একটি আম ২ হাজার ডলার, একটি আঙ্গুর ৪০০ ডলার!

ফল খেতে কে না পছন্দ করে? সবারই নিজের পছন্দের কিছু ফল থাকে। তবে প্রিয় আম বা তরমুজের দাম সর্বোচ্চ কতো হতে পারে? হাজার, লাখ নাকি তারও বেশী? এমনই কিছু দুর্লভ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফল পাওয়া যায় জাপানে।

জুসি রেড গ্রেইপ্স– যেগুলোর এক পিস ৪৫০ ডলারেও বিক্রি হয়ে থাকে। টসটসে এই আঙ্গুরকে ‘জাপানিজ রুবি রোমান গ্রেইপ্স’ বলা হয়। তবে এগুলো কি রুবি পাথরের থেকেও বেশী দামী ? সাইজে যেকোনো সাধারণ আঙ্গুর থেকে ৪ গুণ বড় এ আঙ্গুর একমাত্র জাপানেই পাওয়া যায়। এই সুস্বাদু রুবি রোমান ফলের শুধু সাইজ না, রুবি রেডের বিভিন্ন শেডের ওপরও নির্ভর করে, এ আঙ্গুরের দাম কেমন হবে।

এসব ফল সেখানে একধরনের বিলাসবহুল উপহারের মতো। তাদের সুপার শপগুলোতে এমন সব ফল রাখা হয়, যেগুলো সাইজে পারফেক্ট, কোনও দাগ নেই, ত্রুটি নেই। তারা এই আঙ্গুরের তিনটি গ্রেড নির্ধারণ করেছে। সুপিরিয়র গ্রেড, স্পেশাল সুপিরিয়র গ্রেড, এবং প্রিমিয়াম। যেই প্রিমিয়াম আঙ্গুরের একগুচ্ছর দাম ১ হাজার ডলার পর্যন্তও হয়।

রসালো, কম টক, বেশী মিষ্টি এই আঙ্গুর মুখে দেয়া মাত্রই পুরো মুখ জুসে ভরে যায়। সারা পৃথিবীতে কোথাও এমন আঙ্গুর পাওয়া যায় না। তাই জুলাই মাসে যখন জাপানে গিফট গিভিং হলিডে শুরু হয়, তখন অনেক প্রিপারেশন নিয়ে এই ফলের চাষ শুরু হয়। গ্রিন হাউজে অত্যন্ত যত্নে এই আঙ্গুর বীজ থেকে ফলে পরিণত হয়।

বছরের যে সময়ে জাপানে অনেক গরম পড়ে তখন এই একই আঙ্গুরের রঙ ফ্যাকাসে হয়, তখন মার্কেটে বিক্রি কমে যায়। আর এ জন্যই একে লিমিটেড এডিশনও বলা হয়। ১৯৯৫ সালে জাপানের ইশিকাওয়ায় প্রথম এই ভিন্ন জাতের আঙ্গুরের খোঁজ মেলে। পরবর্তীতে এগুলো বাজারে তুমুল পরিচিতি পায় ২০০৮ সালে। চাহিদা বাড়ায় পৃথিবীর সবচেয়ে দামী আঙ্গুরে পরিণত হয় এটি। ২০২০ সালে একগুচ্ছ আঙ্গুর ১২ হাজার ডলারে বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতিটি আঙ্গুর ৪০০ ডলারে বিক্রি হয়।

এবারে বলবো হলুদ তরমুজের কথা। যেখানে বাংলাদেশে লাল তরমুজ না হলে বাজারে তরমুজের চাহিদা কমে যায়, সেখানে জাপানে বাঙ্গীর মতো দেখতে এই তরমুজ দুই পিস বিক্রি হয়েছে ৫ মিলিয়ন ইয়েন অর্থাৎ ৪৫ হাজার ইউ এস ডলারে। এই তরমুজ জাপানে ব্যবসা খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, চাইলেই গাছ থেকে পেড়ে নেয়ার মতো ফল না এটি। আঙ্গুরের মতো তরমুজও জাপানের গিফট গিভিং সেরেমনির একটি লাক্সারি ফল।

এর মধ্যে ক্রাউন মেলন সবচেয়ে প্রসিদ্ধ, যা কিনা জাপানের টোকিউতে পাওয়া যায়। যত্ন সহকারে ১০০ দিনের যত্নে এই তরমুজ সারা বছরই চাষ করা হয়। এর মধ্যে স্বাদ, গন্ধ, সাইজ বুঝে এদের ভিন্ন প্রজাতির গ্রেডিং করা হয়। জাপানে এই তরমুজকে সিজুওকা মেলন বলা হয়। যেগুলো পরিপক্ব হলে কাগজ দিয়ে কভার করা ছাড়াও হাত দিয়ে পলিশ করতে হয় সারাদিন, সারাক্ষণ। এই তরমুজ সাধারণত ২০০ ডলারে বিক্রি হয়। কিন্তু বছরের শুরুতে প্রথম ফলগুলো নিলামে হাজার হাজার ডলারে বিক্রি হয়। প্রতি বছর এর নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হয়।

সবশেষে বলতে চাই আমের কথা। না কোনো সাধারণ আম না। কেননা এই আমের জোড়া জাপানে ৫ লাখ ইয়েনে বিক্রি হয়েছে। যা প্রায় ৪ হাজার ডলার। এগুলোকে জাপানে টায়ো নো টামাগো অথবা ‘এগ অফ দ্য সান’ বলা হয়। যার বাইরের অংশ ভেতরের মতোই স্মুথ সুন্দর। লাল রঙের এই কড়া মিষ্টি আম জাপানের মিয়াযাকি প্রিফ্যাকচারে চাষ হয়। এ আম পেকে গেলে লাল হয় বলে এগুলোকে অ্যাপেল ম্যাঙ্গোও বলা হয়। এই আমগুলো অনেক বেশি দুর্লভ, কারণ এগুলোকে বড় করতে অনেক বেশী যত্ন লাগে। মজার বিষয় হচ্ছে, মৌমাছি দিয়ে এই আমের চারা রোপন করতে হয়।

এই সবগুলো ফলের চাষে তাপমাত্রা কন্ট্রোল করার জন্যেও আলাদা মেশিন ব্যাবহার করা হয়। এছাড়া এদের যত্ন নেয়া মালীরাও অনেক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে থাকেন, তাই প্রতি বছর নিলামে এক ধরনের প্রতিযোগিতা হয়, আগের বছরের মূল্যকে অতিক্রম করার।

এসএইচ-১৬/২৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক)