নির্মাণে জুঁইয়ের ব্যস্ততা

ভিজুয়াল মিডিয়ায় নারী নির্মাতা হিসেবে বেশ সরব হয়ে উঠেছেন ঝুমুর আসমা জুঁই। নির্মাণে তিনি ব্যস্ততায় আছেন এই করোনাকালেও। এবারের ঈদে তিনি চ্যানেল সিবিবি থেকে একটি ফোক গান ইউটিউবে রিলিজ করেছেন। ঝুমুর আসমা জুঁই জানান, তার পরিচালনায় এটি প্রযোজনা করেছে সিনেমা বক্স। জানা গেছে, ঝুমুর আসমা জুঁই নির্মিত এই ডকু মিউজিক ভিডিওটি দর্শক – শ্রোতাদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বোদ্ধামহলেও এটি প্রশংসিত হয়েছে বলে জানান নির্মাতা ঝুমর আসমা জুঁই।

এই করোনাকালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ঝুমুর আসমা জুঁইয়ের এই নিবেদন। গানটিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিপদ ভঞ্জন পাল তার প্রাণের আকুতি তুলে ধরেন। এক বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বর হয়ে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। বাকি জীবনে আর পৃথিবীর আলো দেখা হয়ে ওঠেনি তার। তার সহধর্মিনীও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চার বছর বয়সে হাম হয়ে তিনিও দৃষ্টি হারান। স্বামী – স্ত্রী দুজনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। গানে গানে বিপদ ভঞ্জন পাল তার প্রাণের আকুতি তুলে ধরেছেন এই ডকু মিউজিক ভিডিওতে। ঝুমুর আসমা জুঁই এই প্রসঙ্গে বলেন, এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর গান আর প্রাণের আকুতি নির্মাতা হিসেবে আমার হৃদয়ও ছুঁয়ে গেছে।

মনের কষ্ট বলতে বলতে বিপদ রঞ্জন পাল একটি গান গাইতে শুরু করেন। তার কাছে সুখ – দুঃখ, ভালোবাসা – আনন্দের সব রংই কালো।

নির্মাণে ব্যস্ত জুঁইজানা গেছে, পরিচালক ঝুমুর জুঁই গান দিয়ে মিডিয়া কার্যক্রম শুরু করলেও, গানটা তার করা হয়ে ওঠেনি। বিটিভির ‘ক’ শ্রেনীর তালিকাভুক্ত নাট্যশিল্পী ঝুমুর জুঁই অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। থিয়েটারের শুরুটা নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল দিয়ে করলেও, বর্তমানে তিনি নাট্য সংগঠন প্রাঙ্গণমোর এর সঙ্গে যুক্ত আছেন। আবৃত্তিতেও ঝুমুর ছিলেন সমান পারদর্শী। এক সময় আবৃত্তির অ্যালবামও বের করেছেন।

ঝুমুর আসমা জুঁই জানান, তিনি ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট’থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনায় দুই বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। তার নির্মিত ডিপ্লোমা ফিল্মটি মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ২০১৮ সালে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র “দ্যা লক্ষণ দাস সার্কাস” নির্মানের জন্য সরকারি অনুদান লাভ করে। তার নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র “পুতুল পুরাণ” দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন উৎসবের জন্য মনোনীত এবং পুরস্কৃত হয়েছে। “পুতুল পুরাণ” এর জন্য তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে শ্রেষ্ঠ নির্মাতার পুরস্কার অর্জন করেন।

অন্যদিকে, তার নির্মিত মিউজিকাল ফিল্ম “তোমার কথা ভাবতে গিয়ে”, “ধোঁয়াশা”, “ভাস্কর্য ও মাটির ময়না” ইত্যাদি। তার চলমান কাজ “দ্যা লক্ষণ দাস সার্কাস” এর শুটিং সম্পন্ন শেষে এডিটিং চলছে। “রথযাত্রার বাকি ইতিহাস” এই রথযাত্রায় প্রচারের সম্ভবনা আছে। “পালকি – একটি ঘুমন্ত ইতিহাস” শুটিং সম্পন্ন। তিনি জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে এডিটিং এর কাজ করা হবে। “একজন দলিল উদ্দিন কবিরাজ” এর শুটিং সম্পন্ন।

নির্মাণে ব্যস্ত জুঁইজানা গেছে, জুঁইয়ের আরও অনেকগুলো কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। করোনার কারনে সব কাজ বর্তমানে বন্ধ। তিনি আশা করছেন। করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে খুব তাাড়াতাড়ি ই কাজ শুরু করবেন। এই প্রতিবেদককে ঝুমুর আসমা জুঁই বলেন, আমি শিখছি, আরো শিখবো। শিখতে শিখতে আমার কাজ এক দিন ঠিকই শিল্প হয়ে উঠবে। আমি অহর্নিশ নির্মাণ নিয়ে নতুন কাজ ভাবছি এবং আমার নির্মানগুলোতে সেই ভাবনার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি একসঙ্গে নতুন কিছু কাজ নিয়ে মাঠে নামবো। আশা করছি, নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে নির্মাতা হিসেবে নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হবো।