পতিতালয় থেকে সিনেমার পর্দায়! তারপর বাকিটা ইতিহাস…

পতিতালয় থেকে সিনেমার

কলকাতার বিখ্যাত পতিতাপল্লী ‘লালবাতি’ এলাকায় একটি ঘরে ঠকঠক কড়া নাড়লেন এক দীর্ঘদেহী মানুষ। শীর্ণ হাতে এক বৃদ্ধা দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলেন সেই দীর্ঘদেহী মানুষটিকে, ‘কি চান?’

লোকটি নির্বাক, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন বৃদ্ধার দিকে। বৃদ্ধা বললেন, ‘বুঝেছি, কীরকম মেয়ে পছন্দ বলুন? থিয়েটারে অভিনয় করাবেন ? নাকি …।’ মৃদু হেসে দরজার অপর পাশের লোকটি উত্তর দিলেন, ‘আমার আপনাকে প্রয়োজন।’

বিস্মিত হয়ে গেলেন বৃদ্ধা। বয়স চার কুড়ি প্রায়। ফোকলা মুখ। এই বাবু তার কাছে এসেছেন কেন! এই ঘটনার পর বাংলা সিনেমায় এক ইতিহাস রচিত হলো।

দীর্ঘদেহ লোকটি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায় আর বৃদ্ধা হলেন পথের প্যাঁচালির কিংবদন্তি চরত্রি ইন্দিরা ঠাকুরণে অভিনয় করা চুনীবালা দেবী। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে বিদেশি কোনো উৎসবে (ম্যানিলা চলচ্চিত্র উৎসব) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন।

নিদারুণ অর্থকষ্টের কারণে তিনি শেষ বয়েসে পতিতাপল্লীতে বসবাস করতেন। পতিতালয় থেকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন চুনীবালা। পরনে শতচ্ছিন্ন সাদা থান।

পরিচালক ও ইউনিটের আশা চাপিয়ে অভিনয় করলেন তিনি। পথের প্যাঁচালী ছবিতে চুনীবালার পারিশ্রমিক ছিলো রোজ কুড়ি টাকা করে। এর বেশি আর সম্ভব হয়নি নতুন পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পক্ষে। ইউনিটে এমনিতেই অর্থসঙ্কট। তার নিজের বীমার কাগজ পত্র স্ত্রীর গয়না সব বন্ধকী। তবুও প্রিয় উপন্যাসকে সেলুলয়েড বন্দি করতে চান তিনি।

তিন বছর ধরে শ্যুটিং চলেছিলো। তারপর একদিন পুরো সিনেমাটি নির্মাণ হলো। মুক্তির জন্য অপেক্ষা না করে পরিচালক সত্যজিৎ রায়, চুনীবালা দেবীর বাড়ি গিয়ে প্রোজেকশন দেখালেন। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন আর বেশিদিন সময় থাকবেন না চুনীবালা।

১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট যখন মুক্তি পেলো ‘পথের প্যাঁচালী’ তার কয়েকমাস আগেই চলে গেছেন অশীতিপর চুনীবালা দেবী। গল্পের দুর্গার মতো তারও বাস্তবে মরণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছিলো। নিজে যে ইতিহাসের শরিক হলেন তা আর দেখা হয়ে ওঠেনি চুনীবালা দেবীর।

জানা হয়নি তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি সম্মানিত হয়েছেন বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে। ম্যানিলা চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিবেচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু ততোদিনে ইন্দির ঠাকরুন চলে গিয়েছিলেন অনেক দূরে। চলে গিয়েছিলেন অনেক দূরে নিশ্চিন্দিপুরের ঘন বাঁশবাগানের মাথায় যেখানে জোনাকিরা জ্বলে…।

আরএম-২২/২০/০৩ (বিনোদন ডেস্ক)