রানীর অসুখ সারাতে রাজ্যজুড়ে ৩৬৫ পুকুর খনন

কথিত আছে অষ্টম শতাব্দীর দিকে পাল বংশের কোনো এক রাজার বসবাস ছিল এই এলাকায়। রানীকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছিল রাজার।

কিন্তু সে সুখ বেশি দিন সইলো না। হঠাৎ অজানা অসুখে আক্রান্ত হলেন রানী। কিছুতেই সে অসুখ ভালো হচ্ছিল না। দিনে দিনে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে তার রানীর। রানীর এমন অসুখের কারণে রাজ্য থেকে সুখ হারিয়ে গেল।

এবার রানীর অসুখ সারাতে রাজ্যজুড়ে এলান করা হলো। ডাকা হলো রাজসভা। রাজসভায় আহ্বান করা হলো হেকিম, বৈদ্যদের। সভায় উপস্থিত হয়ে এক হেকিম জানালেন, রানীর অসুখের ধরন বেশ কঠিন। সারাতে হলে রাজাকে ৩৬৫টা পুকুর খনন করতে হবে।

আর বছরের এক এক দিন রানীকে গোসল করতে হবে এক একটি পুকুরে। বছরের ৩৬৫ দিন ওই ৩৬৫ পুকুরে গোসল করলেই কেবল রোগমুক্ত হবেন রানী। রাজা তার প্রিয়তমার সুখের জন্য তাই করলেন। রাজ্যজুড়ে খনন করলেন ৩৬৫টি পুকুর।

আর সেই পুকুরের সন্ধান মিলেছে ধামইরহাট উপজেলার চক-চান্দিরা গ্রামে। গ্রাম জুড়ে রয়েছে ৩৬৫টি পুকুর। এমন গল্পের সত্যতা জানতে কথা হয় ইতিহাস গবেষকদের সঙ্গে।

রাজশাহীর ইতিহাস গবেষক মাহবুব সিদ্দিক জানান, আগের যুগের রাজারা তাদের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত হতে সৃষ্টিকর্তার কাছে মানত করতেন। হয়তো সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই এই পুকুরগুলো খনন করা হয়েছিল। পাশাপাশি সে সময় রাজারা রাজ্যের মানুষের জন্য নানাবিধ জনহিতকর কাজ করতেন। এটি তারও একটা উদাহরণ হতে পারে।

আবার প্রাচীনকাল থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট ছিল। সেই পানি সংকট দূর করে সেচ সহায়ক হিসেবে রাজা রামপালসহ বেশ কয়েকজন রাজা এসব পুকুর খনন করেছিলেন তেমনটিও বলা হয়ে থাকে। রাজ শাসন বিলুপ্ত হওয়ার পর এসব পুকুর খাসকরণ করা হয় বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক ফজলুল করিম জানান, এই পুকুরগুলো থেকে মাটি খননের সময় বেশ কিছু পুরাতন জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সেহেতু গভীর অনুসন্ধানেই সম্ভব এসব বিষয় নিশ্চিত করে কথা বলা।

এসএইচ-০৪/১৯/২২ (অনলাইন ডেস্ক)