মানুষের জন্য লড়ছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই ক্যাপ্টেন

করোনা মহামারিতে আক্রান্ত সারা বিশ্বে কোনো ভালো খবর নেই। লাখে লাখে মানুষ লড়াই করছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। হাজারে হাজারে দিচ্ছে প্রাণ। এই মহামারি থেকে বাঁচতে মানুষ এখন ঘরবন্দী। ফলে দুনিয়াব্যাপি অর্থনীতির মারাত্মক অবস্থা। সামনে পৃথিবী অপেক্ষা করছে বকে কঠিন পরিণতির।

এই অপেক্ষমান কঠিন পরিণতির মাঝেও একটি-দুটি মানবিক সংবাদ উঠে আসে, মানুষের মনে বাঁচার আশা জেগে ওঠে সে সব সংবাদ দেখে। ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন র‌্যাঙ্কের এক সেনা অফিসার, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি রনাঙ্গনে অংশ নিয়েছিলেন। ৯৯ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন টম মুরস করোনা মহামারির এই দুর্যোগে ঘরে বসে থাকতে পারলেন না। মানুষের সহযোগিতায় নেমে এসেছেন আবারও রনাঙ্গনে। তবে এবার তার যুদ্ধ করোনার বিরুদ্ধে, মানবতাকে বাঁচানোর লড়াই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রনাঙ্গনে লড়াই করা ক্যাপ্টেন মুরের আহ্বানে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫৩টি দেশের মানুষ অনুদান দিয়েছেন। যার পরিমাণ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ডে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় দেড়শ কোটি।

ক্যাপ্টেন মুর উদ্যোগ নেন করোনার বিপক্ষে লড়াইরত ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) কর্মীদের সহযোগিতার জন্য অর্থ সংগ্রহ করবেন। সে লক্ষ্যে তিনি তার ‘জাস্টগিভিং’ পেজে ডোনেট করার আহ্বান জানান। তার প্রথম লক্ষ্য ছিল এক হাজার পাউন্ড তোলা। এ জন্য তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ারের মার্টন মোরেটাইনে তার নিজের বাড়ির বাগানে ১০০ বার প্রদক্ষিণ করবেন তিনি।

৯৯ বছর বয়সী এই সাবেক ক্যাপ্টেন আগামী ৩০ এপ্রিল নিজের বয়সের সেঞ্চুরি পূর্ণ করবেন। এই বয়সে হাঁটতে পারেন না। তবুও ওয়াকারের সহযোগিতা নিয়ে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১০০ বার প্রদক্ষিণ করার দেয়ার ঘোষণা দেন।

ক্যাপ্টেন মুরের এই মহতি উদ্যোগ মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। পৃথিবীর সমস্ত মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় নিউজ হয় তাকে নিয়ে। টাইমস অব ইসরায়েল থেকে শুরু করে থাইল্যান্ডের পুকেট নিউজ, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা পোস্ট থেকে শুরু করে ফ্রান্সের ফ্রান্স২৪, আল জাজিরা, আরব নিউজ, অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এবিসি) তাকে নিয়ে নিউজ পরিবেশন করে।

ফলে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে ক্যাপ্টেন মুরের আহ্বানে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রাথমিক টার্গেট ১০০০ পাউন্ড বলে পোস্ট দেন তিনি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টার্গেট পূরণ হয়ে যায়। এরপর লক্ষ্য বেধে দেন ১ লাখ পাউন্ড। এই টার্গেট পূরণ হতেও খুব বেশি সময় লাগলো না। গত সপ্তাহের শনিবার ১ লাখ পাউন্ড লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর বিবিসি রেডিও ২ এ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে এবং সঙ্গীত শিল্পি মাইকেল বাল এ নিয়ে কথা বলেন। পরেরদিন দেখা গেলো ফান্ডের পরিমান দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ পাউন্ড।

মঙ্গলবার তার ফান্ডে জমা হওয়া অনুদানের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১ মিলিয়ন তথা ১০ লাখ পাউন্ডে। বুধবার দেখা গেলো সেই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ পাউন্ডে। ক্যাপ্টেন মুরের কাছে পুরো বিষয়টাই ঠেকছে অবিশ্বাস্যরূপে। কিন্তু তার বিস্ময় তখনও বাকি ছিলো।

বুধবার সন্ধ্যায় দেখা গেলো অনুদানের অংক ফুলে-ফেঁপে দাঁড়িয়েছে ৮ মিলিয়ন (৮০ লাখ) পাউন্ডে। রাত ১১টায় দেখা গেলো তার পরিমান বরাবর ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) পাউন্ড।

এভাবে চোখের পলকে ফান্ডে অনুদানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ক্যাপ্টেন মুর ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘আমি হঠাৎ দেখলাম ফান্ডে অনুদানের অর্থ ৫০ হাজার। এরপর দেখলাম ১ লাখ। এরপর যতবার দেখতে যাই, ততবারই দেখি বাড়ছে আর বাড়ছে। এখন যে পরিমাণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

পরক্ষণে তিনি বলেন, ‘থ্রি, ফোর, ফাইভ মিলিয়ন- কয়েক মিনিট পর এসে দেখি, শুধু মিলিয়ন হিসেবে বাড়তেছে। সত্যিকারার্থেই অবিশ্বাস্য। এত বেশি যে, আপনি এটাকে কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।’

এসএইচ-০২/১৮/২০ (অনলাইন ডেস্ক)