বোনের লাশ দাফনে কাউকে পাচ্ছি না (ভিডিও)

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি।এ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে বাড়িতেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছিল এক তরুণীর। কিন্তু তার দাফন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ, কেউই করোনার রোগীর দাফনে এগিয়ে আসছিলেন না। এমনকী হাসপাতালগুলিও বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন ওই নারীর ভাই। যার জেরে গত ৩৬ ঘণ্টা ধরে মৃত বোনের দেহ আগলে বসেছিল ভাই। এমনই মর্মান্তিক পরিস্থিতির শিকার ইতালির নাপোলি এলাকার বাসিন্দা লুকা ফ্রা্ঞ্জে।

‘আমার বোন তার বিছানায় মরে পড়ে আছে। তার লাশ দাফন করার মতোও কাউকে পাচ্ছি না। আমাদেরকে নোংরা আবর্জনার চেয়েও বাজে জিনিস হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এবং আমাদের সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হচ্ছে।’

ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর শিকার এক নারীর ভাই ফেসবুক লাইভে এসে এভাবেই আহাজারি করেছেন।

তার বোন করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার পর লুকা ফ্রাঞ্জেসে নামের ওই যুবক প্রথমে ভাবতেই পারেননি যে তাদের এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। কিন্তু এরপর প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে ওই ইতালিয়ান অভিনেতা এবং মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক তার বোনের মৃতদেহের সঙ্গে আটকা পড়ে থাকেন। কেননা তাকে দাফন করার মতো কাউকেই পাচ্ছিলেন না তিনি। না কোনো প্রতিষ্ঠান না কোনো ব্যক্তি।

লুকা ফেসবুকে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার বোন তার বিছানায় মরে পড়ে আছে। আমি জানি না কী করতে হবে। আমি আমার বোনকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারছি না। সব প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ত্যাগ করেছে। আমি প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেরেসা ফ্রাঞ্জেসা নামের ওই নারী মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে গত সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি সুস্থ ছিলেন। এরপরই তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় ইতালির তৃতীয় বৃহত্তম শহর নেপলসে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। শহরটি ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহরও বটে। লুকা জানান, তার বোনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে মৃত্যুর পর!

ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ্পে কোঁতে এক সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দেন, করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো হয়তো একটু কঠোর মনে হতে পারে। কিন্তু ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এই পদক্ষেপগুলো খুবই জরুরি। আর নয়তো ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর দিক দিয়ে চীনের পরেই ইতালির অবস্থান।দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৬ জনে

এমন পরিস্থিতিতে ভাইরাসের আরো ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশটিতে কঠোর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যে কারণে লাশ দাফনকারী সংস্থাগুলোও করোনায় আক্রান্তদের লাশ সংগ্রহ করতে চাইছে না।

তেরেসা ইতালির প্রথম ব্যক্তি যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ঘরেই মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তার করোনা পরীক্ষা করা হয়।

লুকার অভিযোগের এই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার পরপরই ছড়িয়ে পড়ে।

তবে শুধু লুকা এবং তার বোনই নয়, আরো অনেকেই এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ইতালির বেশ কয়েকটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্মীরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধী পোশাক পরে এসে লুকা ফ্রা্ঞ্জের বোনের দেহ নিয়ে যায়। কয়েকজনের সাহায্য স্থানীয় একটি কবরখানা সেই দেহ কবর দেন।

এসএইচ-১৪/১৪/২০ (অনলাইন ডেস্ক)