যে কারণে কম খাচ্ছেন বয়স্করা

নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। ফলে বাড়ছে জীবনযাত্রার খরচও। এ কারণে অবসর পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ভারতের বয়স্ক নাগরিকরা। আর তাই অবসর সময়টা যাতে ভালো কাটে সেজন্য কম খেয়ে সঞ্চয় করছেন তারা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দিল্লির হাইকোর্টের আইনজীবী ৬৬ বছর বয়সী টি. এল. ওয়ালি। শিগগিরই অবসরে যাবেন তিনি। কিন্তু জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই তহবিলে টান পড়ছে। ফলে যখন একটু বিশ্রামে থাকার দরকার, ঠিক তখন আরও বেশি সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে তাকে। সেই অর্থে কোনোভাবে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি স্থানীয় একটি পোস্টাল ব্যাংকে অবসরকালীন সঞ্চয়ের টাকা উঠাতে এসেছিলেন ওয়ালি। এ সময় রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন, পরিস্থিতি এমন যে আমি অবসরের কথা ভাবতেও পারি না। ব্যয় কমাতে ফলমূল কেনা, বাইরে খাওয়া ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ওয়ালি জানান, করোনা মহামারি আঘাত হানার আগে তার যে আয় ছিল বর্তমানে তার অর্ধেক আয় হয় তার। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। গত মাসেই দেশটির মুদ্রাস্ফিতি ৭.৭৯ শতাংশ বুদ্ধি পেয়েছে যা গত আট বছরে সর্বোচ্চ। এর ফলে ওয়ালির মতো এমন লাখ লাখ প্রবীণকে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে উঠতে শুরু হয়েছে ইউক্রেন সংঘাত। যার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আরও একবার বেড়েছে। গম, ভোজ্য তেল, সবজি, ফলমূল, মাছ-গোশত ও চায়ের দাম ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। রান্নার গ্যাস এবং পেট্রলের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ফলে আরও বিপদে পড়েছে বয়স্করা।

ভারতের বয়স্কদের একটি অংশকে প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয় পেনশন দেওয়া হয়। যা রাজ্যভেদে ২০০ থেকে ২ হাজার রুপি পর্যন্ত। কিন্তু রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে এ অর্থ খুবই নগণ্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দাতব্য সংস্থা হেল্পএজ ইন্ডিয়ার পরিচালক অনুপমা দত্ত বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বয়স্কদের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত। দেশটির ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী ১৩ কোটি ৮০ লাখ নাগরিকের ৯ কোটিইিএখন জীবিকা নির্বাহের জন্য অতিরিক্ত কাজ করছেন।

অনেক ভারতীয় পেনশনভোগীই তাদের অবসরের জন্য কয়েক দশক ধরে সঞ্চিত অর্থের ওপর নির্ভর করেন। মুদ্রাস্ফীতি প্রসূত অতিরিক্ত ব্যয় পেনশনভোগীদের জন্য যেন আরও বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করছে। পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের ফলে কমছে সঞ্চয়ের অংক।

মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে ভারতের মোট সেভিংস রেট জিডিপির ৩০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। অথচ করোনা মহামারি শুরুর আগেও যা ৩২ শতাংশের ওপরে ছিল। দীর্ঘমেয়াদী আমানতের গড় সুদের হারও গত তিন বছরে ৮.৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এমতাবস্থায় ইক্যুইটি এবং মিউচুয়াল ফান্ডসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দিকে হাঁটছেন সঞ্চয়কারীরা।

মুদ্রাস্ফীতির ফলে বয়স্কদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপির অর্থনৈতিক বিষয়ক মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বলেছেন, সরকার খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তাসহ বয়স্কদের সুরক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

কলকাতার পূর্বাঞ্চলীয় শহরের গীতা সেন নামক এক বিধবা জানান, তিনি তার ১ হাজার রুপি মাসিক পেনশনে দিনে দুবেলা খাবারও ঠিকমতো খেতে পারেন না। তিনি বলেন, প্রায়ই আমাকে খাবারের জন্য প্রতিবেশীদের কাছে ধার করতে হয় বা ভিক্ষা করতে হয়।

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ধুঁকছে ভারতের দাতব্য সংস্থা ও বৃদ্ধাশ্রমগুলোও। দিল্লিভিত্তিক দাতব্য সংস্থা শিওস’র পরিচালক সৌরভ ভগত জানান, মাসিক খরচ সম্প্রতি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ব্যক্তিগত অনুদানে পরিচালিত এসব সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য এমনকি ওষুধ কিনতেও হিমশিম খাচ্ছে।

দিল্লিভিত্তিক দাতব্য সংস্থা শিওস’র পরিচালক সৌরভ ভগত বলেন, ‘আমরা আর ফল কেনার কথা ভাবতেও পারি না। বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রয়োজন এমন খাদ্য পরিপূরকগুলোর খরচও কমাতে হয়েছে।

এসএইচ-২১/২৬/২২ (অনলাইন ডেস্ক)