হতাশ করল ‘জিরো’!

হতাশ করল

শুক্রবার ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ছয় হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খান অভিনীত বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘জিরো’। তিন-তিনটি হিট ও নন্দিত ছবির পরিচালক আনন্দ এল রাইয়ের সঙ্গে শাহরুখের প্রথম ছবি, সঙ্গে নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফ-আনুশকা শর্মা, নির্মাণ ব্যয় ২০০ কোটি টাকা, বামন শাহরুখ খান, ইউটিউব ট্রেলারে ১১০ মিলিয়ন ভিউয়ার—দর্শকের আগ্রহী হওয়ার অনেক কারণ। এই ছবি দেখতে সিনেমা হলে ঠিকই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দর্শক, কিন্তু মন ভরাতে পারেনি।

শোনা গিয়েছিল, এ ছবি নাকি বলিউড বাদশার কেরিয়ারের অন্যতম। অনেক আশা নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে নাকি হতাশই হয়েছেন বেশিরভাগ দর্শক।

এ ছবিতে এক বামনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ। এক মাদকাসক্ত অভিনেত্রীর ভূমিকায় রয়েছেন ক্যাটরিনা কইফ। অনুষ্কা শর্মা এক বিজ্ঞানীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। যার জীবনটা আটকে হুইলচেয়ারে। সোশ্যাল অডিয়েন্সের একটা বড় অংশের মতে, পরিচালনা, অভিনয়, সম্পাদনা কোনও বিভাগেই নাকি পাশ মার্কসও দেওয়া যায় না এই ছবিকে।

ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে দর্শক এটাকে কতটুকু গ্রহণ করবে তা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। আশা করা হচ্ছিল, ‘জিরো’ আলোড়ন তুলবে সিনেমা জগতে। কিন্তু তেমনটি আর দেখা যায়নি। তবে সিনেমার প্রধান চরিত্রের কয়েকটি অংশের সংলাপ ও কিছু পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন সমালোচকরা।

ভারতের চলচ্চিত্র ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, মুক্তির দিন বক্স অফিসে ২৫ থেকে ২৭ কোটি রুপি সংগ্রহ করতে পারবে ‘জিরো’। তবে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ হওয়ার পর জানা যায়, মুক্তির দিন ছবিটি সংগ্রহ করেছে ২০ কোটি ১৪ লাখ রুপি। এটি প্রত্যাশার চেয়ে কম।

সংবাদমাধ্যম ডিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ভারতের প্রেক্ষাগৃহগুলোর সকালের শোতে দর্শকের উপস্থিতি ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ ছিল ‘জিরো’র দখলে। যা আশানুরূপ না। তবে রাতে এসে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। বৃদ্ধি পায় দর্শক সংখ্যা।

ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক তরণ আদর্শ এই ছবিকে পাঁচে দিয়েছেন ১ দশমিক ৫। তাঁর মতে, ‘প্রথম ৩০ মিনিট দর্শক ধরে রাখা গেছে। কাহিনি যত এগিয়েছে ততই হতাশা বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল কী যেন নেই ছবিতে। ‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘রানঝানা’ ও ‘তনু ওয়েডস মনু রিটানর্স’-এর আনন্দকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। ‘জিরো’ দেখার পর হয়তো অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, এমন একটি দুর্বল চিত্রনাট্য নিয়ে কিভাবে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন আনন্দ?’

সমালোচক কোমল নাটা আরো কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন, বছরের সবচেয়ে বাজে ছবির খেতাব দিয়েছেন ‘জিরো’কে। পাঁচে তিনি দিয়েছেন এক।

তরণ আর কোমলের সুরে সুর মিলিয়ে এনডিটিভি ‘জিরো’কে দিয়েছে পাঁচে দুই। যত দোষ নাকি নন্দ ঘোষে, মানে চিত্রনাট্যে। ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস দিয়েছে একটি স্টার। তবে ছবিটির পক্ষে সবচেয়ে ভালো রিভিউ দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তারা দিয়েছে পাঁচে তিন। যদিও তাদের বিরুদ্ধে নরম সুরে সমালোচনা করার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মতে ‘জিরো’র আইডিয়াটা ভালো, কিন্তু পর্দায় কার্যকরভাবে উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

তবে কড়া ভাষায় যারা সমালোচনা করেছে, তাদের কেউই শাহরুখ, আনুশকার অভিনয় নিয়ে সমালোচনা করেনি। শাহরুখকে দশে দশ দিয়েছেন তরণ। প্রশংসা করেছেন আনুশকার। এমনকি ক্যাটরিনাও দারুণ করেছেন।

কেউ বলেছেন, ‘জিরো’ এতই খারাপ যে অনুষ্কা শর্মা অভিনয় করা সত্বেও বিরাট কোহালি এর বিন্দুমাত্র প্রোমোশন করেননি। কেউ আবার ব্যবহার করেছেন শাহরুখেরই একটি পুরনো ভিডিয়ো। যেখানে একটি কাগজ ছিঁড়ে মুখে পুরে দিচ্ছেন নায়ক। ‘জিরো’ দেখার পর টিকিট নিয়ে ঠিক ওই আচরণই করা উচিত বলে মত জনৈক দর্শকের। কেউ লিখেছেন ‘জিরো’ দেখলেই পালাতে হবে। আবার কেউ লিখেছেন, এ ছবির রেটিংও জিরো।

সিনেমার প্রথম শো শেষ হওয়ার আগেই সিনেমাহল থেকেই দর্শকরা নেতিবাচক মন্তব্য লিখে টুইট করেছেন। ফলে প্রথম দিনই সিনেমার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। শাহরুখ, অনুষ্কা শর্মা ক্যাটরিনা কইফ ছবির সাফল্য এনে দিতে পারেননি। অনেকেরই প্রশ্ন, গল্প বলতে কি ভুলে গেলেন আনন্দ এল রাই?

চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন সাইটে আমির খান-সালমান খান ভক্তদের টিপ্পনী সইতে হচ্ছে শাহরুখ ভক্তদের। শাহরুখ ভক্তদের ক্ষোভও চোখে পড়ার মতো। দীপ্তি শেঠ নামের এক ভক্ত টুইটারে লিখেছেন, ‘প্রতিবার আশায় থাকি, এইবার এসআরকে দারুণ কিছু নিয়ে হাজির হবেন! ‘মাই নেম ইজ খান’-এর পর ‘ফ্যান’, গত এক দশকে আর কিছুই দিতে পারেননি শাহরুখ। চিত্রনাট্য বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই, আমরা ভক্তরা সেটা বুঝে গেছি। ইমতিয়াজ আলী, মনীষ শর্মার পর এবার আনন্দ এল রাইয়ের ক্যারিয়ারও আপনি নষ্ট করেছেন। খুব কষ্ট নিয়েই কথাগুলো বললাম।’

আনন্দ এল রাই পরিচালিত এ ছবিটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ছয় হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে এক হাজার ৫৮৫টি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

ভারতের এক দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেন, জিরো সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সিনেমা ব্যর্থ হলে তাকে দীর্ঘদিন কাজের অভাবে থাকতে হতে পারে।

আরএম-১৯/২৩/১২ (বিনোদন ডেস্ক)