কপিরাইট বিতর্কে শাওনকে যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সরলপুর

‘যুবতী রাধে’ গানের কপিরাইট বিতর্কে মেহের আফরোজ শাওনের এক মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরলপুর ব্যান্ড।

একটি সংবাদমাধ্যমে মেহের আফরোজ শাওনের উক্তি উল্লেখ করে সরলপুর ব্যান্ড প্রশ্ন রেখেছে, “মেহের আফরোজ শাওন বলেছেন, তিনি ছোটবেলাতেই এ গানের সঙ্গে নেচেছেন। কোন গানের সঙ্গে নেচেছেন? গসিপ না ছড়িয়ে তা সবার সামনে হাজির করুন। কোথাও কি তার কোন অস্তিত্ব আছে?”

সমালোচকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরলপুর বলে, “আমাদের গানটি তারা হুবহু মেরে দিয়েছে। চুরি ঢাকতে এখন বিভিন্ন গবেষণাপত্র এনে হাজির করছে তারা। আমাদের গানটি চুরি না করে তারাই কি পারতো না সেসব থেকে নিজের মতো করে কিছু সৃষ্টি করতে? আপনারাই ভেবে দেখুন কার নিন্দিত হওয়ার কথা?”

“আমরা কি তারকাখ্যতির কাছে হেরে যাবো? অগ্রজরাই যদি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন তাহলে নতুন গানের দল, নতুন গান কিংবা শিল্প কী করে সৃষ্টি হবে?” প্রশ্ন সরলপুর ব্যান্ডের।

এ সব প্রশ্নের পাশাপাশি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গানটি নিয়ে ছড়ানো কিছু তথ্য নিয়ে মন্তব্য করেছেন ব্যান্ডের ভোকাল মারজিয়া আমিন তুরিন।

মাস খানেক আগে ‘যুবতী রাধে’ গানটি নিয়ে বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগের সহপরিচালক সাইমন জাকারিয়ার দেওয়া বক্তব্যকে ‘নিরপেক্ষ নয়’ বলে অভিহীত করেছে সরলপুর।

এ প্রসঙ্গে এক ফেসবুক লাইভে তুরিন বলেন, “তিনি নিরপেক্ষ গবেষক নন, কেননা তিনি তার বক্তব্যে বিভিন্ন গবেষণা থেকে যেসব তথ্যাদি প্রকাশ করেছেন তার সাথে সরলপুর ব্যান্ডের গানের কথার হুবহু কোন মিল নেই। এবং যেসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ উপস্থাপন করেছেন তার কোনটার সাথেই কোনটির হুবহু মিল নেই। ফলে, আমরা বলতে পারি দুটি মিথিক্যাল ক্যারেক্টার রাধা কৃষ্ণর প্রেমলীলা নিয়ে যুগ যুগ ধরে অসংখ্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরাও তাদের প্রেমোপাখ্যানের কাহিনি অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের মতো করে গানটি রচনা করেছি। যা কথায়-সুরে ও যন্ত্রানুষঙ্গে এটি একটি মৌলিক কম্পোজিশন হিসেবে কপিরাইট পাওয়ার যৌক্তিক ও নৈতিক দাবি রাখে। যা অতীতেও সুমী মির্জা নামে এক শিল্পীর অজ্ঞতাবশত অভিযোগের ভিত্তিতে কপিরাইট অফিস যথাযথ বিবেচনা করে দুটি শুনানির মধ্য দিয়ে আমাদের সনদ বহাল রেখেছে। তারা কিছু না জেনেই রায় দিয়েছে?”

‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে একটি সংগীত প্রকল্পে পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে জনপ্রিয় তারকা চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের কণ্ঠে সরলপুর ব্যান্ডের ‘যুবতী রাধে’ গানটি হুবহু নকলের দায়ে গানটি কপিরাইট প্রয়োগ করে ইউটিউব ও আইপিডিসির ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে নেয় সরলপুর ব্যান্ড। এ ঘটনায় গানটির মৌলিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চঞ্চল ও শাওন।

পরবর্তীতে লোকগবেষক সাইমন জাকারিয়া একটি ভিডিও প্রকাশের মধ্য দিয়ে সরলপুর ব্যান্ডের গানটিকে বিভিন্ন লোকসাহিত্যের অংশ বলে প্রমাণ হাজির করেন।

এ প্রসঙ্গে তুরিন আরও বলেন, “সাইমন জাকারিয়া যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি একটি গান প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করে বলেছেন- যুগ যুগ ধরে আমাদের গানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন কীর্তনে গাওয়া হয়ে আসছে। অথচ ভিডিওটি ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে আমাদের গানটিই হুবহু গেয়েছে নবনিত্য সম্প্রদায় বলে একটি গোষ্ঠী। আমরা মনে করি, কোন দায়িত্বশীল গবেষকের উচিত সচেতনভাবে এ ধরনের অমার্জনীয় অপরাধ না করা। কিংবা ভুল হলেও তা পরবর্তীতে সংশোধন করে নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করা। কিন্তু তিনি তা করেননি। এতেই প্রমাণিত হয়, তিনি নিরপেক্ষ গবেষক নন। তার গবেষণার পেছনে কারো স্বার্থ লুকায়িত।”

নিজেদের বিবৃতিতে সরলপুর ব্যান্ড জানায়, আইনি প্রক্রিয়াতেই তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে, এখন পর্যন্ত তারা বরাবরের মতো কপিরাইট অফিসের প্রতিই আস্থা রাখছেন। অন্যথায় আদালতে যেতে সমস্ত আইনি ভিত্তি তাদের আছে, এবং তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

সরলপুর ব্যান্ড তাদের গানটিকে কথায়-সুরে একটি মৌলিক কম্পোজিশন হিসেবে দাবি করে গানটির মেধাস্বত্ব রক্ষায় দেশের সংগীতবোদ্ধা, ব্যান্ড সংগঠন বামবাসহ গীতিকার ও সুরকার সংগঠনগুলোর নিরপেক্ষ সহযোগিতা কামনা করেছে। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে গানটি তারা প্রকাশের পূর্বে অন্য কোথাও তাদের গানটির অস্তিত্ব খুঁজে পেলে তাও সকলের সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানায় তারা।

আরএম-০২/২৪/১১ (বিনোদন ডেস্ক)