চবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে রাবি ছাত্রলীগের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করেন তারা।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু এবং জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও রাকিবুল ইসলাম, আইবিএ ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা এবং তামিম ও রাজ নামের দুজন ছাত্রলীগ কর্মী।

অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে জিম্মি হওয়া ভুক্তভোগী হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওকিবুল হক।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাওকিবুল হক বলেন, ‘আমার ট্রাভেল এজেন্সি আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এবার আমার সাতটি বাস এসেছে, যার তিনটি বাস একই ব্যানারে ছিলো। তিনটি বাস এক এজেন্সির অধীনে এসেছে এটা বুঝতে পেরে অভিযুক্তরা আমাদের তিনজন ড্রাইভারকে ডেকে নিয়ে অর্থ দাবি করে। পরে ড্রাইভার আমাকে কল করে বিস্তারিত জানালে আমি বুঝতে পারি ছাত্রলীগের কেউ হয়তো অর্থ দাবি করেছে। আমি তাদের সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দেই। আমি ভেবেছিলাম তারা এক থেকে দেড় হাজার টাকা দিলে চলে যাবে, কিন্তু তারা আমার কাছে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে।

তিনি আরও বলেন, অর্থ দাবি করার আগে ওরা আমাকে মারধরও করেছে। পরে আমার বিকাশ থেকে ৯ হাজার, নগদে ছিলো ১ হাজার ৩০০ এবং ৫ হাজার টাকা ক্যাশসহ মোট ১৬ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’

ভুক্তভোগীর বন্ধু অংকুর পাল বলেন, ড্রাইভার থেকে চাঁদা দাবির বিষয়টি জানা মাত্র ঘটনাস্থলে আমিসহ তাওকিবুল ও ইফতি আসি। ভিড়ের কারনে আমাদের একটু দেরি হয় কিন্তু ইফতি আগে গেলে তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কোয়াটারের পেছনে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অভিযুক্তরা আমার বন্ধুর নাম্বার থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং বিকাশে আমাদের থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করে।

তিনি বলেন, পরে আমরা তাদের সরাসরি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেই এবং পুলিশকে বিষয়টি জানাই। পরে তামিম নামে একজনকে তারা আমাদের নিকট টাকা নিতে পাঠালে উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে পুলিশকে আমরা পাশে পাইনি এবং অভিযুক্ত অন্য কাউকে আটক করেনি। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এমন চাঁদাবাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জার। ছাত্রলীগ আমাদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দেয়নি। পুলিশ ও রাবি প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে। আমরা এর তদন্তপূর্বক বিচার চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গতকাল এরকম একটি ঘটনা আমরাও শুনতে পাই। আমরা জানতে পারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার বন্ধুর ছোটভাই। এরপরে আমরা বিষয়টির খোঁজ নিতে গিয়ে দেখতে পাই ক্যাম্পাসের বহিরাগত কিছু লোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে তাদের হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে। পরে আমরা সেখানে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে বিষয়টি প্রতিহত করি।

আরেক অভিযুক্ত জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে, পরে বিষয়টি শুনেছি এবং আমার স্কুলের ছোট ভাই জেনে ফয়সাল আহমেদ রুনু ভাইকে নিয়ে মিমাংসা করে দিয়েছি। টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিবুল বলেন, আমরা তার টাকা ফেরত দিয়েছি। আপনি ভুক্তভোগীর নিকট খোঁজ নিলেই সত্যতা পাবেন।

জেমসসহ ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে, শুনেছি জিয়া হলের রাকিবের স্কুলের ছোট ভাইয়ের সাথে একটি ঝামেলা হয়েছে, পরে বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।

রাবি প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযুক্ত জেমস ও ভুক্তভোগীদের সরাসরি জিজ্ঞাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছি।

এসএইচ-০৬/২৬/২২ (শিক্ষা ডেস্ক, সূত্র : বিডিপ্রতিদিন)