বলিউড কাঁপানো কয়েকজন বাঙালি কণ্ঠশিল্পী

বলিউড কাঁপানো

ভারতের হিন্দি ছবির জগতে সব সময়েই ছিল বাঙালি কণ্ঠশিল্পীদের দাপট৷ এমনই কয়েকজন বাঙালি কণ্ঠশিল্পীকে দেখুন এই ছবিঘরে, যাঁরা বলিউড মাতিয়েছেন কণ্ঠের জাদুতে…

মান্না দে

১৯৪২ সালে ‘তামান্না’ ছবিতে গান গেয়ে হিন্দি ছবির জগতে পা রাখেন কিংবদন্তী এই সংগীতশিল্পী৷ চার হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠদান করা এই শিল্পী হিন্দি ও বাংলা ছাড়াও আরো ১৩টি ভারতীয় ভাষার ছবিতে গান গেয়েছেন৷ মান্না দের সাথে একই সময়ে বাংলা-হিন্দি দুই ভাষার গানে নজর কেড়েছিলেন আরেক বাঙালি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়৷ যদিও বলিউড তাঁর নাম রেখেছিল ‘হেমন্তকুমার’৷

গীতা দত্ত

অবিভক্ত ভারতের ফরিদপুরে জন্মানো এই কণ্ঠশিল্পীর গানের জন্য মুখিয়ে থাকতো বাংলা ও হিন্দি গানের শ্রোতারা৷ প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় নতুন বাংলা মৌলিক গান প্রকাশ করার রীতি শুরুই হয় গীতা দত্তের হাত ধরে৷ বোম্বেতে ( বর্তমানে মুম্বই) থাকাকালীন, আরেক বিখ্যাত বাঙালি কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক শচীন দেববর্মণের পরিচালনায় বেশ কয়েকটি ছবিতেও কণ্ঠ দেন তিনি৷

কিশোর কুমার

আসল নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলি, কিন্তু জনতার কাছে পরিচিত কিশোর কুমার নামেই৷ কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষা ছাড়াই তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউড দাপিয়ে বেড়ান কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী কিশোর কুমার৷ হিন্দি-বাংলা ছাড়াও আরো ৭টি ভারতীয় ভাষায় গেয়েছেন তিনি৷ কন্ঠশিল্পীর সাথে সাথে একজন সফল অভিনেতাও ছিলেন তিনি৷ অসামান্য কন্ঠের অধিকারী এই গায়কের ভক্তসংখ্যা আজও অনেক৷

রাহুল দেববর্মণ

পিতা শচীন দেববর্মণ বা আরেক বাঙালি সংগীতশিল্পী সলিল চৌধুরীর মতো রাহুল দেববর্মণও কণ্ঠদান ও সংগীত পরিচালনা দু’দিকেই পারদর্শী ছিলেন৷ তাঁর ব্যতিক্রমী কণ্ঠ ছিল সেই সময়ের অন্যান্য পুরুষ গায়কদের চেয়ে একদম আলাদা৷ ‘মেহবুবা মেহবুবা’-র মতো বিখ্যাত গানের জন্য আজও তাঁকে স্মরণ করে সংগীতপ্রেমী মানুষ৷

বাপ্পি লাহিড়ী

বলিউডে আশির দশকে আসে ‘ডিস্কো’-র জোয়ার৷ এই জোয়ারের নেতৃত্ব দেন সংগীত পরিচালক ও কন্ঠশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী৷ মিঠুন চক্রবর্তী অভিনিত ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিতে তাঁরই পরিচালনায় স্বকণ্ঠে গাওয়া গানগুলি আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে৷

রুনা লায়লা

বাংলা, হিন্দি ও উর্দু এই তিন ভাষায় সমান দক্ষতার সঙ্গে গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন সিলেটে জন্মানো এই সংগীতশিল্পী৷ ১৯৬৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে ‘হাম দোনো’ ছবিতে প্রথম প্লে-ব্যাক করার পর একে একে বলিউডেও বাড়তে থাকে তাঁর কদর৷ ‘দমা দম মস্ত কলন্দর’ গানটির অসাধারণ জনপ্রিয়তার ফলে সংগীত দুনিয়ার পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন তিনি৷

কুমার শানু

ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’-প্রাপ্ত এই কণ্ঠশিল্পী একদিনে ২৮টি গানের রেকর্ডিং করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন৷ বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ৩০টি ভারতীয় ভাষার ছবিতে গান করেছেন নব্বইয়ের দশকে বলিউড কাঁপানো এই শিল্পী৷ তাঁর স্মরণীয় গানের একটি রাহুল দেববর্মণের পরিচালনায় ‘এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’৷

অভিজিৎ ভট্টাচার্য

উত্তর প্রদেশের কানপুরে জন্মালেও আদতে এই গায়ক পুরোপুরি বাঙালি৷ নব্বইয়ের দশকে ভারতীয় অভিনেতা শাহরুখ খানের লিপে বেশির ভাগ গানই গেয়েছিলেন এই কণ্ঠশিল্পী৷ ‘ইয়েস বস’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’সহ একাধিক ছবিতে বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখের লিপে রয়েছে তাঁরই কণ্ঠ৷

শ্রেয়া ঘোষাল

মাত্র ১৮ বছর বয়সে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির নজরে পড়েন শ্রেয়া৷ পরে বনশালির পরিচালনায় ‘দেবদাস’ ছবিতে কণ্ঠদান করে ভারতের জাতীয় পুরস্কার জেতেন তিনি৷ মাদাম তুসোর বিখ্যাত মোমমূর্তির জাদুঘরে প্রতিকৃতি থাকা প্রথম ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল৷ এই অসামান্য শিল্পীকে প্রায়ই বিশ্বের অন্যান্য শিল্পীরা সমকালীন ভারতের সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসাবে গণ্য করেন৷

অরিজিৎ সিং

২০০৫ সালে ‘ফেম গুরুকুল’ রিয়েলিটি শো জিতলেও বলিউডে ‘মার্ডার ২’ ছবিতে ‘ফির মোহাব্বত’ গানটি গেয়েই ২০১১ সালে নতুন করে প্রচারের আলোয় আসেন অরিজিৎ৷ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ছেলে অরিজিৎ বর্তমানে বলিউডের সফল গায়কদের অন্যতম৷

জেমস

বাংলাদেশে বিপুলভাবে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও গিটারিস্ট জেমস বলিউডের নজর কাড়েন ২০০৫ সালে ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রীতমের পরিচালনায় ‘ভিগি ভিগি’ গানটি গেয়ে৷ প্রীতমের পরিচালনাতেই ২০০৬ সালে ‘উয়ো লমহে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ ও ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্নিং’ ছবিতে কণ্ঠদান করেন বাংলাদেশের ব্যান্ড-জগতের পরিচিত শিল্পী জেমস৷

আরএম-০৮/০৪/০৭ (বিনোদন ডেস্ক)