করোনামুক্ত আফ্রিকা!
বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৩০ জনে। মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮৩৯ জন। বিশ্বের ১৫২টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস রাজত্ব করলেও আফ্রিকায় সেভাবে ছুঁতেও পারেনি।
কীভাবে নিজেদের সুরক্ষার কবচে মুড়ে রেখেছেন আফ্রিকাবাসী? কারণ জানালেন আফ্রিকাতে হু-র রিজিওনাল ডিরেক্টর মাতশিদিসো মোয়েতি।
দিনকয়েক আগে পূর্ব আফ্রিকায় প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর জানা যায়। ৫০ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তবে তিনি বিদেশি পর্যটক ছিলেন। দ্বিতীয় আক্রান্ত ইথিওপিয়ার এক জাপানি পর্যটক। তবে সিওভিডি-১৯ পজিটিভ হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল।
জানা গেছে, তিনি নাকি দেশেও ফিরে গিয়েছেন। নাইরোবিতে এক মহিলার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল। তিনি আমেরিকা থেকে লন্ডন হয়ে নাইরোবিতে ফিরেছিলেন। তবে পরে পরীক্ষা করে তার শরীরে কোনও ভাইরাসের খোঁজ মেলেনি।
এর বাইরে পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার কোথাও ভাইরাস সংক্রমণের খবর সেভাবে পাওয়া যায়নি। করোনাকে যেখানে বিশ্ব জোড়া মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেখানে আফ্রিকা বলতে গেলে সম্পূর্ণই করোনামুক্ত।
সংক্রামক ব্যধির বিষয়ে সচেতন আফ্রিকার মানুষ
হু-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর মাতশিদিসো বলেন, সংক্রামক ব্যধির বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন আফ্রিকার মানুষজন। বিশেষত গ্রামীণ এলাকাতেও সচেতনতার প্রসার অনেক বেশি। করোনার সংক্রমণ যখন মহামারীর চেহারা নিচ্ছে, তখন থেকেই মধ্য, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছিল।
‘দোকান, বাজার, সুপারমার্কেটে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার রাখা হয়েছিল, লোকজনেরাও নিজেদের সঙ্গে সবসময় স্যানিটাইজার, সাবান নিয়ে ঘুরতেন। সামান্য সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা গিলেও স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে চলে যেতেন। তাই স্থানীয়দের মধ্যে রোগের সংক্রমণ সেভাবে ছড়ায়নি।’
হু জানিয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও গত দু’মাস ধরে মানুষজন কোনও বড় জমায়েত বা উৎসব-অনুষ্ঠানে সামিল হননি। যেকোনও রকম অসুস্থতা হলেই তারা নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলছিলেন। এড়িয়ে চলছিলেন একে অপরের সংস্পর্শ।
তৎপর ছিলেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও। জ্বর বা সর্দির উপসর্গ দেখা দিলেই চটপট সেই রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। গ্রামে গ্রামে হেল্থ ক্যাম্পও করা হয়।
এইডস রোগীদের রাখা হয়েছিল বিশেষ সতর্কতায়। গোটা বিশ্বে আইচআইভি আক্রান্ত হয়ে যতজনের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে আফ্রিকাতে মৃত্যুর সংখ্যা বিপজ্জনক।
হু আরও জানিয়েছে, যেকোনও রকম সংস্পর্শ এড়াতে এইডস রোগীদের আগেই কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরগুলিতে যখন থার্মাল স্ক্রিনিং শুরু হয়, তার অনেক আগে থেকেই স্ক্রিনিং’র ব্যবস্থা করেছিল আফ্রিকা।
আপ্রিকার ট্রপিক্যাল ওয়েদার ভাইরাস-মুক্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সেক্ষেত্রে থাইল্যান্ডও কিন্তু ভাইরাস আক্রান্ত।
আফ্রিকান সেন্টার ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ডিরেক্টর ড. জন কেঙ্গাসন বলেন, শুধু আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের কারণে নয়, মানুষের থেকে মানুষের যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় সেই ব্যবস্থাই করা হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলিতে। দেশের তরুণ প্রজন্মও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সকলে মিলে মিশেই রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে।
এসএইচ-১৮/১৫/২০ (অনলাইন ডেস্ক)