বউয়ের শোকে চল্লিশ বছর ভাত স্পর্শ করেননি লোকমান মিয়া

প্রবাদ আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। সব খেলেও ভাত না খেলে যেন ঠিক তৃপ্তি পাওয়া যায় না। অথচ সেই মাছ-ভাত না খেয়েই কাটিয়ে দিলেন গুণে গুণে চল্লিশটি বছর! বউ ভাত খেতে পছন্দ করতেন। আর তাই বউ মারা যাওয়ার পর থেকে ভাত স্পর্শ করেননি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন।

লাইলি-মজনু কিংবা শিরি-ফরহাদ ভালোবাসার অনেক মহাকাব্য এখনো মানুষের মুখে মুখে। বাস্তব দুনিয়ায়ও অনেক লাইলি- মজনুর দেখা পাওয়া যায়। তেমনি একজন এই লোকমান হোসেন। চাঁদপুর জেলার হাজিগন্জ থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের আশির্ধ্বো লোকমানের গল্প আপনার চোখ ভেজাবে। বউয়ের মৃত্যুশোকে বিগত চল্লিশ বছর ধরে ভাত খান না তিনি।

অন্যের জমিতে মজুরি খাটতেন লোকমান মিয়া। দিনে এনে দিনে খাওয়া সংসারে অভাবও ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে সেই সংসারে সুখের কমতি ছিল না। পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ভালোই চলছিল সব। কিন্তু তার বয়স যখন চল্লিশ সে সময় শরীরিক অসুস্থতায় মারা যান স্ত্রী। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের সে সময়েও স্ত্রীকে বাঁচাতে দরিদ্র লোকমান চেষ্টার কমতি রাখেননি। জায়গা-জমি যা কিছু ছিল সব বেঁচে শহরে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার- কবিরাজ কিছুও বাদ দেননি। কিন্তু তবুও বউকে বাঁচাতে পারেননি।

বউ মারা যাওয়ার পর লোকমান মিয়াকে তার বাবা-মা বলেছিল, ‘জোয়ান বেডা তুই। ঘরে নতুন বউ নিয়ে আয়’। কিন্তু লোকমানের মনপ্রাণজুড়ে ছিল তার ফাতেমা।

বউয়ের মৃত্যুশোকে কাতর লোকমান তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জীবনে আর কখনো বিয়ে করবেন না। বউ ভাত খেতে পছন্দ করতেন। আর তাই তিনি আরেকটি প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন জীবনে আর কখনো ভাতও খাবেন না।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া লোকমান হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এতদিন ভাত ছেড়ে আছেন। কখনো মন চায় না? বলেন, প্রথম প্রথম চাইতো। কিন্তু এখন ভাত মুখে দিলে মারা যাব। ওইটা এখন আমার কাছে বিষ। তাহলে কি খান আপনি?

লোকমান হোসেনের চোখে বিষাদের ছায়া ভেসে ওঠে, কিছুটা নিচু স্বরে জবাব দেন, চিড়া-মুড়ি।

ভাত খান না বলে এতগুলো বছর কোনো দাওয়াত-অনুষ্ঠানেও যান না লোকমান মিয়া। এক প্রকার একা একা নিভৃতেই কাটিয়ে দিচ্ছেন জীবন সায়াহ্নের দিনগুলো।

কথায় কথায় সংসার ভেঙে যাওয়া ঠুনকো এ সমাজে অনুপ্রেরণা জোগাবে লোকমানের এ ভালোবাসার সত্য-সুন্দর এ গল্প।

এসএইচ-১৯/১০/২২ (অনলাইন ডেস্ক)