কেন লঞ্চ থেকে মরণঝাঁপ প্রেমিক-প্রেমিকার?

দুরারোগ্য ক্যান্সার থাবা বসিয়েছিল প্রেমিকার শরীরে। নিদারুণ সেই সত্যিকে জেনেও প্রেমিকার সঙ্গ ছাড়েননি মল্লিকবাজারের তরুণ ব্যবসায়ী অভিষেকপ্রতাপ সাউ। দাঁতে দাঁত চিপে পাল্টা লড়াই শুরু করেছিলেন তরুণ নাট্যকর্মী প্রিয়াঙ্কার জন্য। তাঁর চিকিৎসার কোনও ত্রুটি রাখছিলেন না। কিন্তু বহু কাঠখড় পোড়ানোর পরও যখন চিকিৎসকরা জবাব দিয়ে দিলেন, আর কোনও চেষ্টা করা বৃথা, তখন প্রণয়ীযুগল বেছে নিলেন চরম পথ। মাঝগঙ্গায় লঞ্চ থেকে মরণঝাঁপ দিলেন প্রিয়াঙ্কা ও অভিষেক। পরস্পরকে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থাতেই সলিলসমাধি ঘটল তাঁদের। ঘটনা মঙ্গলবারের।

মঙ্গলবার বিকেলেই অবশ্য পরিবারকে সঙ্কেত দিয়ে রেখেছিলেন এই যুগল। যদিও দুই বাড়ির লোকজন সেই সঙ্কেত বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যায় বিপর্যয়। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে অভিষেক ও প্রিয়াঙ্কা বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে যান মিলেনিয়াম পার্কে। এরপর তাঁরা দু’জনেই সন্ধেয় শিপিং কর্পোরেশনের জেটি থেকে হাওড়াগামী লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চ মাঝগঙ্গায় আসতেই দু’জনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঝাঁপ দেন গঙ্গাবক্ষে।

লঞ্চে পড়েছিল অভিষেকের মোবাইল, প্রিয়াঙ্কার ব্যাগ। সেই ব্যাগে ছিল চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা কাগজপত্র। অভিষেকের মোবাইল উত্তর বন্দর থানায় জমা দেন যাত্রীরা। সেই মোবাইল দেখেই বাবা ওমপ্রকাশ সাউয়ের নম্বর খুঁজে বের করে পুলিস। খবর দেওয়া হয় তাঁকে। রাতেই থানায় আসেন তিনি। আর তারপরই ভেঙে পড়েন কান্নায়। খবর দেওয়া হয়, প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোকজনকেও। খবর পেয়ে তাঁরাও ছুটে আসেন উত্তর বন্দর থানায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে থানায় দুই বাড়ির লোকজনই জানান, ‘‌অভিষেক ও প্রিয়াঙ্কা আত্মঘাতী হবে বলে এদিন বাড়ি থেকে ইঙ্গিত দিয়েই বেরিয়েছিল। সেই ইঙ্গিত আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। যদি পারতাম, তাহলে এদিন বাড়িতেই আটকাতাম তাদের।’‌

অভিষেকের বাড়ি মল্লিকবাজারে। বাবার কাচের ব্যবসা সামলাতেন তিনি। অন্যদিকে, এলিয়ট রোডের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা। ভাল নাম সুজাতা প্রসাদ। অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ থেকে পাশ করার পর তিনি নাটকের দলে যোগ দেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অভিষেকের। আলাপ থেকে জমে ওঠে প্রেম।

মাস কয়েক পর অভিষেক জানতে পারেন, প্রিয়াঙ্কার আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। তার উপর প্রিয়াঙ্কার রোগের কথা জেনে অভিষেকের সমবেদনা এবং ভালবাসা বেড়ে যায়। প্রেমিকাকে সুস্থ করতে মেডিকেল কলেজে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসাও করান অভিষেক। কিন্তু তাতেও কিছু না হওয়ায় মঙ্গলবার লঞ্চ থেকে মরণঝাঁপ দেওয়ার চরম সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। দু’জনকে উদ্ধারের জন্য মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত গঙ্গায় তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। রাত পর্যন্ত তাঁদের কোনও সন্ধান মেলেনি।

এসএইচ-০২/২০/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আজকাল)