কলকাতার ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আমদানিকারকেরা

কলকাতার ছবি থেকে

সাফটা চুক্তির আওতায় কয়েক বছর ধরে কলকাতার অনেকগুলো ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে। আমদানিকারক দের মতে, ‘দেশে চাহিদার তুলনায় ছবি নির্মাণ কম হওয়ার সিনেমা হল দর্শক শূন্যতায় ভোগে। সেজন্য কলকাতার থেকে আমদানি করে ছবি আনা হয়।’

গত বছর এদেশে একে একে মুক্তি পেয়েছে ‘সুলতান: দ্য সেভিয়ার,’ ‘ভাইজান এলো রে,’ ‘ফিদা,’ ‘পিয়া রে,’ ‘ভিলেন,’ ‘গার্লফ্রেন্ড’সহ বেশ কিছু ছবি। সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি ‘বিসর্জন’ ছবি বাংলাদেশে আমদানি করে মুক্তি দেন প্রদর্শক সমিতির সভাপতি নওশাদ।

জানুয়ারি মাসে মাত্র একটি দেশিয় ছবি (আই অ্যাম দ্য রাজ) মুক্তি পেয়েছে। সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি নওশাদের ভাষ্য, ‘প্রদর্শক সমিতির চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে কমপক্ষে ‘দুটি’ করে ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত, ওই ছবি দুটো অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। সময় উপযোগী হতে হবে। কিন্তু ‘আই অ্যাম দ্য রাজ’ নামে যে ছবিটা মুক্তি পেয়েছে সেটা কোনো জাতের ছবিই না। আমি নিজেই এটা নিয়ে বিরক্ত। এগুলো কে দেখবে?

গেল মাসে নওশাদ ই আমদানি করেছিলেন ‘বিসর্জন’। এ ছবি নিয়ে বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সে ‘বিসর্জন’ ছবিটা ভালো চলেছিল। এছাড়া কোথাও দর্শক ভালোভাবে দেখেনি।’

কলকাতা থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে ‘তিতাস কথাচিত্র’ এবং ‘এনইউ আহমেদ ট্রেডার্স’। তিতাস কথাচিত্রের মালিক আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা প্রযোজনায় জড়িত ছিলেন। মান্না, শাকিব খান, বাপ্পীসহ কয়েকজনকে নিয়ে মোট ৩১ টি ছবি প্রযোজনা করেছেন। সিনেমা হল দিনদিন কমে যাওয়ায় তিনি ছবি প্রযোজনা থেকে সরে এসে আমদানি ব্যবসায় ঝুঁকেছিলেন।

চ্যাম্প, সুলতান, বলো দুগ্গা মাঈকি, তোমাকে চাই, গার্লফ্রেন্ড ছবিগুলো তিনিই এনেছিলেন। কিন্তু সেই আগ্রহ আর এখন নেই। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কলকাতার ছবি আমদানি থেকে। ঢাকার এশিয়া হল এখন তার নিয়ন্ত্রণে। ওই হলটিও ছবি শূন্যতার ধুঁকছে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনো দিন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমদানির ছবিতে আর আগ্রহ নেই। মুক্তি অনুমতি নিতে গেলে এক থেকে দেড়মাস মন্ত্রণালয়ে ধর্ণা দিতে হয়। নিয়মেই তো আছে একটা আগে রপ্তানি করে বিনিময়ে ওখান থেকে আমদানি করবো। তারা কাগজপত্র সব দেখে ছবি জমা নেবে। কিন্তু তার আগে অনুমতি নেয়ার জন্য ঘুরতে হয়। অদৃশ্য বাঁধা আসে, হয়রানি হতে হয়। এসব বাঁধা কাটিয়ে ছবি সেন্সর করতে করতে দু-তিন মাস লেগে যায়। এরমধ্যে যে ছবির অনুমতির জন্য এতো কিছু করছি দেখা যায় ইউটিউব, অনলাইনে পাইরেসি হয়ে গেছে। হলে এসে দর্শক দেখে না। এভাবে প্রতিটি ছবিতেই লোকসান গুনেছি।

এনইউ আহমেদ ট্রেডার্সের কর্ণধার কামাল কিবরিয়া লিপু। তার হাউজের ব্যানারে মুক্তি পেয়েছিলন শাকিব খানের ছবি চালবাজ, ভাইজান এলো রে। তিনি বলেন, আমদানিতে আর ছবি আনছি না। মানুষ শুধু বাঁধা দেয়। কিছু মানুষের কাজই হলো নিজেরা বেকার বসে থেকে অন্যের কাজে দেয়াল হয়ে দাঁড়ানো। ডিসেম্বর মাসে একটি ছবি আনার জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু অনুমতি পাইনি। এখন আর চেষ্টা করছি না। এত বাঁধা বিঘ্ন আর ভালো লাগে না। ব্যবসা ঠিকভাবে না হলেও ছবিতে হলগুলো সচল থাকে। মানুষের ছবি দেখার অভ্যাস থাকে। আমার এতো দ্বায় নেই যে পকেটের টাকা খরচ করে বিপদ ডেকে আনবো।

আরএম-২১/০৭/০২ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: চ্যানেল আই)