‘জয় শ্রীরাম’ বলে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ!

নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকে (এনআরসি) কেন্দ্র করে গোটা ভারতে আগুন জ্বলছে। এ বিক্ষোভে শামিল হয়েছে উত্তর প্রদেশের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিক্ষোভকালে উত্তর প্রদেশ রাজ্য পুলিশ ‘লাগামহীনভাবে’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে একটি স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা।

সিএএ ও এনআরসিকে কেন্দ্র করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকালে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘বর্বর আচরণ’ করার অভিযোগ করে দলটি- যাতে ছিলেন আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদরা।

দলটি জানিয়েছে, ছাত্রদের ব্যাপক মারধরের সময় পুলিশের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা গেছে, ছাত্রদের ওপর ছোড়া হয়েছে ‘স্টান গ্রেনেড’ যা সাধারণত সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ঘটনায় একজন ছাত্রের হাত কেটে বাদও দিতে হয়েছে।

তবে পুলিশ বলছে, ছাত্ররাই প্রথমে নিরাপত্তাবাহিনীকে আক্রমণ করেছিল এবং তারা ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করেছে শুধু আত্মরক্ষার স্বার্থে।

আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর সংঘটিত পুলিশি বর্বরতার তদন্তে ১৭ তারিখে সেখানে গিয়েছিল একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল। তারা বলছে, বিক্ষোভ শুরু হতেই প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়। তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ।

তথ্যানুসন্ধানী দলের অন্যতম সদস্য, প্রাক্তন আমলা ও মানবাধিকারকর্মী হর্ষ মন্দার বলেন, আমরা যখন ঘটনার দুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাই, চারদিকে ধ্বংসের ছবি। আমরা জানতে পারি যে একদিনের মধ্যে ২১ হাজার ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, যে সহিংস ছাত্রবিক্ষোভের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে যদি এটা মেনেও নেয়া হয় যে ছাত্ররা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছিল, তাহলেও কি পুলিশকে ডেকে এনে এভাবে তাদের মার খাওয়াতে হবে? সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে ছাত্রদের ওপর- যা শুধু কোনো সন্ত্রাসী হামলার সময় ব্যবহার করা হয়। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা কী করে করা হলো?

এ ঘটনায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছিলেন সেদিন। এদের মধ্যে একজন মুহাম্মদ তারিকের হাতেই একটি গ্রেনেড শেল ফেটে যায়। তার হাত অপারেশন করে বাদ দিতে হয়েছে।

তারিকের বন্ধু মুহাম্মদ আরশাদ বলেন, ঘটনার সময় আমি একটি বিয়েবাড়িতে ছিলাম। সেখানেই বন্ধুর ওই অবস্থার খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে আরও অনেক ছাত্র আহত হয়ে এসেছিল। তবে বন্ধুর হাতের আঘাতে আমি এতটাই বিচলিত ছিলাম, যে অন্যদের দিকে তাকানোর পরিস্থিতি ছিল না।

প্রসঙ্গত, ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে এ সংশোধনে গত ৯ ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একটি বিল (সিএবি) উত্থাপন করেন অমিত শাহ। ব্যাপক বিতর্কের পর সেদিন মধ্যরাতে বিলটি পাস হয়। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর রাজ্যসভায়ও বিলটি পাসের পর পরদিন রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করায় সেটি এখন আইন।

নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৫ সালের আগে প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে যেসব অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা) ভারতে গেছেন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হবে।

বিরোধী দলের এমপিরা পার্লামেন্টে মোদি সরকারের প্রস্তাবিত এ বিলটিতে আপত্তি জানালেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি সরকারকে। বিরোধীরা বলছেন, নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিক সুরক্ষাকে উপেক্ষা করা হবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য আসামসহ উত্তরপূর্ব ভারতে বিক্ষোভকারীদের দাবি, আইনটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সহজেই এ দেশের (ভারতের) নাগরিকত্ব পাবেন। তাতে সংকটে পড়বেন আদি বাসিন্দারা। তবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, আইনটিতে উত্তরপূর্বের অনেকটা অংশই বাদ দেয়া হয়েছে।

এসএইচ-১৮/২৬/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)