থিসিস পেপার মিলছে ৪০০ থেকে লাখ টাকায়!

ঢাকার নীলক্ষেতের খাদিজা এন্টারপ্রাইজ। কোনো একটি ‘ বিষয়’ বলতেই হাজার হাজার গবেষণাপত্র থেকে একটি বের করে দিলেন দোকানের কর্মী। টাকা দিলেই মিলছে গবেষণাপত্র।

এই দোকানের কর্মী জানান, তিনি জানেন না যে আইনগতভাবে এভাবে থিসিস পেপার বানানো অবৈধ।

নীলক্ষেত থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনেক জায়গাতেই এখন এমনভাবে কেনাবেচা করতে দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্র- এমনকি পিএইচডি থিসিসও। বিষয় ভেদে চার’শ টাকা থেকে লাখ টাকা খরচে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে সবধরনের গবেষণাপত্র। পরে নিজের নামে এইসব গবেষণা চালিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই।

নীলক্ষেতের আরেকটি দোকানে গিয়ে গবেষণাপত্র চাইতেই দেখালো শ’খানেক গবেষণা। মিজান কম্পিউটার নামের আরেকটি দোকানের কর্মীরা সংবাদকর্মী আসার খবর খবর পেয়ে গা ঢাকা দেন। দোকান বন্ধ করে চলে যান আশপাশের অন্যরাও।

এদিকে ভুয়া গবেষণাপত্রের বেচাকেনা হয় অনলাইনেও। ‘ফাইনাল ইয়ার বাডিস’ নামে এই ফেসবুক পেইজে জার্নালের প্রকাশনা থেকে পিএইচডি থিসিস -সবই মিলছে।

এসব গবেষণাপত্র বেচকেনার সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের কাছে আপনার প্রয়োজনগুলো লিখে যা যা লাগবে আমরা তাই দিতে পারব।

সামাজিক মাধ্যমে ওয়েব-টেক, অ্যাসাইমেন্ট রাইটিং, প্রজেক্ট থিসিস সলিউশনসহ বিভিন্ন নামে এমন ২০-৩০টি গ্রুপ রয়েছে। ভুয়া গবেষণাপত্র তৈরি করে দিতে ২০ হাজার টাকা থেকে নিচ্ছে লাখ টাকা পর্যন্ত। এ কারণে গবেষণার প্রতি আস্থা কমছে, বলছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ডিপার্টমেন্ট পর্যায়ে মাস্টার্সের থিসিস কিংবা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ রিপোর্ট বা গ্রুপ রিসার্চের ক্ষেত্রেও প্লেজারিজম যাচাই করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস জালিয়াতির দায়ে শিক্ষকের শাস্তির নজিরও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের প্রতারণা রোধে একটি নীতিমালা করার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, কতটুকু নকল থাকলে কি শাস্তি দেওয়া হবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হয়েছে।

গবেষণা চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে নজরদারির কথা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের নতুন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আসছে আমাদের কাছে সম্প্রতি। এ নিয়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি।

এসএইচ-০২/২৬/২৩ (শিক্ষা ডেস্ক, সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট)