তারকাদের চোখে ভালোবাসা…

তারকাদের

একপলকের দেখা, চোখের ভাষায় পড়ে নেওয়া মনের কথা- হৃদয়ে জাগায় অন্যরকম এক শিহরণ। কিছু কথা হয় নীরবে, কিছু মুঠোফোন কিংবা চিরকুটে লেখা শব্দমালায়। ভালোবাসার এমন অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায় গান, নাটক, চলচ্চিত্রে। যেখানে সাধারণ মানুষের মতো উঠে আসে শিল্পী ও তারকাদের আবেগী দৃশ্যপট। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে তাই জয়জয়কার শুধু ভালোবাসার।

ভালোবাসা কী? এর জবাবে কেউ বলেন, ভালোবাসা এক এমন অনুভূতি, যা কল্পনায় বিভোর করে রাখে সারাক্ষণ। কারও কথায় এ অনুভব কাউকে একান্ত নিজের করে কাছে পাওয়ার। ভালোবাসা হলো আগামী দিনগুলোর স্বপ্নবুনন- এমন কথাও শোনা যায় অনেকের মুখে। কিন্তু এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা আজও কেউ দিতে পারেননি। তারপরও দেখা যায়, ভালোবাসা নামের এই অনভূতি কিসের যেন বাঁধনে বেঁধে রাখে দু’জন মানুষকে। যারা নকশিকাঁথার মতো বুনে চলেন প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবনিকাশ। কান্না-হাসির অজস্র গল্পের জন্ম দিয়ে এগিয়ে যায় পরিণতির দিকে। প্রেমের অনুভব এবং দু’জন মানুষের একে অপরকে একান্ত নিজের করে নেওয়ার নানা ঘটনা নিয়ে তাই যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে সঙ্গীত, নাটক, টেলিছবি ও সিনেমা নির্মাণ। ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবস ঘিরে এদেশেও আয়োজনের কমতি নেই। সেসব আয়োজনে একাত্ম হয়ে যাওয়া ছাড়াও মুঠোফোনে চিঠি, ফুলের তোড়া কিংবা অন্য কোনো উপহার নিয়ে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দেখা করা যেন প্রেমিক-প্রেমিকাদের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখটি শুধু একটি দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, হয়ে উঠেছে ভালোবাসা প্রকাশের এক অনন্য উৎসব।

সেই উৎসব ঘিরে অন্যান্য বছরের মতো এবারও নির্মিত হয়েছে একাধিক নাটক, টেলিছবি, ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্র। ভালোবাসার বেশ কিছু নাটক, চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন সিয়াম ও পূজা চেরী। তাদের অভিনীত চরিত্রগুলোয় অনেকে খুঁজে পেয়েছেন পরিচিত ঘটনা ও প্রিয় মানুষের ছায়া। অনেকের কথায়, চরিত্র বাস্তব করে তোলার এই চেষ্টা তখনই সম্ভব, যখন মনের গহিনে উঁকি নিয়ে ভালোবাসাকে জানা যাবে। তাই শুরুতেই সিয়াম-পূজা জুটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাদের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কী?

এর উত্তরে সিয়াম বলেন, ‘এটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের একটি। কারণ ভালোবাসার সংজ্ঞা এককথায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। তারপরও জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পার হতে গিয়ে আমরা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। নাটকীয়ভাবেও কারও প্রতি তৈরি হয় একান্ত ভালো লাগা। সেটাকে ভালোবাসা বলা যায় তখনই, যখন এই ভালো লাগাকে ঘিরে তৈরি হয় অন্যরকম এক অনুভূতি। কখনও অকারণেই মন বিষণ্ণ হয়, আবার একপলক দেখা মিললে ভুলে যাওয়া যায় পৃথিবীর সব দুঃখ। হৃদয় জয় করার বাসনায় কেউ হয়ে ওঠেন বেপয়োরা, কেউ মেতে ওঠেন পাগলামিতে। ভয়ের এক চাদর কখনও কখনও মনকে জড়িয়ে রাখে প্রিয়জনের কাছে সাড়া পাবে কিনা ভেবে। তখন কাউকে একান্ত আপন করে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বড় হয়ে ধরা দেয়। মনকে নাড়া দেওয়া এই অনুভূতিই হলো ভালোবাসা।’

পূজা চেরীর কথায়, ‘ভালোবাসা সেই অনুভূতির নাম, যা রঙিন এক স্বপ্নের জন্ম দেয়। তৈরি করে ভবিষ্যতের রূপরেখা। স্বপ্ন ও কল্পনায় ডুবিয়ে রাখে অনেকটা সময়। তারকাদের ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসার অনুভূতি অন্য আট-দশটা সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা নয়। যদিও আমরা পর্দায় ভালোবাসার নানা গল্প তুলে ধরি কিন্তু সেসব গল্পে থাকে বাস্তব জীবনের ছায়া। হয়তো নিজের নয়, অন্য কারও ভালোবাসার কথা আমরা নানাভাবে তুলে ধরি। যাদের জীবনের সঙ্গে সেগুলো মিলে যায়, তারা অনুভব করেন সেই অনিন্দ্য অনুভবের কথা। তাই পর্দায় দেখা ভালোবাসার গল্পগুলো কল্পনীয় হলেও অবাস্তব নয়।’ পূজার কথায় স্পষ্ট যে, পর্দায় তারা যেসব ভালোবাসার গল্প তুলে ধরেন, নানা চরিত্রের মধ্য দিয়ে দর্শকের মনে আঁচড় কাটেন, সেখানে থাকে বাস্তব জীবনের ছায়া।

তার এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে সিয়াম বলেন, ‘আমরা যারা শিল্পী বা তারকা, তারা যে কাজটি করি, সেখানে চেনাজানা মানুষের ছায়া না থাকলে তা দর্শকের মনে আঁচড় কাটত না। এমনও হয়, চরিত্রই নানাভাবে দর্শককে কখনও কখনও প্রভাবিত করে। আবার কখনও কখনও চলমান জীবনের ঘটনা গল্পের মতো পর্দায় উঠে আসে, যেখানে দর্শক তার চেনাজানা মানুষের ছায়া খুঁজে পান। ভালোবাসার গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও মানুষের অনুভবের বিষয়টি ঘটনাবহুল হয়ে প্রকাশ পায়।’ এ কথার রেশ ধরে মেহজাবিন বলেন, ‘অনুভবের বিষয়টি জাত, ধর্ম, বর্ণ, পেশা কিংবা অর্থের মাপকাঠিতে কমে বা বাড়ে না।

তাই মানুষের অনুভূতির প্রকাশের বিষয় সবারই প্রায় একই রকম। প্রিয়জনের জন্য হৃদয় কাঁপে কখনও, আবার রক্তক্ষরণ হয়। দূরত্বও কখনও ভালোবাসা জোরালো করে তোলে, কখনও আবার মনের ক্যানভাস থেকে মুছে ফেলতে চায় প্রিয়মুখের ছায়া। ভালোবাসা এমনই। অভিনয় করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি, ভালোবাসার প্রকাশ একেকজনের একেক রকম। কিন্তু অনুভূতির জায়গাটা সবারই এক, এর সঙ্গে অমিল খুঁজে পাওয়া কঠিন।

সিয়াম ও পূজার কথায় বোঝা গেল, ভালোবাসার সংজ্ঞা যতভাবেই দেওয়া হোক না কেন, এর অস্তিত্ব হৃদয়ের অনুভবজুড়ে। কিন্তু এ কথা মেনে নিলেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়- হৃদয়ের অনুভূতিকে নিয়ে যুগের পর যুগ কীভাবে এত গল্প লেখা হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে সঙ্গীত মূর্ছনা, চিত্রকলা, নাটক, টেলিছবি, চলচ্চিত্র- সব জায়গাতেই কেন ভালোবাসার জয়জয়কার? এর উত্তরে সিয়াম বলেন, ‘ভালোবাসা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এটাই চিরন্তন সত্য। তাই কোনো কিছুই ভালোবাসার বাইরে নয়। প্রেমিক-প্রেমিকা শুধু নয়, ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে সর্বত্র- আমি আমার পরিবারের প্রতিটি মানুষকে দারুণ ভালোবাসি। ভালোবাসা মানে যে শুধু একজনকে ভালোবাসতে হবে, এটা আমি মনে করি না।

ভালোবাসার বন্ধন প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম। কখনও তা রক্তের সম্পর্কের, কখনও বন্ধুত্বের, কখনও আবার একান্ত আপনজন হয়ে ওঠার। যেজন্য যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার প্রকাশ নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে নানা মাধ্যমে। কখনও গানে, কখনও চিত্রকলায়, কখনও গল্প-উপন্যাস, আবার কখনও তা সেলুলয়েডের পর্দায়। সময়ের সঙ্গে পৃথিবীর রূপ, সমাজ ও শাসন ব্যবস্থা, রীতিনীতি অনেক কিছুই বদলেছে। সেইসঙ্গে ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হয়েছে নানা ঘটনা, যার আদ্যোপান্ত ঘটলে দেখা যাবে, একান্ত নিজের করে কোনো কিছু বা কাউকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই সেসব ঘটনার জন্ম। মনের আকুতি, প্রিয়জনকে নিজের করে পাওয়া- এই বিষয়গুলো হয়ে উঠেছে গান, নাটক, টেলিছবি নয়তো চলচ্চিত্রের বিষয়। দর্শক-শ্রোতার মনে সেসব আয়োজন দাগ কেটেছে বলেই ভালোবাসার গল্প, গান, নাটক, চলচ্চিত্রের আবেদন কখনও ম্লান হয়ে যায়নি।

সিয়ামের এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন পূজা নিজেও। তাদের এ কথা যে অবান্তর নয়, তার বহু প্রমাণ খুঁজলেই পাওয়া যাবে। এই দুই তারকার ‘পোড়ামন-২’, ‘দহন’ ছবি দুটির পাশাপাশি অন্যান্য তারকার নাটক, টেলিছবিগুলো দেখলেও বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেখানে নানা চরিত্রে তারা দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন ভালোবাসার ভিন্ন ভিন্ন গল্প। এবারের ভালোবাসা দিবসেও দর্শক দেখতে পাবেন এমন আরও কিছু নাটক, টেলিছবি, যার গল্পগুলো আবার প্রমাণ করে দেবে ভালোবাসার কাছে সবকিছুই ম্লান। যেজন্য শতাব্দী পেরিয়েও থেমে থাকবে না ভালোবাসার গল্প, কবিতা লেখা; সুর-সঙ্গীতের আয়োজন আর চিত্রকলা, নাটক, সিনেমায় ভালোবাসার দৃশ্যপট তুলে ধরা।

পার্থিব জীবনের এক বিস্ময়কর অনুভূতির নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। যখন কারও মনের ভেতর ভালোবাসা তৈরি হয়, তখন অতীত ভুলে যায়, ভবিষ্যৎকে ভয় পায় না এবং এক অনাবিল আনন্দ আর ভালোলাগার মুহূর্তে ভাসতে থাকে সবসময়। ভাবনাজুড়ে বিরাজ করে কেবলই সুখের ছোঁয়া দেওয়া ভালোবাসার মানুষটি। সময়টা হয়ে ওঠে স্বপ্নময়, কেবলই ভালোবাসার। ইচ্ছা হয় জগতের অন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে স্বপ্নের জোয়ারে ভেসে যেতে। ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে অনন্য সিয়াম-পূজা জুটির মতো একই রকম কথা শোনা গেছে অন্য তারকাদের কণ্ঠেও। অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির কথায়, ভালোবাসা শব্দটি খুব মধুর ও মিষ্টি শোনালেও এর মধ্যে নিহিত অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা। ভালোবাসার জন্য পাড়ি দিতে হয় হিমালয়সম বাধা। আর এটা পাড়ি দিতে কিন্তু সবার দারুণ লাগে। অপূর্বর কাছে ভালোবাসার মানে হলো, শেয়ারিং, কেয়ারিং আর এক পলকের মুগ্ধতা। অন্যদিকে তিশার কাছে ভালোবাসা হলো সবকিছু ঠিকঠাক। সবচেয়ে কাছের মানুষের সবকিছুই ভালো লাগা। সে যাই করে না কেন সেটাই নিজের মনের মতো হওয়া।

কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের কথায়, ভালোবাসা হলো বিশ্বাস, বন্ধুত্ব আর প্রতিশ্রুতি মেনে চলা। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো থাকতে হবে, তাহলেই ভালোবাসা হবে। একটু উনিশ-বিশ হলো তো গেল। ভালোবাসা তখন আর হলো না। মমর কথায়, ভালোবাসার মানে হলো একে অন্যের আরও কাছে আসা। জীবনের রূপরেখা তৈরি করতে বিশ্বস্ত থাকা এবং কমিটমেন্ট রক্ষা করা। যে অনুভব থেকে দীর্ঘ পথচলার স্বপ্ন দেখা, সেখানে যেন কোনো অবিশ্বাসের ছায় না পড়ে- এটা খেয়াল রাখা। তাই তো কারও কারও ভালোবাসার স্মৃতিচিহ্ন এখনও মানুষকে ভাবায়। মিমের এই কথার বড় প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি তাজমহলের দিকে তাকালে। স্ত্রী মমতাজের জন্য ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তৈরি করেছিলেন তিনি এই মহল। প্রেমের জন্য জীবন দিয়েছিলেন লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদসহ আরও কতজন! তারা প্রেমের জন্য আজও অমর হয়ে আছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসংখ্য গানের মতোই যারা মানুষের স্বপ্ন এবং কল্পনায় বসবাস করেন, তারাও ভালোবাসেন আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতোই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, যখন সে ঘোরমাখা প্রেমের সময় পার করে, যখন সে চরম আবেগে ভালোবাসায় বন্দি হয়, তখন সে ভালোবাসতে বাসতে আকুল হয়ে যায়। এটা যে সত্যি তা মেনে নিয়ে অভিনেতা ফেরদৌস বলেন, ‘অনুভূতি এক হলেও অতীত আর এখনকার ভালোবাসা প্রকাশের ধরন বদলেছে।

প্রযুক্তি চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। এখন চাইলে ফেসবুক, ইন্টারনেট এবং নানা মাধ্যমে মনের কথা প্রকাশ করা যায়। তার এ কথা সমর্থন করে অভিনেত্রী মৌসুমী বলেন, প্রযুক্তির কল্যাণে এখনকার ছেলেমেয়েদের কিন্তু অনেক অপশন রয়েছে। ফলে এখনকার প্রেম কিন্তু বেশিদিন টেকে না। সে চাইলেই আরেকটা প্রেম করতে পারে। তবে এটাকে কিন্তু আমরা সত্যিকার ভালোবাসা বলব না। আগে যেমন একটা প্রেম হতে অনেক সময় লাগত; এখন কিন্তু সেটা হয় না। এখন অনেক সহজেই একটি ছেলে বা মেয়ে প্রেম করতে পারে। আবার সেগুলো সহজেই ভেঙে যায়।’ পূর্ণিমা বলেন, ‘ভালোবাসা আগে যা ছিল এখনও তাই রয়েছে। ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। কিন্তু পরিবর্তন চোখে পড়বে শুধু এর প্রকাশের বেলায়। যেজন্য নাটক, সিনেমা, টেলিছবির অগণিত ভালোবাসার গল্পের বিষয় এক হলেও তাতে নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আর দর্শকও জুটি হিসেবে কাউকে কাউকে ভালোবাসার গল্পে পেতে চাইছে। এর কারণ একটাই- মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে, ভালোবাসা হয় তার বড় অবলম্বন। যেজন্য ভালোবাসা নিয়ে প্রতিটি অঙ্গনের সৃষ্টি চিরকাল ধরে চলবে।’ তাই এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন আরও অনেকে।

আরএম-০৯/১৩/০২ (বিনোদন ডেস্ক)