কঠিন; ছেলের সহযোগিতার প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

দিনাজপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, শত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে রমজান আলী রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। করোনা মহামারির মতো কঠিন সময়ও পারেনি তাকে দমিয়ে রাখতে। মেধাবী ছাত্র রমজান আলীর ভর্তি ও পড়ালেখায় তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জানা গেছে, রমজান শহরের উত্তর বালুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ জিপিএ-৫, চেহেলগাজী শিক্ষা নিকেতন থেকে ২০১৬ সালে জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ জিপিএ-৫, একই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার পরিচয় দিয়েছেন।

এসএইচ-২৭/২৪/২২ (শিক্ষা ডেস্ক)